বিএনপির সহযোগী সংগঠন ছাত্রদল এবং অঙ্গসংগঠন যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের উদ্যোগে আয়োজিত ‘কর্মসংস্থান ও বহুমাত্রিক শিল্পায়ন নিয়ে তারুণ্যের ভাবনা’ শীর্ষক সেমিনারে ছিল তারুণ্যের মেলা। নগরীর কাজীর দেউড়ির একটি কনভেনশন সেন্টারে অনুষ্ঠিত এ সেমিনারে সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের বিভিন্ন নেতাকর্মীদের পাশাপাশি বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও চিকিৎসকসহ পেশাজীবী তরুণরা অংশ নেন। আলোচকদের মধ্যেও ছিল অরাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব।
এদিকে সেমিনারে চট্টগ্রামের দুই তরুণ রাজনীতিবিদের পাশাপাশি শিক্ষাবিদও বক্তব্য রাখেন। এরা হচ্ছেন বিএনপির ফরেন অ্যাফেয়ার্স কমিটির সদস্য ইসরাফিল খসরু, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী পাট শ্রমিক দলের কেন্দ্রীয় সভাপতি সাঈদ আল নোমান, প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটির ভিসি ড. এ এম নছরুল কদির ও ইস্ট ডেলটা ইউনিভার্সিটির ভিসি অধ্যাপক মুহাম্মদ নাজিম উদ্দিন।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরুর ছেলে ইসরাফিল খসরু বলেন, একটি দেশের উন্নয়ন মোটামুটি তিনভাবে হয়; ঋণ করে, টাকা ছাপিয়ে এবং বিনিয়োগের মাধ্যমে। গত ১৫ বছর আমরা দেখেছি, একটি ফ্যাসিস্ট সরকার ঋণ করে গেছে কিন্তু সেই ভারটা আমাদের ওপর দিয়ে গেছে। টাকা ছাপিয়েছে কিন্তু বিনিয়োগ আনতে পারেনি। বিএনপি বলছে, আমাদের সামনে এগিয়ে যাওয়ার পথ হচ্ছে বিনিয়োগ এবং এটাই হচ্ছে টেকসই উপায়। বিনিয়োগ হলে কর্মসংস্থান ও সম্পদ সৃষ্টি হবে এবং এই সম্পদের মাধ্যমে অর্থনীতির যে গ্রোথ হয় সেটা হবে টেকসই।
ইসরাফিল খসরু বলেন, আমরা রাজনৈতিক গণতন্ত্রের কথা বলি। কিন্তু অর্থনীতিতেও গণতন্ত্রের চর্চা এবং সমতার দরকার আছে। তিনি বলেন, গত ১৫ বছর রাজনৈতিক পরিচয়ের কারণে যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও কোনো ব্যাংক থেকে ঋণ পাইনি। অনেকেই আছেন এটার শিকার হয়েছেন, রাজনৈতিক পরিচয়ের কারণে ঠিকভাবে ব্যবসা–বাণিজ্য করতে পারেননি। তিনি বলেন, অর্থনীতিতে যখন সমতা থাকে না, বৈষম্য থাকে তখন একটি রাষ্ট্র গড়ে উঠতে পারে না এবং অর্থনৈতিক উন্নয়ন হয় না। কাজেই আমাদের অর্থনৈতিক খাতে সমতা দরকার।
তিনি বলেন, বিএনপি মনে করে মানুষের ম্যান্ডেট নিয়ে আসা একটি রাজনৈতিক সরকারের মূল দায়িত্ব হচ্ছে ব্যবসাকে ফ্যাসিলেটেড করা, ওভার রেগুলেট করা না। বিজনেজ ফ্রেন্ডলি ইকো সিস্টেম ডেভেলাপ করতে হবে, যেখানে সর্বস্তরের জনগণ সমান সুযোগ পাবে।
তিনি বলেন, আমরা বিদেশি বিনোয়াগ আনব। দেশি বিনিয়োগ হবে। বিজনেজ ফ্রেন্ডলি ইকো সিস্টেম ডেভেলাপ করব। সকলে সুন্দরভাবে স্বস্তিদায়কভাবে ব্যবসা করতে পারব।
বিএনপির প্রয়াত ভাইস–চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমানের ছেলে সাঈদ আল নোমান তিনটি প্রস্তাব তুলে ধরেন। তিনি একটি একক সংস্থা গঠনের প্রস্তাব দেন। যা শ্রম মন্ত্রণালয় এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে সম্পদ একত্রিত করতে সক্ষম হবে এবং বিশেষ করে আরব বিশ্বে কাজ করতে ইচ্ছুক বৃহৎ জনগণের জন্য সহায়তা প্রদান করবে। তিনি বলেন, এই পরিকল্পনার উদ্দেশ্য হলো, তাদের বিদেশে যাওয়ার আগে প্রশিক্ষণ প্রদান করা, যাতে তারা সুযোগগুলোর জন্য আরও ভালোভাবে প্রস্তুত হতে পারে।
সাঈদ আল নোমানের দ্বিতীয় প্রস্তাব ছিল বিএনপি লিডারশিপ ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা করা। তিনি বলেন, এর লক্ষ্য হবে আমাদের যুব এবং শিক্ষার্থী নেতাদের শিক্ষা দেওয়া। এই প্রতিষ্ঠানটি রাজনৈতিক আদর্শ এবং শহীদ জিয়ার ১৯ দফা এবং আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের ৩১ প্রস্তাব সম্পর্কে শিক্ষা প্রদান করবে, যা আমাদের জনগণের জীবনে পরিবর্তন আনতে এবং প্রতিষ্ঠান ও নীতি কাঠামোকে সংস্কার করতে সহায়তা করবে।
সাঈদ আল নোমান বাংলাদেশে বিদেশী লেনদেনের জন্য অনলাইন পেমেন্ট সিস্টেম আরও সহজলভ্য করার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, এটি আমাদের উন্নয়নশীল গিগ অর্থনীতির জন্য এক বড় পরিবর্তন আনবে, যা ফ্রিল্যান্সার এবং ডিজিটাল কর্মীদের বিদেশ থেকে সহজে ও নিরাপদে পেমেন্ট গ্রহণে সহায়তা করবে এবং এই খাতের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিত করবে।
প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটির ভিসি ড. এ এম নছরুল কদির বলেন, আমি মনে করি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল সঠিক পথে এগুচ্ছে। আমরাও তার অংশীদার হয়ে গর্ববোধ করছি।
তিনি বলেন, তরুণরাই অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকার, এই তরুণদের শিক্ষার জন্য কোনো শিক্ষা কমিশন হয়নি। এই তরুণদের কর্মসংস্থানের জন্য তারা কোনো চিন্তা করছে না। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল সেই চিন্তা শুরু করেছে। আগামীতে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল যদি ক্ষমতায় আসে তাদের কাছে অনুরোধ করব, তরুণদের জন্য যেন নতুন নতুন কর্মক্ষেত্র তৈরি করে। তরুণদের এমন উদ্যোক্তা হতে শেখাবে, যাতে তারা যেন চাকরিজীবী না হয়ে চাকরিদাতা হতে পারে।
ইস্ট ডেলটা ইউনিভার্সিটির ভিসি অধ্যাপক মুহাম্মদ নাজিম উদ্দিন বলেন, তরুণদের মাঝে নিহিত আছে বাংলাদেশ। তরুণদের মাথায় অনেক আইডিয়া গিজগিজ করছে। তারা দেশ বদলে দিতে পারে। কিন্তু তারা একটি প্ল্যাটফরম চায়, তারা নিরাপদ বাংলাদেশ চায়। বিগত সরকারের আমলে আইটি ও উদ্যোক্তা খাতে অনেকগুলো প্রজেক্ট এসেছে, বিশ্বব্যাংক ও এডিবি’র টাকা আসছে। কিন্তু ভাগ–বাটোয়ারা হয়েছে দলীয় সমর্থকদের কাছে। বিএনপি যদি ক্ষমতায় আসে তখন এই টাকাগুলো যেন সঠিক উদ্যোক্তাদের কাছে যায়, শুধু দল সমর্থন করে তাদের কাছে না যায়। তিনি বলেন, আজ একটি রাজনৈতিক প্রোগ্রামে অরাজনৈতিকদের অংশগ্রহণ একটি বিরল দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করল বিএনপি, ছাত্রদল, যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দল। আশা করি ভবিষ্যতে ক্ষমতায় গেলে এই ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকবে।