১.
মৃত্যুর কথা মনে হয়– সেই চুড়ান্ত ক্ষণটার কথা মনে হয়– শেষ কয়েক মিনিট, নাকি কয়েক সেকেন্ড, নাকি কয়েক দিন…! সময়টা কি প্রলম্বিত হবে, নাকি সংক্ষিপ্ত…! কি ভাবব ঐ সময়টায়? কি মনে পড়বে? নাকি কিছুই মনে পড়বে না– শরীর নামের এই অঙ্গ–প্রত্যঙ্গময় অবয়বটা এতই যন্ত্রণা দেবে যে, কোনো মুখ, কোনো স্মৃতি, কোনো কামনা, কোনো অতৃপ্ত্তি কোনো কিছুরই কোনো আবেদন থাকবে না ঐ অন্তিম সময়টায়; শুধু একটা আকাঙ্ক্ষাই আকাশজোড়া মেঘের মত ছড়িয়ে থাকবে মনে; সবকিছু ছেড়ে একেবারে চলে যাবার জন্য কাতর হয়ে উঠবে মন!
কোনো কিছুরই কি কোনো আবেদন থাকবে না মনে? ঐ সময়টুকুতে? সারাজীবন ধরে জড়ো করা এতসব স্মৃতি, সম্পর্ক, গল্প, মুখ– কোনোকিছুরই না? আমার কৈশোরের সেই উচ্ছল কিশোরী মুখটা যাকে কিশোরসুলভ দ্বিধায় বলাই হয়নি সেই কথাগুলো কোনোদিন অথচ যে মুখ ভেবে এখনও বাড়ি গেলে সোজা পথ ফেলে বাঁকা পথে বাড়ি ফিরি রাতে হারিয়ে যাওয়া বিকেলগুলো আবার মনে ফিরে পাবার আশায়!
অথবা জন্মের প্রথম দিনটায় সন্তানকে কোলে নেবার সময় ওর ছোট্ট শরীরটায় আঘাতের ভয় আর নিজ শৈশব ফিরে পাবার যে পুলক জেগেছিল মনে সেই ভয় আর পুলক!
কিংবা শৈশবের সেই বরফওয়ালার মুখ যাকে বরফের টাকা দিবনা জেনেই দিনের পর দিন স্কুল মাঠে বাকিতে বরফ খেয়ে গেছি, আর মনে মনে জেলা শহরের হাইস্কুলে ভর্তির অপেক্ষায় থেকেছি হঠাৎ উধাও হয়ে যাব বলে, শৈশবের সেই মিথ্যা চালাকির জন্য একটুও অনুশোচনা জাগবে না ঐ সময়টায়?
আমার খুব জানতে মন চায়! জানি, সবাই জানতে পারে তা, সবাই জীবন দিয়ে জানতে পারে তা কিন্তু আমার যে এখনই জানতে ইচ্ছে করে!
আমার একসময় মনে হত মানুষ হিসেবে মানুষের সবচেয়ে বড় পাওয়া হল চাইলেই সে ঠিক করতে পারে শেষের ক্ষণটা কখন হবে কাল? পরশু? নাকি ঠিক এই মুহূর্তে! যে জীবনের জন্য তার অনুমতিই নেয়া হয়নি, অন্তত সেই জীবনের সমাপ্তিটা চাইলেই তার ইচ্ছাধীন। এটা যে কত বড় পাওয়া তা বেশিরভাগ মানুষ অনুভবই করল না বলে খুব দুঃখ হত ওদের জন্য একসময় আমার!
মানুষ হয়ে জন্মানোর অসংখ্য অপূর্ণতার ভীড়ে ঠিক এই প্রাপ্তিটাই আমাকে আশ্বস্ত করে; আশ্বস্ত করে বেঁচে থাকতে। আমি যখন জানি যে শেষটাও আমার হাতে!
একসময় আমি খুব বলতাম জীবন সুন্দর! তার অসংখ্য অপূর্ণতার পরও জীবন সুন্দর! মৃত্যু নামক অপার নৈঃশব্দের বিপরীতে জীবন সুন্দর! এখন আর তা বলিনা… মৃত্যুকে মায়াবী মনে হয় এখন!
মনে আছে, ছেলেবেলায় আমাদের মাটির বাড়ির লোহার শিকওয়ালা কাঠের জানালা দিয়ে সামনে মাটির একটা সোজা পথ দেখা যেত। সে পথের ধার ধরে পাশাপাশি দীর্ঘকায় শিশু গাছের সারি অনতিদূরের পাকা রাস্তাটা ছুঁয়ে দিয়েছে প্রায়। সেসব গাছের চুপচাপ ছায়া বিছিয়ে থাকত পথটায়। গাছের সারির নিচে একটা পুকুর। বর্ষাসন্ধ্যায় আমি একলা ঐ জানালার শিকগুলো ধরে তাকিয়ে থাকতাম পথটায়। জলভেজা শীতল হাওয়া হঠাৎ হঠাৎ জানালার শিকগুলো গ’লে গায়ে এসে লাগত। কখনও কখনও ভিজে চুপসে যাওয়া দু’একটা পাখিকে সেসব গাছের ডালে বসে গা ঝাড়া দিতে দেখতাম। মেঘের ছায়াময় আঁধার আর সন্ধ্যার আবছায়া মিলে গুচ্ছ গুচ্ছ বিষাদময় কালো অবয়ব ঝুলে থাকত ঐ গাছগুলোর ঘন পাতার ডালপালায়। আমার বুকটা ভারি হয়ে আসত সেই ছায়াময় আঁধার গুচ্ছগুলোর দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে। একটা প্রবল, শক্তিমান কিছু আমার ছোট্ট বুকটাকে ধীরে ধীরে গ্রাস করত যেন! কষ্ট হত, আবার কোথায় যেন একটা সুখও লুকিয়ে থাকত সেই অনুভূতির মাঝে। আমি সেই খারাপ লাগাটাকে হারিয়ে ফেলতে চাইতাম না। ঐ খারাপ লাগা নিয়েই জানালার শিকগুলো ধরে থেকে দেখতাম: বাইরে চারপাশটায় কেউ যেন একটু একটু করে কালি মিশিয়ে দিচ্ছে।
আশপাশ আঁধার হয়ে এলে দিনের সর্বশেষ আলোর সংকেতে আর নৈঃশব্দের পটভূমিতে বুঝতে পারতাম কাদার মধ্যে প্যাচপ্যাচে শব্দ তুলে, হাতে হাটবার থেকে কেনা ‘জঙলী হেলথটনিক’ এর পেটমোটা বোতল নিয়ে পাড়ার কেউ কেরোসিন আনতে যাচ্ছে কাছের মুদীর দোকানটায়। কাদায় মানুষটার পৌনঃপুনিক পায়ের শব্দ আর তার ক্রমশঃ ম্রিয়মান আঁধার অবয়ব আমাকে আরও একা ক’রে দিত যেন! বুকের ভারটা চেপে বসত আরও! কষ্ট পেলেও সে অনুভূতিকে হারাতে চাইতাম না আমি। তখন জানতাম না এর নাম। এখন জানি। মৃত্যুকেও এখন শৈশবের সেইসব বর্ষণমুখর সন্ধ্যায় আমার ছোট্ট বুকটায় লেগে থাকা বিষাদের মত মনে হয় কষ্টের, কিন্তু আকর্ষকও। তপ্ত মাটিতে বৃষ্টির শীতলতা এনে দিতে পারে সে!
(২)
ছেলেবেলায় সান্ধ্যবৃষ্টির আবছায়ায় যে ঘরটায় বসে থাকার কথা বললাম আপনাদের, সেই ঘরটা আজ আর দেখাতে পারব না বাড়িটা ভাঙা হয়ে গেছে। ঐ ঘরের যে জানালার পাশে বসে বাইরে তাকিয়ে থাকতাম, মনে আছে, সেই জানালাটার সাথে একটা খাট লাগানো ছিল। বাড়িতে থাকলেই সেই খাটে বসে জানালার শিক ধরে বাইরে চেয়ে থাকতাম আমি। সেই খাটের তোষকটার রঙ, ওতে লেগে থাকা দাগ, একটা খেজুর গাছ আর কচ্ছপের উল্টানো খোলের মত গাছটার শিকড়ের ছবি, তোষকের কাপড়ে লেখা ‘স্মৃতি টুকু থাক’ কথাটা সব মনে আছে আমার, সব!
…তোষকটার কথা মনে হলে এখনও মন খারাপ হয়ে যায়! মনে মনে ভাবি, রাখা যেত না তোষকটা যত্ন করে, অন্তত তোষকের কাপড়ের একটা টুকরো, আজও? যেমন রেখে দিয়েছি চুড়ির টুকরোগুলো, কালো টিপটা, আমাকে দিয়ে দেয়া বহুব্যবহৃত কামিজটা– তেমনি? আমি বারবার পড়তাম তোষকের কাপড়ের গায়ে লেখা কথাটা– ‘স্মৃতিটুকু থাক’! আর পড়ে মন খারাপ করতাম। কতটুকুই বা জায়গা নিত ওটা! এখন তো আমার অনেক খালি জায়গা, নিঃসঙ্গ ড্রয়ার…। কখনও কখনও হাসি পায় তোষকটার কথা ভেবে একাকী, গোপন আর নিঃশব্দ হাসি; যে হাসির অর্থ শুধু হাসতে থাকা মানুষটাই বুঝতে পারে আর কেউ না। …ঐ তোষকের নিচ আর উপরটা জীবনের কত রহস্যময় দিক চিনিয়েছে একদিন আমাকে!
কৈশোরে যেদিন আমার বসে থাকার ঐ মাটির ঘরটা ভাঙা হয় আমি সেখানে থাকতে পারিনি। আমাদের ছোট্ট মফস্বল থেকে একটু দূরে আমার সেই প্রিয় দিঘীর ধারের ইউক্যালিপটাস আর মেহগনি গাছে ছাওয়া বনটার কাছে চলে গিয়েছিলাম। আমি প্রায়ই একা চলে যেতাম সেখানে আমার ছোট লাল সাইকেলটায় চড়ে। মনে আছে, পুরোন হয়ে যাবে বলে সাইকেলটায় কাউকে হাত দিতে দিতাম না। সেদিন সকাল, সারাটা দুপুর, বিকেল আমি ওখানেই বসেছিলাম চুপচাপ, একা। দীঘির পাড়টায় বসে ঘরটা নিয়ে কত স্মৃতি যে মনে আসছিল! লুকোচুরি খেলার সময় বারবার ঐ ঘরে থাকা খাটের নিচের শীতল আঁধারে আমাদের ভাই–বোনের লুকানোর কথা; মাটির দেয়ালে আমার আঁকা পঙ্খীরাজ ঘোড়ার ছবিটার কথা; ঐ জানালাটার কথা যেখান দিয়ে দিনের পর দিন চেয়ে থাকতাম বাইরে; আরও কত কি…!
দিঘীর ধারের ঐ বনটার চারপাশে বিস্তীর্ণ ধানক্ষেত, দু’একটা ছড়ানো ছিটানো পুকুর; আর বেশ একটু দূরে পশ্চিমে, উত্তরে, পূবে কয়েকটা সাঁওতালী গ্রাম। পূবদিকে, সাঁওতালী গ্রামের আগেই ধানক্ষেত ধরে কিছুদূর গেলে ঘন গাছপালায় আড়াল হয়ে থাকা একটা নির্জন গীর্জা। আমাদের মফস্বলের প্রান্তসীমা ছাড়িয়ে যে পাকা রাস্তাটা গেছে সেই রাস্তা থেকে নেমে, দিঘীর দক্ষিণে বরেন্দ্রীর বিস্তীর্ণ ধানক্ষেতের আঁকাবাঁকা চওড়া মাটির আল বেয়ে লাল সাইকেলটা নিয়ে আমি দিঘীর পাড়ের বনটায় পৌঁছুতাম কখনও ঝকঝকে সকালে, কিংবা শান্ত বিকেলে, আবার কখনওবা চুপচাপ দুপুরে। এমন প্রতিবেশের জন্যই আশপাশের ক্ষেতে দরকারী কাজ করা অপরিচিত কৃষক বা পাতা কুড়ানো সাঁওতালী দু’চারটা ছেলে–মেয়ে ছাড়া দিঘীটার আশপাশে তেমন কেউ–ই আসত না। আমি বেশ নিজের মত ক’রে থাকতে পারতাম ওখানে। কোনো একটা ইউক্যালিপটাস বা মেহগনি গাছের গুড়ি বেছে নিয়ে তার গায়ে হেলান দিয়ে, অথবা বনের পূবপ্রান্তে সিঁড়ির মত উঁচু বরেন্দ্রীর ধানক্ষেতের উপর বসে আমি গল্পের বই পড়তাম, গাছগুলোর গায়ে হাত বুলাতাম, দিঘীর জলে পানকৌড়ির ডুব–খেলা দেখতাম, আকাশের রঙ বদলানো দেখতাম… সেসব বইয়ের পাতার পর পাতায় লুকিয়ে থাকা কালো কালো সব অক্ষরের ভেতরের গল্পগুলো, চরিত্রগুলো আমার ওখানকার স্তব্ধ সময়কে ভরিয়ে দিত কত ঘটনা আর চেনা–অচেনা অজস্র মানবিক আবেগে! আমার একটুও খারাপ লাগত না।
অনতিদূরের গীর্জার সান্ধ্য ঘন্টাধ্বনির সময় সেদিন বাড়ি ফিরেছিলাম এখনও মনে আছে। কত সকাল–দুপুর–বিকেল আমি ঐ দীঘির ধারে চলে গিয়েছি কৈশোরের নিঃসঙ্গ দিনগুলোয়! বোনের বিদায়, ‘বন্ধু’র মৃত্যু, পিতা–পুত্রের চিরায়ত মানসিক দ্বন্দ্ব এমনিতর কত মানবিক আবেগে বিপর্যস্ত আমি একা একা ছুটে গেছি কতবার ঐ একটুকরো সবুজের কোমল আশ্রয়ে! খুব ইচ্ছে ছিল একটা দড়ির হ্যামক কেনার, দুটো মেহগনির গায়ে সে হ্যামক ঝুলিয়ে তাতে শুয়ে থেকে বই পড়ব ওখানে সারাদিন, কিংবা শুধুই রোদের লুকোচুরি মুখে মাখতে মাখতে শুয়ে থাকব, কেনা হয়নি সে হ্যামক। আমার কোনো সঙ্গী ছিল না ওখানে যাবার…
না, ঠিক হল না কথাটা। সঙ্গী ছিল একজন কিছুদিন। প্রথম যৌবনে। আমরা একসাথে বসেছি ঐ সবুজ নির্জনতায়। দুপুরের খাবার খেয়ে আসন্ন বিকেলে দেখা হবার উত্তেজনায় এলোমেলো হয়ে যেত আমার দুপুরের শুয়ে থাকা, গান শোনা, অন্য টুকটাক কাজ। শত চেষ্টাতেও অন্য কিছুতে মন দিতে পারতাম না দেখে নিজের উপরই বিরক্ত হতাম খুব। মনে আছে, অনিয়ন্ত্রিত হৃৎস্পন্দন নিয়ে ‘রোদ পড়ে গিয়ে বিকেলের সূচনা’র অপেক্ষায় থাকতাম শুধু! মানুষ চিনে ফেলবে বলে দু’জন দুই পথে পৌঁছুতাম ওখানে। বসতাম পাশাপাশি বনের পূব প্রান্তের উঁচু ধানক্ষেতটায়। কখনওবা পড়ে থাকা কোনো মেহগনি বা ইউক্যালিপটাসের গুঁড়িতে। প্রতিবার তার সাথে দেখা করার দিন আমি দুশ্চিন্তায় থাকতাম ‘কি কথা বলব ওর সাথে আজ’ এই নিয়ে। আর প্রতিবারই সে তার প্রগলভতা দিয়ে আমাকে আমার দুশ্চিন্তা থেকে বাঁচাত।
…অতঃপর, হ্যাঁ, তারপর নয় অতঃপর প্রেমের মোহময়তার দিন শেষ হলে অতিমাত্রায় আত্মসচেতন আমি একসময় টের পেলাম আমার কথা আরও ফুরিয়ে গেছে। এ–ই তো, এইটুকুই…!
আজ আশ্চর্য হয়ে লক্ষ্য করি এখন ওর কথা মনে হলে একগুচ্ছ লম্বা, সোজা কালো চুলের মাঝামাঝি আটকে থাকা তার কালো ক্লিপটার কথা মনে পড়ে; আমার কোলের উপর মেলে রাখা তার হাতের লম্বা আঙুলগুলোর প্রান্তের নীলাভ নখগুলোও দেখতে পাই; আরও দেখতে পাই পড়ন্ত বিকেলের হলুদ আলোয় মেহগনি গাছের ফাঁক দিয়ে দেখা দক্ষিনায়নের কোনো এক শুক্লা দ্বাদশীর বরফশীতল চাঁদটাকে কিন্তু শত চেষ্টাতেও এইসব বিক্ষিপ্ত স্মৃতিকে পাশে সরিয়ে সেদিনের অতিচেনা ওর মুখটা মনে করতে পারি না আর!
একদিন, একসময় তার হাত ধরতে সংকোচ ছিল আমার সে–ই ধরত আমার হাত; তাকে চুমু খেতে সংকোচ ছিল আমার সে–ই খেয়েছিল চুমু। আজ বুঝতে পারি আমার সেই অনুভূতির নাম ‘সংকোচ’ নয় ‘আড়াল’। আমি আত্মবিস্মৃত হয়ে জড়াতে চাইনি, পারিনি…
এখন ভাবি, ভাবতে হয় কেন জড়াতে চাইনি সেদিন? কি এমন হত আত্মবিস্মৃত হলে? মনে হয়, হয়ত ভেবেছি আমাদের চাওয়াগুলোর মিল নেই…। কিন্তু, মিল হলেই বা কি হত? তাহলে কি জীবনের গল্পের নির্যাসগুলো ভিন্ন হত? আত্মভোলা শৈশব, আত্মসচেতন কৈশোর, আত্মবিকিকিনির যৌবন, আত্মোৎসর্গের পৌঢ়ত্ব আর আত্মবিস্মৃতির বার্ধক্য মিলে যে পৌণঃপুনিক জীবন বয়ে চলে আমাদের, তার কোনো আখ্যান পাল্টে যেত তেমনটা হলে? হ্যাঁ, দুটো চোখ আলাদা হত, ঠোঁট আলাদা হত, চুল আলাদা হত, এমনকি মন আলাদা হবার জন্য মানুষটাও আলাদা হত হয়ত, কিন্তু, জীবনের স্বপ্ন আর স্বপ্নভঙ্গের গল্পের নির্যাসগুলো তেমনই থেকে যেত না কি?
সেই যৌথতার দিন শেষ হলেও বারবার আমি গিয়েছি ঐ দীঘির ধারের বনটায়। আমাদের প্রিয় গাছটাকে ছুঁয়ে দেখেছি, আমাদের প্রিয় বসার জায়গাটায় বসেছি, ইউক্যালিপটাসের শুকনো পাতা মুঠোয় চেপে গুড়ো ক’রে বাতাসে উড়িয়ে দেয়ার আমাদের অভ্যেসটা আওড়ে গেছি বারবার! আপনারা হয়ত ভাবছেন কেন করেছি ওসব? যে গল্পের সমাপ্তি আমার নিজেরই লেখা সেই গল্প নিয়ে কাতর হবার কি আছে এমনটাই ভাবছেন তো? আমার এক ‘বন্ধু’ (শব্দটা হাস্যকর আমার কাছে) একবার আমাকে বলেছিল, ‘প্রেম’ নাকি এমন একটা অসুখ যেখানে শেষে পায়ের ছাপ খুঁজে খুঁজে পথ চলতে হয় তা সেখানে মিলন বা বিরহ যাই আসুক না কেন। আমার ঐ ‘পায়ের ছাপ’–এর কথাটা খুব মনে ধরেছিল জীবন্ত ‘পা’–টি নয়…। আপনারাই বলুন, শুধুই কি প্রেম, জীবন মানেই কি পায়ের ছাপ খুঁজে খুঁজে পথচলার অসুখ নয়?
(চলবে)