ছয়তলা ভবনের গায়ে হেলে পড়ল সাততলা ভবন

ফটিকছড়ি পৌরসভা সদর বাসিন্দাদের দ্রুত সরে যাওয়ার নির্দেশ

ফটিকছড়ি প্রতিনিধি | বুধবার , ২১ মে, ২০২৫ at ৭:৪৪ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি পৌরসভা সদরে একটি সাততলা ভবন পাশের ছয়তলা ভবনের গায়ে হেলে পড়েছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, ভবনটি নির্মাণের সময় থেকেই কিছুটা হেলে পড়েছিল, যা এখন প্রায় ১৮২০ ইঞ্চি হয়েছে। ফলে ভবনটিতে বসবাসরত ভাড়াটিয়ারাসহ আশপাশের বাসিন্দারা মারাত্মক ঝুঁকিতে রয়েছেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, উপজেলা সদরের প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ের বিপরীতে বিএস ৭৮৫৫ নম্বর দাগে ৩১ শতক জমির ওপর নির্মিত সাততলা ভবনটির মালিক মো. আবদুল খালেক। ২০১৯ সালে তিনি ফটিকছড়ি পৌরসভার কাছ থেকে ছয়তলা ভবনের অনুমোদন পান। তবে অনুমোদনের শর্ত ভঙ্গ করে তিনি একটি অতিরিক্ত তলা নির্মাণ করেন।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ভবনটি নির্মাণের প্রথম দিকেই ৩৪ ইঞ্চি হেলে পড়ে। বিষয়টি নিয়ে এলাকাবাসী মৌখিকভাবে পৌর কর্তৃপক্ষকে জানালেও কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। সময়ের সঙ্গে ভবনটির ঝুঁকি বাড়তে থাকে। বর্তমানে ভবনটি পাশের ছয়তলা ভবনের ওপর ভর দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।

এদিকে খবর পেয়ে ভবনটিতে পরিদর্শনে গিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী। এসময় তিনি বলেন, এ ঘটনায় পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে এবং ঝুঁকিপূর্ণ ভবনটির বাসিন্দাদের অবিলম্বে নিরাপদে সরে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। ইউএনও বলেন, বিষয়টি স্পর্শকাতর হওয়ায় দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। সবকিছু যাচাইবাছাই করে একটি পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। গঠিত কমিটি দ্রুত পর্যবেক্ষণ, পরীক্ষানিরীক্ষা এবং যাচাইবাছাই করে প্রতিবেদন জমা দেবে। সেই প্রতিবেদনের ভিত্তিতে পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এই মুহূর্তে ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে থাকা লোকজনকে নিরাপদে সরে যাওয়াই উত্তম।

পরিদর্শনকালে ইউএনওর সঙ্গে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. নজরুল ইসলাম, উপজেলা প্রকৌশলী তন্ময় নাথ, ফটিকছড়ি পৌরসভার ভারপ্রাপ্ত প্রকৌশলী রাজীব বড়ুয়াসহ ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের মালিক পক্ষের লোকজন ও স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, কিছুদিন আগেও দুটি ভবনের মাঝে কিছুটা ফাঁকা জায়গা ছিল, কিন্তু এখন সাততলা ভবনটি পাশের ছয়তলা ভবনটির গায়ে পুরোপুরি ঠেকে গেছে। ভবন মালিক বিষয়টি জানলেও দীর্ঘদিন ধরে কোনো প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি বলে তাদের অভিযোগ। স্থানীয় বাসিন্দা মো. তসলিম বলেন, ভবনের অবস্থা খুবই খারাপ। এটি যেকোনো সময় ধসে যেতে পারে।

ফটিকছড়ি পৌরসভার ভারপ্রাপ্ত প্রকৌশলী রাজীব বড়ুয়া বলেন, ভবনটির ছয় তলার অনুমোদন ছিল। কিন্তু অতিরিক্ত একটি তলা নির্মাণ করা হয়েছে, যা সম্পূর্ণ অননুমোদিত। অভিযোগের ভিত্তিতে ভবনের কাঠামোগত স্থিতিশীলতার জন্য সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে পর্যালোচনা সনদ দিতে বলা হয়েছে।

ভবনটির মালিক মো. আবদুল খালেক প্রবাসে থাকায় সরাসরি তার সঙ্গে যোগাযোগ সম্ভব হয়নি। ভবনের তত্ত্বাবধানে থাকা মো. নেজাম উদ্দিন বুলবুল সাংবাদিকদের বলেন, ভবনটি যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদন নিয়ে তৈরি হয়েছে। প্রকৌশলীর তত্ত্বাবধানে নির্মাণকাজ সম্পন্ন হয়েছে।

চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) প্রকৌশলী সঞ্জয় দেবনাথ বলেন, ভবন হেলে পড়া মানেই নির্মাণে ত্রুটি রয়েছে। এটি কোনোভাবেই উপেক্ষা করা যায় না। স্থানীয় প্রশাসনের উচিত দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া।

ফটিকছড়ি ফায়ার সার্ভিসের ভারপ্রাপ্ত স্টেশন কর্মকর্তা মো. কামাল উদ্দিন জানান, ভবনটি হেলে পড়েছে বলে আমরা জেনেছি। তবে এখনো বাসিন্দাদের সরিয়ে নেওয়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ পেলে আমরা ব্যবস্থা নেব।

পূর্ববর্তী নিবন্ধচবি চারুকলা ইনস্টিটিউট মূল ক্যাম্পাসে স্থানান্তর শুরু
পরবর্তী নিবন্ধসৈকতে প্যারাসেইলিং থেকে ছিটকে পড়লেন দম্পতি