যে শুনানি হওয়ার কথা ছিল ইন্টারনেট আইন সংশোধন ও কনটেন্ট মডারেশন প্রশ্নে প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোর দায়িত্বশীলতা নিয়ে সেটি শেষ পর্যন্ত গিয়ে ঠেকল আসন্ন নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে প্রতিষ্ঠানগুলো সুবিধা দিচ্ছে কি না সেই প্রশ্নে। আর এতে খুব দ্রুত নিয়ন্ত্রণ হারালেন মার্কিন আইনপ্রণেতারা। ওই শুনানিতে প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানকে দোষারোপ করার পাশাপাশি আইনপ্রণেতারা একে অন্যের সঙ্গেও বিবাদে জড়িয়ে পড়েছিলেন বলে প্রতিবেদনে জানাচ্ছে রয়টার্স।
শুনানিতে হাজির হয়েছিলেন ফেসবুক প্রধান মার্ক জাকারবার্গ, গুগল প্রধান সুন্দার পিচাই এবং টুইটার প্রধান জ্যাক ডরসি। মূলত যুক্তরাষ্ট্রের ‘কমিউনিকেশন ডিসেন্সি অ্যাক্ট’ এর ২৩০ ধারার অধীনে জনমত প্রকাশ প্রশ্নে বড় প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোকে কীভাবে জবাবদিহিতার আওতায় আনা যায়, তা নিয়ে মতপার্থক্য তৈরি হয় আইনপ্রণেতাদের মধ্যে।
প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনের সময়ে পাশ হওয়া ওই আইনটি প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোকে ব্যবহারকারীর কনটেন্টের জন্য মামলার শিকার হওয়া থেকে রক্ষা করে আসছে। শুনানিতে রিপাবলিকান আইনপ্রণেতারা প্রায় পুরোটা সময় জুড়েই প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানকে দোষারোপ করেন। তাদের অভিযোগ, রক্ষণশীলদের বিরুদ্ধে বেছে বেছে সেন্সরশিপ চালাচ্ছে প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলো। খবর বিডিনিউজের।
আইনের ব্যাপারে কমই প্রশ্ন করা হয় গুগল, ফেসবুক ও টুইটারের প্রধান নির্বাহীদের। নিজ নিজ ভাষ্যে জাকারবার্গ, পিচাই ও ডরসি জানান, ইন্টারনেটে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা থাকার ব্যাপারটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আলোচিত আইনের ২৩০ ধারা তাদের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও কনটেন্ট মডারেটের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করতে সহায়তা করছে। তিন প্রধান নির্বাহীই রাজনৈতিক বক্তব্য মডারেট করার অভিযোগ অস্বীকার করেন। ব্যাপারটি ভালোভাবে নিতে পারেননি কয়েকজন রিপাবলিকান আইনপ্রণেতা।
শুনানিতে জ্যাক ডরসি জানান, নির্বাচনের ওপর কোনো প্রভাব বিস্তার করছে না টুইটার। এর পরপরই ডরসিকে এক হাত নেন রিপাবলিকান সিনেটর টেড ক্রুজ। তিনি বলেন, যা গণমাধ্যমে প্রকাশের অনুমতি রয়েছে এবং মার্কিনীদের জানার অধিকার রয়েছে, তা আটকানোর সিদ্ধান্ত নেওয়ার দায়িত্ব আপনাকে কে দিয়েছে এবং কার ভোটে তিনি ওই পদে বসেছেন?
উল্লেখ্য, টেড ক্রুজ কয়েকদিন আগে নিউ ইয়র্ক পোস্টে প্রকাশিত এক নিবন্ধ প্রসঙ্গে এ কথা বলেন। ওই নিবন্ধে ডেমোক্রেটিক প্রেসিডেনশিয়াল প্রার্থী জো বাইডেনের ছেলের প্রসঙ্গ এসেছিল। কিন্তু নিবন্ধটির ‘রিচ’ কমিয়ে দিয়েছিলো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক, আর তা ব্লক করে দিয়েছিল টুইটার। ডেমোক্রেট সিনেটর ব্রায়ান শার্টজ জানান, তার কোনো প্রশ্ন নেই। ওই সময়ে শুনানিকে ‘ছাইপাশ’ বলেও আখ্যা দেন তিনি। শার্টজ বলেন, এটি হয়রানি এবং পুরো কাজটিই নির্বাচনকে প্রভাবিত করতে করা হয়েছে।
অন্যান্য ডেমোক্রেটরাও একই অভিযোগ তোলেন। এদের মধ্যে ছিলেন সিনেটর ট্যামি বল্ডউইন, সিনেটর এড মার্ক এবং সিনেটর এমি ক্লবুচার। সবার ভাষ্যেই, শুনানিটি আয়োজন করা হয়েছে ডোনাল্ড ট্রাম্পের ‘পুনঃনির্বাচনী’ প্রচেষ্টাকে সহায়তা করার লক্ষ্যে। অন্যদিকে, শুনানি চলাকালে টুইট করেছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। টুইটে তিনি লেখেন, ২৩০ ধারা বাতিল করুন!