ছন্দনা পুকুরের ময়লা এক মাসের মধ্যে অপসারণের নির্দেশ

আজাদী প্রতিবেদন | শনিবার , ৯ আগস্ট, ২০২৫ at ৬:৩৮ পূর্বাহ্ণ

নগরের উত্তর পাহাড়তলী নোয়াপাড়া হাজী আমানউল্ল্যাহ রোডে দিনদুপুরে ময়লা আবর্জনায় ভরাট করে ফেলা শত বছরের ছন্দনা পুকুরের ওয়ারিশদের নোটিশ দিয়েছে পরিবেশ অধিদপ্তর। ইতোমধ্যে পুকুরের ওয়ারিশদের উপস্থিতিতে নোটিশের ওপর শুনানি করেছে পরিবেশ অধিদপ্তর, চট্টগ্রাম। শুনানি শেষে পরিবেশ অধিদপ্তর পুকুরের ওয়ারিশদের আগামী ১ মাসের মধ্যে পুকুরের ভরাট করা ময়লাগুলো অপসারণের নির্দেশ দিয়েছে। একই সাথে পুকুরে যাতে আর কেউ ময়লা ফেলতে না পারে এজন্য পুকুরের চারপাশে বাঁশের বেড়া দিয়ে ঘেরা দিয়ে সাইনবোর্ড টাঙ্গানোরও নির্দেশ দিয়েছে পরিবেশ অধিদপ্তর।

উল্লেখ্য, নগরের উত্তর পাহাড়তলী নোয়াপাড়া হাজী আমানউল্ল্যাহ রোডে দিনদুপুরে ময়লাআবর্জনায় ভরাট করে ফেলা শত বছরের ঐতিহ্যবাহী ছন্দনা পুকুরের উপর গত ২৫ জুলাই দৈনিক আজাদীতে ‘যেভাবে মৃত্যু হচ্ছে একটি পুকুরের’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনটি প্রকাশের পর পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রামের একটি টিম সরেজমিনে পুকুরটির বর্তমান অবস্থা পরির্দশন করে এবং দিনদুপুরে ময়লা আবর্জনা ফেলে শত বছরের পুরনো বিশাল এই পুকুরটি ভরাট করে ফেলার সত্যতা পায়। এ ব্যাপারে পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রামের উপপরিচালক সোনিয়া সুলতানা আজাদীকে জানান, পুকুরটি (ছন্দনা পুকুর) আমাদের পরিবেশ অধিদপ্তরের টিম সরেজমিনে পরির্দশন করেছেন। তারা বিস্তারিত তথ্য নিয়ে এসেছেন। এরপর আমরা ঐ পুকুরের মালিকদের নোটিশ করেছি। পুকুরটির অনেক মালিক, প্রায় ৪০ জন। অনেকেই নেই, তাদের স্বশরীরে পাওয়া যায়নি। যাদেরকে পাওয়া গেছে তারা এসেছেন। তাদের উপস্থিতিতে নোটিশের শুনানি করেছি। শুনানিতে তাদেরকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছেআগামী ১ মাসের মধ্যে পুকুরের সমস্ত ময়লাআবর্জনা পরিষ্কার করতে হবে। একই সাথে পুকুরের চারপাশে বাঁশের বেড়া দিয়ে সাইনবোর্ড টাঙ্গিয়ে দেয়ার জন্য নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। যাতে কেউ আর এখানে ময়লা ফেলতে না পারে। এক মাসের মধ্যে ময়লা পরিষ্কার করে পুকুরটিকে আগের অবস্থানে ফিরিয়ে না নিলে আমরা জেলা প্রশাসনকে জানাবোএই জায়গা অধিগ্রহণ করে যেন সিটি কর্পোরেশনকে দিয়ে দেয়। সিটি কর্পোরেশন ময়লা পরিষ্কার করে আগের মত পুকুরে রূপান্তিত করবে।

গত ২৩ জুলাই সরেজমিনে পুকুরটি দেখার জন্য গেলে স্থানীয় অসংখ্য নারীপুরুষ এসময় ভিড় করেন এবং তাদের অভিযোগের কথা আজাদীতে তুলে ধরার জন্য অনুরোধ জানান। এ সময় স্থানীয় বাসিন্দা মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিন এবং সালমা আক্তার জানান, এই পুকুরটির এক সময় আয়তন ছিল দেড় কানির মতো। এখন চারদিকে ভরাট করে পাকাসেমিপাকা বিল্ডিং, দোকান এবং টং দোকান করার ফলে পুকুরটির আয়তন এখন ১০ গন্ডায় এসে ঠেকেছে।

মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিন বলেন, এই পুকুরটি আমার জন্মের অনেক আগের। এখানে আমাদের বাপদাদারা গোলস করেছেন। আমরা গোসল করেছি। এখন চারদিকে ময়লাআবর্জনা ফেলে ভরাট করা হচ্ছে যাতে কেউ ব্যবহার করতে না পারে। দীর্ঘদিন পুকুরটি ব্যবহার করতে না পারার কারণে পুকুরটির মাঝখানে ঘাস লতাপাতায় ভরে গেছে। যে কেউ হঠাৎ করে দেখলে পুকুর বলে মনে হবে না।

স্থানীয়রা জানান, পুকুরে দিনেরাতে ময়লাআবর্জনা ফেলা হলেও কেউ প্রতিবাদ করছেন না। ময়লাআবর্জনার দুর্গন্ধে পুকুরের চারপাশে কয়েকশ পরিবার বসবাস করতে পারছে না। তারা ঘর থেকে বের হতে পারছেন না; ছেলেমেয়েদের স্কুলে নিতে পারছে না, দরজাজানলা খুলতে পারছে না দুর্গন্ধের কারণে। বেশ কয়েকজন স্থানীয় বাসিন্দা জানান, আমরা সবাইকে বলেছি, মেয়র সাহেবকেও বলেছিএখানে ময়লা না ফেলার জন্য সাইনবোর্ড লিখে দেয়ার জন্য। মেয়র সাহেব এসেও বলেছেন, এখানে ময়লা না ফেলার জন্য। তারা কারো কথা শুনে না। দিনরাত এই খোলা জায়গায় ময়লা ফেল পুকুরটি কৌশলে ভরা করা হচ্ছে। যারা কিনেছেন তাদেরকে আমরা বলেছিআপনারা ঘেরাও দিয়ে দেন; এখানে ময়লা না ফেলার জন্য সাইবোর্ড দিয়ে দেন। কিন্তু কেউ শুনছেন না আমাদের কথা।

পূর্ববর্তী নিবন্ধশীতলঝর্ণা খালের উপর আরেকটি ব্রিজ ঝুঁকিপূর্ণ
পরবর্তী নিবন্ধসড়কে মানসিক ভারসাম্যহীন নারীর সন্তান প্রসব, হাসপাতালে পাঠাল পুলিশ