ছাগল-কাণ্ডে যা যা জানা গেল

আজাদী ডেস্ক

| শনিবার , ২২ জুন, ২০২৪ at ৫:৩৫ পূর্বাহ্ণ

ঈদুল আজহার আগে ১৫ লাখ টাকায় একটি ছাগল কিনতে গিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হন মুশফিকুর রহমান ইফাত নামের এক তরুণ। যে দেশে ১৫ হাজার টাকায় ছাগল পাওয়া যায়, সেখানে ১৫ লাখ টাকায় কে কিনবে ছাগল? সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ নিয়ে শুরু হয় তুমুল শোরগোল। চলে আলোচনা, সমালোচনা। বিভিন্ন গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সদস্য মতিউর রহমানই ইফাতের বাবা। এনবিআর সদস্য মতিউর রহমান কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট অ্যাপিলেট ট্রাইব্যুনালের প্রেসিডেন্টের দায়িত্বে আছেন। সোনালী ব্যাংকের পরিচালক পদেও রয়েছেন তিনি।

ইফাত ভেবেছিলেন, লাখ টাকার ছাগল কিনে ভাইরাল হবেন, হয়েছেনও তাই। কিন্তু খ্যাতির বিড়ম্বনায় এখন ঝুঁকিতে পড়েছেন পিতৃপরিচয়হীন হওয়ার। অর্থের উৎস নিয়ে প্রশ্ন ওঠায় রাজস্ব কর্মকর্তা মতিউর পিতাপুত্রের সম্পর্ককে অস্বীকার করে দাবি করছেন ইফাত তার ছেলে নন। কিন্তু সেই দাবি সামাজিক মাধ্যমকে শান্ত করতে পারেনি। মতিউর ও ইফাতের পারিবারিক ছবিতে সয়লাব হয়ে যায় নেটিজেনদের টাইমলাইন।

এর মধ্যে ভোল পাল্টান ইফাত। তার দাবি, ১৫ লাখ টাকায় ছাগল কেনেননি। সাদিক অ্যাগ্রোতে ঘুরতে গিয়ে লাখ টাকার ছাগলের সাথে সেলফি তুলেছেন। আর ভাইরালের নেশায় বলেছেন, ছাগলটি তিনি কিনেছেন। ‘উচ্চ বংশের’ পশু বিক্রেতা সাদেক এগ্রোর মালিকও জানিয়েছেন ছাগলটি কেনার জন্য এক লাখ টাকা অগ্রিম দিলেও ইফাত শেষ পর্যন্ত ছাগলটি কেনেননি। এখনো খামারে রয়েছে সেই ছাগল। তবে তিনি এও দাবি করেন, ১৫ লাখ টাকা নয়, ১২ লাখ টাকায় ছাগলটি বিক্রির জন্য তিনি এই ১ লাখ টাকা অগ্রিম নিয়েছিলেন। তবে ইফাত আরও বেশি দামে একাধিক গরু কিনেছেন বলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে খবর আসে।

ছাগল নিয়ে মাতামাতির মধ্যেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে ইফাতের বেশ কয়েকটি দামি গাড়ির ছবিও। এইসব ছবি মতিউর রহমানের ওপর অভিযোগের বোঝাকে আরো বাড়িয়ে তুলে। সরকারি চাকরজীবী বাবার বেতনের টাকা দিয়ে ছেলে কীভাবে এমন ব্যয়বহুল জীবনযাপন করতে পারে, তা নিয়েও নানা প্রশ্ন উঠতে থাকে।

মতিউর রহমানের বাড়ি বরিশালের মুলাদি উপজেলায়। তার প্রথম স্ত্রী লায়লা কানিজ নরসিংদীর রায়পুরা থেকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত উপজেলা চেয়ারম্যান। এই সংসারে তার এক ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। অপরদিকে, ইফাতের মা শাম্মী আখতার শিভলী ওরফে শিবু মতিউর রহমানের দ্বিতীয় স্ত্রী। শাম্মী আখতারের বাবার বাড়ি ফেনীর সোনাগাজী উপজেলার আমিরাবাদ ইউনিয়নের সোনাপুর গ্রামে। শাম্মী আখতার ফেনী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সংসদ সদস্য (ফেনী) নিজাম উদ্দিন হাজারীর আত্মীয়।

সংসদ সদস্য নিজাম উদ্দিন হাজারী জানিয়েছেন, ইফাত তার মামাতো বোনের সন্তান। আর মতিউর রহমানই তার বাবা।

নিজাম উদ্দিন হাজারী আরও বলেন, ইফাত এনবিআর সদস্য মতিউর রহমানের দ্বিতীয় পক্ষের ছেলে। ধারণা করছি রাগ করে মতিউর রহমান ইফাতের সঙ্গে সম্পর্ক অস্বীকার করেছেন। মতিউর রহমান নিয়মিত দ্বিতীয় পক্ষের স্ত্রীর নানা পারিবারিক অনুষ্ঠানে অংশ নেন।

এ বিষয়ে পরিবারটির ঘনিষ্ঠজনেরা বলছেন, ব্যাপক আলোচনাসমালোচনার কারণে মতিউর রহমান ছেলেকে অস্বীকার করছেন। কারণ ১৫ লাখের ছাগলকে কেন্দ্র করে ভাইরাল হওয়ার পর ইফাতের দামি ব্র্যান্ডের ঘড়ি, গাড়ি, আলিশান জীবনযাপনের নানা বিবরণ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশ পাচ্ছে। বলা হয়, এ অবস্থায় পরিস্থিতি সামাল দিতে তাৎক্ষণিকভাবে ছেলের পরিচয় এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছেন তিনি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধপেয়ারা খেতে ডেকে বন্ধুকে কুপিয়ে জখম, কিশোরের মৃত্যু
পরবর্তী নিবন্ধপুলিশকে নিয়ে সংবাদ প্রকাশে গণমাধ্যমকে সতর্ক থাকার অনুরোধ