ছাড়পত্রহীন জাহাজে পণ্য পরিবহন নৌ রুটে বিশৃঙ্খলার আশংকা

শিপ হ্যান্ডলিং এসোসিয়েশনকে ডব্লিউটিসির জরুরিপত্র

আজাদী প্রতিবেদন | শুক্রবার , ২৮ অক্টোবর, ২০২২ at ৫:৩১ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম থেকে অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন রুটে দেশব্যাপী পণ্য পরিবহনে বিশৃঙ্খলার আশংকা করা হচ্ছে। প্রচলিত নিয়মের তোয়াক্কা না করে ওয়াটার ট্রান্সপোর্ট সেলের (ডব্লিউটিসি) ছাড়পত্র এবং সিরিয়ালবিহীন লাইটারেজ জাহাজে পণ্য পরিবহনকে কেন্দ্র করে মাদার ভ্যাসেলের বিপরীতে জাহাজ বরাদ্দ বন্ধ করে দেয়ার হুমকি দেয়া হয়েছে। এতে দেশের আমদানি বাণিজ্যে মারাত্মক সংকট তৈরি হবে বলেও আশংকা প্রকাশ করা হয়েছে। চট্টগ্রাম বন্দর থেকে দেশব্যাপী পণ্য পরিবহনে ব্যবহৃত লাইটারেজ জাহাজের নিয়ন্ত্রক সংস্থা ওয়াটার ট্রান্সপোর্ট সেল (ডব্লিউটিসি) গতকাল এক জরুরিপত্র দিয়ে বিষয়টি সংশ্লিষ্টদের জানিয়ে দিয়েছে।

সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙর থেকে সারাদেশে পাঁচ কোটি টনেরও বেশি পণ্য সারাদেশে পরিবাহিত হয়। বিশ্বের নানাদেশ থেকে আমদানিকৃত এ সব পণ্য বন্দরের বহির্নোঙরে মাদার ভ্যাসেল থেকে খালাস করার পর লাইটারেজ জাহাজের সাহায্যে সারাদেশে পাঠানো হয়। বিশেষ করে সিমেন্ট ক্লিংকার, জিপসাম, গম, মটর ডাল, সরিষা, ভুট্টা পাথর ও অন্যান্য খোলা পণ্য বহির্নোঙর থেকে পরিবহন করে লাইটারেজ জাহাজ। জাহাজ মালিকদের সংগঠন ওয়াটার ট্রান্সপোর্ট সেল (ডব্লিউটিসি) তাদের সিরিয়ালে চলা জাহাজগুলোতে আমদানিকারক বা কারখানা মালিকদের চাহিদার ভিত্তিতে বরাদ্দ দিয়ে থাকে। আমদানিকারকদের পক্ষে ডব্লিউটিসির তালিকাভুক্ত পণ্যের এজেন্ট এই চাহিদা প্রদান করলে লাইটারেজ বরাদ্দ দেয়া হয়। তবে বড় বড় কিছু শিল্প গ্রুপের নিজেদের লাইটারেজ জাহাজ রয়েছে। নিজেদের পণ্য নিজেদের জাহাজে পরিবহন করার ক্ষেত্রে ডব্লিউটিসির ছাড়পত্র বা সিরিয়ালের কোনো প্রয়োজন পড়ে না। এ সব গ্রুপ নিজেদের মতো করে পণ্য পরিবহন করে থাকে। তবে নিজেদের জাহাজের বাইরে কোনো লাইটারেজ জাহাজের প্রয়োজন দেখা দিলে সেক্ষেত্রে শিল্প গ্রুপগুলো ডব্লিউটিসি থেকে বরাদ্দ নিয়ে থাকে।

প্রচলিত এই নিয়মের তোয়াক্কা না করে গত বেশ কিছুদিন যাবত ডব্লিউটিসির সিরিয়াল না মেনে বেশ কিছু জাহাজ নিজেদের মতো করে বিভিন্ন আমদানিকারকের পণ্য পরিবহন করছে। ডব্লিউটিসির ছাড়পত্র এবং সিরিয়াল ছাড়া জাহাজ চলাচল বৃদ্ধি পাওয়ায় সাধারণ জাহাজ মালিকদের জাহাজগুলো অলস বসে পড়ছে। চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙর এবং কর্ণফুলী নদীতে কয়েকশ’ অলস জাহাজ ভাসছে।

অপরদিকে সাম্প্রতিক সময়ে পণ্য আমদানি একেবারে তলানিতে ঠেকেছে। স্বাভাবিকভাবেই জাহাজের কাজ কমে গেছে। এতে লাইটারেজ জাহাজের অনেক মালিকই ফিঙড অপারেটিং কস্ট (এফওসি) যোগাতে হিমশিম খাচ্ছেন। জাহাজ মালিকদের একটি অংশ দিশেহারা হওয়ার উপক্রম হলেও সিরিয়াল না মেনে নিজেদের মতো করে জাহাজ চালানো একটি মহল সুবিধাজনক অবস্থানে আছে। অধিকাংশ লাইটারেজ জাহাজ অলস বসে থাকলেও কোনো কোনো জাহাজ মাসে দুই ট্রিপও ভাড়া মারছে। বিষয়টি নিয়ে লাইটারেজ জাহাজ মালিকদের তিনটি সংগঠনের কয়েকশ’ সদস্যের মাঝে ক্ষোভ ও অসন্তোষ দেখা দিয়েছে।

এমতাবস্থায় ডব্লিউটিসি গতকাল স্টিভিডোরদের সংগঠন বাংলাদেশ শিপ হ্যান্ডলিং এন্ড বার্থ অপারেটরস এসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান বরাবরে লিখিত এক জরুরি পত্রে ডব্লিউটিসির ছাড়পত্রহীন কোনো জাহাজে মাদার ভ্যাসেল থেকে পণ্য খালাস না করার অনুরোধ জানিয়েছেন।

উল্লেখ্য, বিশ্বের নানাদেশ থেকে পণ্য নিয়ে আসা বড় বড় মাদার ভ্যাসেল থেকে স্টিভিডোরিং প্রতিষ্ঠানগুলো পণ্য খালাস করে লাইটারেজ জাহাজে দিয়ে থাকে। স্টিভিডোরিং প্রতিষ্ঠান ডব্লিউটিসির ছাড়পত্রের বিষয়টি নিশ্চিত করলে কোনো জাহাজের পক্ষেই সিরিয়াল প্রথা ভেঙে পণ্য নেয়া সম্ভব নয় বলে মন্তব্য করে ওয়াটার ট্রান্সপোর্ট সেলের কনভের মোহাম্মদ নুরুল হক বলেছেন, আমরা বাংলাদেশ শিপ হ্যান্ডলিং এন্ড বার্থ অপারেটরস এসোসিয়েশনকে পত্র দিয়েছি। আমরা স্পষ্ট করে জানিয়ে দিয়েছি যে, তারা যদি ছাড়পত্রবিহীন জাহাজে পণ্য খালাস করে তাহলে আমরা শুধু ওসব জাহাজই নয়, ওই স্টিভিডোর যে সব মাদার ভ্যাসেলে কাজ করবেন সে সব জাহাজের বিপরীতে লাইটারেজ জাহাজ বরাদ্দ বন্ধ করে দেবো।

ডব্লিউটিসির চিঠি পাওয়ার কথা স্বীকার করে বাংলাদেশ শিপ হ্যান্ডলিং এন্ড বার্থ অপারেটরস এসোসিয়েশনের একজন কর্মকর্তা বলেছেন, বিষয়টি খুবই স্পর্শকাতর। আমরা খুবই সতর্কতার সাথে বিষয়টি দেখছি। ডব্লিউটিসির ছাড়পত্রহীন জাহাজকে যদি আমরা পণ্য না দিই, তাতে আমাদের কোনো সমস্যা হবে না। ডব্লিউটিসির হাতে পর্যাপ্ত জাহাজ রয়েছে। তিনি আমদানিকারকদেরকে বিষয়টি নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়ে বলেন, বিশৃংখলা কোনোদিনই সুফল আনে না। আমরা চাই সবাই নিয়ম মেনেই পণ্য পরিবহন করুক।

সিরিয়াল এবং ছাড়পত্রবিহীন লাইটারেজ জাহাজ চলাচল নিয়ন্ত্রণের উপর গুরুত্বারোপ করে ডব্লিউটিসির অপর এক কর্মকর্তা বলেছেন, এটি সবার জন্য কল্যাণকর।

পূর্ববর্তী নিবন্ধসড়ক কাটতে হলে জানাতে হবে ছয়মাস আগে
পরবর্তী নিবন্ধকার্ড নির্ভর হয়ে পড়েছে টিসিবির পণ্য, বঞ্চিত সাধারণ মানুষ