শার্ট–প্যান্ট পরা দুই যুবক হেঁটে যাচ্ছেন। তাদের পেছনে হাঁটছেন মাঝ বয়সী এক নারী। কিছুদূর যাওয়ার পর ওই নারী নিজের গলার চেইন, কানের দুল, হাতে থাকা বাজার ও টাকা তুলে দিলেন যুবকদের হাতে। পথচারীদের কাছেও ঘটনাটি অস্বাভাবিক ঠেকেনি।
কিছুক্ষণ পর ওই নারীর হুঁশ ফেরে। যাদের হাতে টাকা, স্বর্ণালংকার দিয়েছেন তাদের কাউকেই তো তিনি চেনেন না! বাসায় ফিরে তিনি ঘটনাটি খুলে বলেন স্বামী–সন্তানকে। অভিযোগ পাওয়ার পর পুলিশ ওই নারীর বর্ণনার সত্যতা পায়। গত ২২ মে নগরীর ডবলমুরিং থানার বেপারীপাড়া মোড়ে ঘটা এ ঘটনা প্রকাশ্যে আসে সোমবার রাতে এক ফেইসবুক পোস্টে। ডবলমুরিং থানার ওসি ফজলুল কাদের পাটোয়ারী লেখেন, ‘শয়তানের নিশ্বাস এখন চট্টগ্রামে। বুদ্ধিনাশক বিষ শয়তানের নিশ্বাস হতে সতর্ক থাকুন।’
ওসি ফজলুল কাদের বলেন, আমাদের ধারণা স্কোপোলামিন জাতীয় মাদকের মাধ্যমে ওই নারীর চিন্তা শক্তির নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে। তিনি তাদের কথামতো সবকিছু দিয়ে দিয়েছেন। অভিযোগ পেয়ে ওই নারীর কথামতো বেপারীপাড়া এলাকায় আমাদের একটি দল গিয়ে আশেপাশের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করে। সেখানে তার কথার প্রমাণ পাই। পরে অভিযান চালিয়ে মধ্যম হালিশহর এলাকা থেকে আমরা একজনকে গ্রেপ্তার করেছি।
ওসির ভাষ্য, গ্রেপ্তার যুবক স্বর্ণালংকার নেওয়ার কথা স্বীকার করলেও নিজের দায় অন্যের ওপর চাপাচ্ছে। সে দাবি করছে, নিজে কিছু জানে না। তার সাথে থাকা অন্য দুজন এ বিষয়ে বিস্তারিত জানে।
গ্রেপ্তার যুবকের নাম মো. জনি (৩০)। তার গ্রামের বাড়ি খুলনা সদর উপজেলায়। থাকেন চট্টগ্রামের বন্দর থানার মধ্যম হালিশহরে। তার সাথে থাকা অপর দুই যুবকের পরিচয় পুলিশ পেয়েছে বলে জানান ওসি।
ভুক্তভোগী ওই নারী বলেন, একটি লেবু বের করে তার নাকের সামনে ফুঁ দেওয়ার পর চিন্তা শক্তি হারিয়ে ফেলেন। ওই দুই যুবক তাকে যা বলছিল, তিনি তাই করছিলেন। তারা আমাকে বলছিল, তাদের সাথে আমি যাচ্ছিলাম। কানের দুল খোলার পর চেইন খুলতে পারছিলাম না। তাদের সাথের একজন চেইনটি খুলে দেয়। একটি ব্যাগে সেগুলো দিতে বলার পর তা দিয়ে দিয়েছি এবং তাদের সাথে আবার কিছুদূর হেঁটে আসি। এরপর তারা রিকশা নিয়ে চলে যাবার পর আমার হুঁশ আসে।
প্রতারক চক্র তার কাছ থেকে নগদ এক হাজার টাকা, ছয় আনা ওজনের গলার চেইন, চার আনা ওজনের কানের দুল ও হাতে থাকা বাজারের ব্যাগটিও নিয়ে যায় বলে দাবি ভুক্তভোগীর।
ওই নারীর ভাষ্য, ঘটনার দিন বাজার করে পায়ে হেঁটে যাবার পথে দুই যুবক তাকে খালা সম্বোধন করে পথরোধ করে। এ সময় তারা ঢাকা থেকে এসেছেন জানিয়ে ওই নারীর বাসার আশেপাশে কোনো গরিব পরিবার আছে কিনা জানতে চান, যাদের তারা সাহায্য করতে চান। এরপর তাদের মধ্যে একজন হাতে থাকা ব্যাগ থেকে লেবু বের করে ফাতেমার পিঠে স্পর্শ করেন। তিনি পেছনে তাকাতেই লেবুতে ফুঁ দেওয়া হয়। এরপর তারা যেভাবে বলেছে, তিনি সেভাবে চলেছেন।
ওসি ফজলুল কাদের বলেন, আমরা সিসি ক্যামেরার ফুটেজে দেখেছি, ওই নারী কীভাবে যুবকদের পেছনে হেঁটে যাচ্ছিলেন। তিনি হাতে থাকা বাজারের ব্যাগ, চেইন, কানের দুল খুলে দিয়ে দিচ্ছেন, পথচারীরা তা দেখছেন। সবার ধারণা ছিল ওই নারী তার পরিচিত কাউকে এসব দিচ্ছেন।
তিনি বলেন, স্কোপোলামিন ব্যবহার করে এ ধরনের ঘটনা ঘটানো হয়েছে বলে আমরা যে ধারণা করছি সেটা হলে এটা ভয়ংকর বিষয়। এ ধরনের কোনো ঘটনা অতীতে চট্টগ্রামে শোনা যায়নি। তবে রাজধানীতে ঘটেছিল। এ চক্রের সঙ্গে আরও কেউ জড়িত আছে কিনা তার তদন্ত চলছে। তাদের ধরা গেলেই বিস্তারিত জানা যাবে। তারা এই স্কোপোলামিন কোথা থেকে পেয়েছে আর কারা তাদের সাথে জড়িত আছে এসব। এটি একটি চক্র। যারা স্কোপোলামিনের মতো মাদক ব্যবহার করে সাধারণ মানুষের সর্বস্ব হাতিয়ে নিচ্ছে।
গত বছরের ২৪ সেপ্টেম্বর ‘শয়তানের নিশ্বাস’ নামে পরিচিত স্কোপোলামিন নামে এ মাদকের প্রথম তথ্য দেয় নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ। তারও এক মাস আগে রূপগঞ্জে রাস্তার পাশ থেকে একটি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকের লাশ উদ্ধারের ঘটনার তদন্ত করতে গিয়ে এ মাদকের সন্ধান মেলে। ওই সময় পুলিশ স্কোপোলামিনসহ দুজনকে গ্রেপ্তার করে।