পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে আবার বড় পরিবর্তনের পথ ধরে ১৪ বছর আগের পাঠ্যসূচিতে ফিরছে প্রাথমিক–মাধ্যমিকের শিক্ষা ব্যবস্থা, যে কারণে নতুন বছরে ছাপা মোট বইয়ের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪০ কোটি ১৬ লাখ, বাড়ছে ছাপার বাজেটও। নতুন বছরে প্রাক–প্রাথমিক থেকে নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের বিপুল সংখ্যক এসব বই ছাপতে আরও সাড়ে ৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ বাড়িয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। প্রথমে ১২০০ কোটি টাকা বাজেট নির্ধারণ করা হলেও এখন তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৭৫০ কোটি টাকা। চলতি বছর নতুন বই ছাপার খরচের চেয়ে তা ৩৫০ কোটি টাকা বেশি। নির্ধারিত বাজেটের চেয়ে খরচ বেড়ে যাওয়ার কারণ হিসেবে ২০১২ সালের শিক্ষাক্রমে বেশি সংখ্যক বই থাকার বিষয়কে সামনে এনেছে জাতীয় শিক্ষা বোর্ড ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। বই ছাপার দায়িত্বে থাকা সরকারি এ প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান অধ্যাপক এ কে এম রিয়াজুল হাসান আগের শিক্ষাক্রমের ফিরে যাওয়ায় প্রায় সাড়ে ৯ কোটি কপি বেশি বই আগামী বছর ছাপতে হবে বলে তথ্য দেন। খবর বিডিনিউজের।
এছাড়া দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য প্রথমবারের মত নতুন বই ছাপানোর জন্যও ব্যয় বেড়ে যাওয়ার কথা বলেন তিনি। তিনি বলেন, আমাদের বই ছাপার খরচ প্রথমে নির্ধারিত ছিল ১২০০ কোটি টাকা। তবে বইয়ের সংখ্যা বেড়ে যাওয়াসহ কয়েকটি কারণে খরচ বাড়াতে হচ্ছে। এনসিটিবি ৭৮৩ কোটি টাকা বাজেট বাড়ানোর প্রস্তাব করলেও ৫৫০ কোটি টাকা অনুমোদিত হয়েছে।
চলতি ২০২৪ শিক্ষাবর্ষে শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দিতে ২০২৩ সালের শেষে ৩০ কোটি ৭০ লাখ ৮৩ হাজার কপি নতুন বই ছাপানো হয়েছিল। এজন্য খরচ হয়েছিল ১ হাজার ৪০০ কোটি টাকা। সে হিসাবে এ বছর ব্যয় বেশি হবে ৩৫০ কোটি টাকা।
প্রকাশকরা ‘সিন্ডিকেট’ করে বই ছাপানোর খরচ বাড়িয়ে দরপত্র জমা দেওয়ার কারণেও ব্যয় বেড়েছে বলে অভিযোগ এনসিটিবি চেয়ারম্যানের। আগের বছরগুলোর বই উৎসবের ধারাবাহিকতা বজায় রেখে নতুন বছরের প্রথম দিন এবারও শিক্ষার্থীদের হাতে নতুন বই তুলে দিয়ে চায় অন্তর্বর্তী সরকার। এজন্য ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে বই ছাপার কাজ শেষ করতে চায় এনসিটিবি। তবে নতুন বই পরিমার্জনসহ বিভিন্ন কারণে বই ছাপা শুরু করতে দেরি হয়েছে। এখনও অনেক বইয়ের পাণ্ডুলিপি চূড়ান্ত হয়ে প্রকাশনা কোম্পানির হাতে পৌঁছেনি। এসব কারণে সব শ্রেণির শিক্ষার্থীরাই যে বছরের শুরুতে বই পাবেন তা মনে করছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
এনটিসিবির কর্মকর্তারা বলেন, এখন পর্যন্ত ৪১টি প্রকাশনা কোম্পানি প্রথম থেকে তৃতীয় শ্রেণির বই ছাপার কাজ পেয়েছে। চতুর্থ থেকে বাকি শ্রেণিগুলোর বই ছাপার কাজ কারা করবে সেই দরপত্র চূড়ান্ত হয়েছে। নবম শ্রেণির বইয়ের কাজ দেওয়ার দরপত্রও চূড়ান্ত হয়নি। তবে এ ক্যাটাগরির প্রকাশনা কোম্পানির সংখ্যা কত সেই তথ্য মেলেনি। এবার গত ১৫ বছরের মধ্যে প্রথমবার সব বই দেশেই ছাপানো হচ্ছে।
এনসিটিবির চেয়ারম্যান অধ্যাপক এ কে এম রিয়াজুল হাসান বলেন, বিভাগ বিভাজন উঠিয়ে গতবছর নবম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন শুরু হয়েছিল। কিন্তু শিক্ষা মন্ত্রণালয় ওই শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নযোগ্য নয় বলে জানিয়েছে। আর বিভাগ–বিভাজন ফিরে আসবে বলেও ঘোষণা দিয়েছে। তাই দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের নতুন করে ৬ কোটি ৬৪ লাখ কপি বই ছাপানো হচ্ছে।