বাড়ির ছাদে থরে থরে সাজানো বস্তা। তাতে করা হয়েছে আদার চাষ। ইউটিউবে দেখে নিজ বাড়ির ছাদে এমন ব্যতিক্রমী উপায়ে আদা চাষ করছেন রাঙ্গুনিয়া উপজেলার সরফভাটা ইউনিয়নের হাজারীখীল গ্রামের কৃষক মো. হেলাল উদ্দিন। চাকুরির পাশাপাশি ইতিপূর্বে তিনি রঙিন ফুলকপি চাষ করে রাঙ্গুনিয়া জুড়ে বেশ আলোড়ন সৃষ্টি করেছিলেন। এবার ব্যতিক্রমী পদ্ধতিতে আদাচাষ করে আবারও আলোচনায় এসেছেন তিনি।
এক হাজার বস্তায় প্রথমবারের মতো এই চাষ করেছেন হেলাল। এতে তার ৭৫ হাজার টাকা খরচ হলেও তিন হাজার কেজি ছাড়িয়ে যাবে বলে প্রত্যাশা তার। তার এমন উপায়ে আদা চাষ দেখে আগ্রহ বাড়ছে স্থানীয় কৃষকদের মাঝে।
জানা যায়, স্বল্প খরচে অধিক লাভজনক হওয়ায় গ্রামীণ কৃষিতে আগ্রহ বাড়ছে আদা চাষে। বাড়ির আঙিনা, ছাদ, অনাবাদি ও পতিত জমিসহ বিভিন্ন জায়গায় বস্তায় কিংবা টবে মাটি ভরে আদা চাষ করা যায়। মসলা ও ভেষজ ওষুধ হিসেবে আদা ব্যবহার হওয়ায় এর দামও বেশ চড়া। তাই পরিবারের প্রয়োজন মেটানোর পাশাপাশি বাণিজ্যিকভাবে বাড়তি লাভের উদ্দেশ্যে হেলালের আদা চাষ পদ্ধতি অনুকরণিয় দৃষ্টান্ত বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
সরেজমিনে গেলে কথা হয় উদ্যোক্তা হেলাল উদ্দিনের সাথে। তিনি জানান, বাড়ির ছাদ ছাড়াও সামনের আঙিনায় সারি সারি বস্তায় আদা চাষ করেছেন তিনি। প্রতি বস্তায় মাটি সংগ্রহ, সার ও লেবার খরচসহ ৭৫ টাকার মতন খরচ হয়। গত এপ্রিলে এই আবাদ করেছেন তিনি। আবহাওয়া ঠিক থাকলে আর কয়েক মাসের মধ্যে তিন টনের অধিক আদা পাবেন। যা বিক্রি করে আয় হতে পারে বিনিয়োগের দ্বিগুণ কিংবা তিনগুণের বেশি।
এদিকে হেলালের ব্যতিক্রমী বস্তায় আদা চাষ কার্যক্রম পরিদর্শন করেন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ইমরুল কায়েস ও যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা মো. মহিউদ্দিন। এ সময় উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ইমরুল কায়েস বলেন, উদ্যোমি যুবক হেলাল ইতিপূর্বে রঙিন ফুলকপি চাষ করে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছিলো। এবার কৃষি বিভাগের পরামর্শে ব্যতিক্রমী আদা চাষ করে আবারও দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। আমরা তাকে বিভিন্নভাবে সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছি। বর্তমানে তার আদার চাষ বেশ ভালো হয়েছে। বস্তায় আদা চাষ করলে অনেক সুবিধা। মাটিতে আদা চাষ করলে অনেকসময় কন্দপঁচা রোগে আক্রান্ত হয়। এতে একটিতে হলে পুরো জমি নষ্ট হয়ে যায়। সেক্ষেত্রে বস্তায় করলে কোন কারণে একটি হলে শুধুমাত্র সেটি সরিয়ে নিলেই বাকি আবাদ ভালো থাকে। বস্তায় আদা চাষে কীটনাশক এবং পানি লাগে অনেক কম। ফলে যে কোনো স্থানে এভাবে আদা চাষ করা সম্ভব। পাশাপাশি কেউ চাইলে বাসার ছাদে, ব্যালকনি এবং বাড়ির সামনে পরিত্যক্ত স্থানেও চাষ করতে পারে।
উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা মো. মহিউদ্দিন বলেন, বাণিজ্যিকভাবে যদি কেউ আদা চাষ নাও করতে চায়, স্বল্প পরিসরে এ চাষের মাধ্যমে নিজেদের আদার চাহিদা মেটানো সম্ভব। কেউ যদি এভাবে আদা চাষ করতে চায়, তাহলে আগ্রহীদের প্রশিক্ষণ ও প্রয়োজনীয় প্রাথমিক মূলধন যোগানে যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর পাশে থাকবে।