ছাত্রাবাস বন্ধ থাকায় ফাঁকা শ্রেণিকক্ষ

খাগড়াছড়ির তিন সরকারি আবাসিক স্কুল

খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি | শনিবার , ১৬ অক্টোবর, ২০২১ at ১১:৪২ পূর্বাহ্ণ

১২ সেপ্টেম্বর দেশের সব স্কুল খুললেও বন্ধ রয়েছে খাগড়াছড়ির তিনটি প্রাথমিক আবাসিক স্কুলের ছাত্রাবাস। ছাত্রাবাস বন্ধ থাকায় শ্রেণি পাঠদান থেকে বঞ্চিত হচ্ছে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। প্রতিটি বিদ্যালয়ে একশ শিক্ষার্থী থাকলেও উপস্থিত হচ্ছে মাত্র ৮ থেকে ১০ জন। দুর্গম পাহাড়ি এলাকার শিক্ষার্থীদের শিক্ষা জীবন নিশ্চিত করতে দ্রুত আবাসিক ছাত্রাবাস খুলে দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন শিক্ষকরা। খাগড়াছড়ির তিনটি আবাসিক স্কুলে পড়াশোনা করছে দুর্গম পাহাড়ের অন্তত তিনশ’ শিক্ষার্থী।
জেলা প্রাথমিক অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, ‘দুর্গম এলাকার শিক্ষার্থীদের জন্য সরকার খাগড়াছড়িতে তিনটি আবাসিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছে। বাড়ি থেকে বিদ্যালয় দূরে হওয়ায় দুর্গম পাহাড়ের শিশুরা এসব আবাসিক বিদ্যালয়ের ছাত্রাবাসে থেকে পড়ালেখা করে। তবে করোনার পর থেকে বন্ধ রয়েছে এসব ছাত্রাবাস। বিদ্যালয় খুললেও ছাত্রাবাস না খোলায় শ্রেণি পাঠদান থেকে বঞ্চিত হচ্ছে দুর্গম পাহাড়ের এ শিক্ষার্থীরা।
দীঘিনালা উপজেলার কাঁঠালতলী আবাসিক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১শ। যাদের ৯০ শতাংশের বাড়ি জেলার বিভিন্ন দুর্গম পাহাড়ে। ছাত্রাবাস বন্ধ থাকায় দুর্গম পাহাড়ের শিক্ষার্থীরা শ্রেণি পাঠ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। রোববার সরেজমিনে বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, ‘কোন কোন শ্রেণি কক্ষে মাত্র ২ থেকে ৩ জন শিক্ষার্থী ক্লাস করছে। একই অবস্থা মহালছড়ি ও গুইমারার আবাসিক বিদ্যালয়েও। এ অবস্থায় আবাসিক শিক্ষার্থীদের জন্য দ্রুত ছাত্রাবাস খুলে দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন শিক্ষকরা।
খাগড়াছড়ির দীঘিনালা উপজেলার কাঁঠালতলী আবাসিক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা শিউলি দাশ বলেন, ‘তৃতীয় শ্রেণিতে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ২৪ জন অথচ আজকে (রোববার) উপস্থিত রয়েছে মাত্র ৩ জন। বাকি শিক্ষার্থীরা দুর্গম এলাকায় থাকে। ছাত্রাবাস বন্ধ থাকায় তারা ক্লাস করতে পারছে না।’ বিদ্যালয়ের আরেক শিক্ষিকা নুরুননাহার বলেন, ‘আমাদের এখানে সবাই দুর্গম এলাকার শিক্ষার্থী। ছাত্রাবাস বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীরা ক্লাস করতে পারছে না। ৪র্থ শ্রেণিতে ৪১ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে মাত্র ৮ জন উপস্থিত হয়েছে।’
বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক জগৎময় ত্রিপুরা রনি বলেন, ‘আমাদের এখানে একশ শিক্ষার্থী আবাসিক ছাত্রাবাসে থেকে পড়ালেখা করে। এরা সবাই দুর্গম এবং পিছিয়ে পড়া এলাকার শিক্ষার্থী। করোনার পর ছাত্রাবাস বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর তারা বাড়ি চলে যায়। এখন বিদ্যালয় খুললেও বন্ধ রয়েছে ছাত্রাবাস। তাই শিক্ষার্থীরা শ্রেণি পাঠ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এভাবে বেশিদিন চললে এসব শিক্ষার্থী পিছিয়ে যাবে। ’ বিদ্যালয় খুলতে সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। আবাসিক শিক্ষার্থীদের জন্য ছাত্রাবাস খুলে দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন কাঁঠালতলী আবাসিক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হৃদিপট চাকমা। তিনি বলেন, ‘বিদ্যালয়ের আশপাশে যেসব শিক্ষার্থীর বাড়ি তারা কেবল ক্লাস করছে। বেশিরভাগ শিক্ষার্থী সাজেকসহ বিভিন্ন দুর্গম এলাকার বাসিন্দা। ছাত্রাবাস বন্ধ থাকায় তারা ক্লাস করতে পারছে না। স্বাস্থ্য বিধি মানাসহ বিদ্যালয় খোলার সব ধরনের প্রস্তুতি আমরা নিয়েছি। দুর্গম পাহাড়ি এলাকার শিক্ষার্থীদের শিক্ষা জীবন নিশ্চিত করতে দ্রুত ছাত্রাবাস খুলে দেওয়ার অনুরোধ জানাচ্ছি। খাগড়াছড়ির সহকারী জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকতা মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, আবাসিক শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য বিধি রক্ষায় এখনো ছাত্রাবাসগুলো বন্ধ রয়েছে। তবে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের অনুমোদন পাওয়ার পর আবাসিক বিদ্যালয় খুলে দেয়া হবে।’

পূর্ববর্তী নিবন্ধএবার চুনতির সীরাত মাহফিলে বাজেট ২ কোটি ৭৫ লাখ টাকা
পরবর্তী নিবন্ধমদ খাওয়া নিয়ে সংঘর্ষে যুবক নিহত