আওয়ামী লীগের কর্মসূচি প্রতিহত করতে গুলিস্তানের জিরো পয়েন্টে নূর হোসেন চত্বর এবং দলটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনের রাস্তায় অবস্থান নেন বিএনপি ও দলের সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মী এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্ররা। এদিকে অনুমতি ছাড়া জমায়েতের ডাক দেওয়া আওয়ামী লীগের কর্মসূচি ঘিরে বিশৃঙ্খলা এড়াতে ব্যাপক প্রস্তুতি নেওয়ার কথা জানান ঢাকা মহানগর পুলিশের ( ডিএমপি) গণমাধ্যম ও জনসংযোগ বিভাগের উপকমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান। গতকাল রোববার সকাল থেকে জিরো পয়েন্ট ও আশপাশের এলাকায় বিপুল সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন ছিল। প্রস্তুত ছিল পুলিশের সাঁজোয়া যান ও জলকামান। পুলিশ উপকমিশনার তালেবুর রহমান বলেন, ঢাকা মহানগরীতে যে কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা এড়ানোর জন্য ঢাকা মহানগর পুলিশের ব্যাপক প্রস্তুতি ছিল। পর্যাপ্ত ফোর্স মোতায়েনের পাশাপাশি মাঠে সাদা পোশাকে গোয়েন্দা পুলিশ সদস্যরা কাজ করছেন। কর্মসূচির নামে কাউকে কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা করতে দেওয়া হবে না। সেই পরিকল্পনা অনুযায়ী, ঢাকার নিরাপত্তা ব্যবস্থা সাজানো হয়েছে। খবর বিডিনিউজের।
তালেবুর রহমান আগেই জানিয়েছিলেন, এ কর্মসূচি ঘিরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সবাইকে জমায়েত হওয়ার আহ্বান জানালেও আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে অনুমতি চেয়ে কোনো আবেদন করা হয়নি।
স্বৈরশাসক হুসেইন মুহম্মদ এরশাদবিরোধী আন্দোলনের সময় যুবলীগ কর্মী নূর হোসেনকে হত্যার দিনটিতে ঢাকার জিপিও এলাকার নূর হোসেন চত্বরে শ্রদ্ধা নিবেদনের কর্মসূচি ঘোষণা করে আওয়ামী লীগ; যেটি সরকার পতনের পর রাজপথে দলটির প্রথম কর্মসূচি। তবে বেলা পৌনে ১২টা পর্যন্ত আওয়ামী লীগের ব্যানারে কাউকে নূর হোসেন চত্বরে আসতে দেখা যায়নি। ওই কর্মসূচি প্রতিহত করতে শনিবার মধ্যরাতেই ছাত্র–জনতা ও গণঅধিকার পরিষদ ব্যানারে রাজধানীর গুলিস্তান জিরো পয়েন্টে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ করেন একদল মানুষ। ছাত্রদলের নেতাকর্মীদেরও সেখানে বিক্ষোভ করতে দেখা যায়।
সরকারের দিক থেকে আওয়ামী লীগের এ কর্মসূচি পালন করতে না দেওয়ার বিষয়ে বলেছেন ক্রীড়া ও শ্রম উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া ও প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। গতকাল সকাল ৯টার পর বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ের আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে জড়ো হয়ে স্লোগান দিতে থাকেন বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। সকাল ১০টার দিকে আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের সামনে থেকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে নূর হোসেন চত্বর হয়ে ফের বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ের সামনে আসেন বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের কর্মীরা।
সিপিবি, বাসদ, গণধিকার পরিষদসহ বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে সকালে নূর হোসেন চত্বরে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয়। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীরা পূর্ব ঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে দুপুর ১২টার দিকে গুলিস্তানের জিরো পয়েন্টে অবস্থান নেন। আমার সোনার বাংলায়, ফ্যাসিবাদের ঠাঁই নাই, একটা একটা লীগ ধর, ধইরা ধইরা জবাই কর, দিয়েছি তো রক্ত, আরও দেব রক্ত, উই ওয়ান্ট, জাস্টিস জাস্টিস এমন সব স্লোগান দিতে থাকেন তারা।
জিরো পয়েন্টে অবস্থান নেওয়া এক শিক্ষার্থী বলেন, এই দেশে যে সরকার ফ্যাসিবাদকে চূড়ান্ত পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছিল, ছাত্রছাত্রীদের হত্যা করেছিল, তাদের ক্ষেত্রে কোনো ছাড় নেই। আমরা কোনো লীগ চাই না, সেজন্যই আজ আমাদের এ অবস্থান কর্মসূচি।
এর আগে শনিবার রাতে ১০ জনকে গ্রেপ্তারের কথা পুলিশ জানায়, যাদের কাছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বিজয়ী ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং ৯০ দশকে এরশাদ বিরোধী গণআন্দোলনে নিহত নূর হোসেনের ছবিসহ প্ল্যাকার্ড ছিল। তিনি বলেন, ডিফারেন্ট এঙ্গেলে আমাদের প্রস্তুতি রয়েছে। কেউ কিছু করতে চাইলে আগেই আমাদের বাধার মুখে পড়বে, ধরা পড়ে যাবে।
সকালে আওয়ামী লীগ অফিসের সামনে দলটির কর্মী সন্দেহে কয়েকজনকে মারধর করে উপস্থিত জনতা। আওয়ামী লীগের এই কর্মসূচির দিনে ঢাকাসহ সারা দেশে ১৯১ প্লাটুন বিজিবিও মাঠে নামে।