শুষ্ক মৌসুমে চকরিয়ার উপকূলীয় ৮টি ইউনিয়নের অন্তত ১৪ হাজার হেক্টর জমির চাষাবাদে সেচ সুবিধা নিশ্চিত করা হয় মাতামুহুরী নদীর পালাকাটা–রামপুর পয়েন্টে নির্মিত প্রায় ১৭০ মিটার দীর্ঘ একটি রাবার ড্যামে (রাবার ব্যারেজ) আটকানো মিঠা পানি দিয়ে। কিন্তু সেই রাবার ড্যামটির ভেতর পানি ঢুকিয়ে ফুলানোর সময় তিন স্প্যানের একটি স্প্যানের রাবার ব্যাগ ছিঁড়ে গেছে।
অভিযোগ রয়েছে, কারিগরি দিক ফলো না করে ড্যামটির রাবার ব্যাগ ফুলানো হয় স্থানীয় শ্রমিকদের দিয়ে। এতে বহুল প্রতীক্ষিত ড্যামটির তিন নম্বর স্প্যানের রাবার ব্যাগের অন্তত ১৫ ফুট ছিঁড়ে যায়। এই অবস্থায় সামুদ্রিক জোয়ারের পানিতে সয়লাব হয়ে পড়ছে মিঠা পানির একমাত্র সংস্থান মাতামুহুরী নদীর ওই অংশটি। এতে চলতি শুষ্ক মৌসুমে ইরি–বোরো চাষাবাদে নামার মুহূর্তে উপকূলীয় আটটি ইউনিয়ন যথাক্রমে চিরিঙ্গা, সাহারবিল, পশ্চিম বড় ভেওলা, পূর্ব বড় ভেওলা, ঢেমুশিয়া, কোনাখালী, বিএমচর ও বদরখালীর অন্তত ১৪ হাজার হেক্টর জমিতে সেচ সুবিধার মিঠা পানি পাওয়ার উৎস একেবারে হুমকির মুখে পড়েছে।
স্থানীয়রা জানান, মঙ্গলবার দুপুরে পানি উন্নয়ন বোর্ডের সংশ্লিষ্ট শাখা কর্মকর্তা (এসও) আরিফুল ইসলামের নেতৃত্বে ড্যামটির রাবার ব্যাগের তিনটি স্প্যানের ভেতর পানি ঢুকিয়ে ফুলানোর কাজ শুরু করা হয়। এতে নিয়োজিত করা হয় মাটি কাটার স্থানীয় শ্রমিকদের। কিন্তু তারা একেবারে অনভিজ্ঞ হওয়ায় আগে থেকে চাপা পড়া মাটি অপসারণ না করেই রাবার ব্যাগের ভেতর পানি ঢুকানো শুরু করে। এতে তিন নম্বর স্প্যানের রাবার ব্যাগটির অন্তত ১৫ ফুট অংশ ছিঁড়ে যায়। এরপর থেকে সামুদ্রিক জোয়ারের সময় লবণাক্ত পানি মাতামুহুরী নদীর মিঠা পানির সঙ্গে মিশতে থাকে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে পাউবোর এক কর্মচারী বলেন, মাতামুহুরী নদীতে নির্মিত রাবার ড্যাম দুটির সার্বিক তদারকি করার জন্য প্রশিক্ষিত কেয়ার–টেকার নিয়োজিত করা হয়। কিন্তু সেই কেয়ার–টেকারকে না নিয়ে শাখা কর্মকর্তা (এসও) মাটি কাটার শ্রমিক নিয়ে রাবার ড্যামটি ফুলানোর কাজ শুরু করে। এতেই সর্বনাশ ঘটে যায় এই ড্যামটির।
পানি উন্নয়ন বোর্ড কঙবাজারের পওর বিভাগের শাখা কর্মকর্তা (এসও) আরিফুল ইসলাম দাবি করেন, মূলত সামুদ্রিক অস্বাভাবিক জোয়ারের পানির চাপের কারণেই ড্যামটির তিনটি স্প্যানের একটি রাবার ব্যাগের কিছু অংশ ছিঁড়ে যায়। তবে ছিঁড়ে যাওয়া অংশ দ্রুততার সাথে মেরামত করার জন্য তারা কাজ করছেন।
এ ব্যাপারে পানি উন্নয়ন বোর্ড কঙবাজারের নির্বাহী প্রকৌশলী আসিফ আহমেদের ভাষ্য, মাতামুহুরী নদীর পালাকাটা–রামপুর অংশের রাবার ড্যামটির রাবার ব্যাগ ফুলানোর সময় সামুদ্রিক জোয়ারের পানির চাপে ড্যামের একটি অংশের জোড়া রাবারের কয়েকটি নাট–বল্টু খুলে যায়। এতে রাবারের কিছু অংশ ছিঁড়ে গেছে। তিনি আজাদীকে বলেন, অচিরেই ড্যামটির এই সমস্যা সমাধান করা হবে। এজন্য প্রযুক্তিগত সহায়তা নেওয়াসহ কাজ চলমান রয়েছে।
চকরিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা এস এম নাসিম হোসেন দৈনিক আজাদীকে জানান, ইরি–বোরো মৌসুমের মোক্ষম সময়ে রাবার ড্যামটির রাবার ব্যাগ ছিঁড়ে সামুদ্রিক লবণাক্ত পানি ঢুকে পড়ায় কৃষকেরা দুশ্চিন্তায় রয়েছে। অতিসত্ত্বর এই ড্যামটির ছিঁড়ে যাওয়ার রাবার ব্যাগ মেরামতের মাধ্যমে পুরোপুরি সচল করতে পানি উন্নয়ন বোর্ডকে জানানো হয়েছে।
পাউবো জানায়, ২০১৩ সালে মাতামুহুরী নদীর সেচ প্রকল্পের আওতায় (২য় পর্যায়) প্রায় ৬০ কোটি টাকা ব্যয়ে মাতামুহুরী নদীর বাঘগুজারা ও পালাকাটা–রামপুর পয়েন্টে দুটি রাবার ড্যাম নির্মাণ করা হয়। এই দুই ড্যামের রাবার ব্যাগ ফুলিয়ে উজান থেকে নেমে আসা মিঠা পানি ধরে রেখে প্রতিবছর চকরিয়া ও পেকুয়ার প্রায় ৭০ হাজার একর জমির চাষাবাদ নিশ্চিত করা হয়।