চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে অগ্রসর হতে হবে

| রবিবার , ১৮ ডিসেম্বর, ২০২২ at ৫:২৩ পূর্বাহ্ণ

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে বৈশ্বিক অর্থনীতিতে। করোনা পরবর্তী সময়ে কি রাজনৈতিক, কি অর্থনৈতিক, কি সামাজিক বা পারিবারিক- প্রায় সর্বত্রই তীব্র অভিঘাত সৃষ্টি হয়েছে। ইতোমধ্যে আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেল, ভোজ্যতেল, গম-ভুট্টার দাম বাড়তে শুরু করেছে, যার প্রভাব পড়ছে অন্যান্য দেশেও। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ প্রলম্বিত হলে, যার আশংকা সমধিক, সার্বিক পরিস্থিতি ক্রমশ জটিল ও অনিশ্চিত হয়ে পড়বে। সে অবস্থায় সবাইকে মিতব্যয়ী এবং দৈনন্দিন জীবনযাপনে কৃচ্ছ্রসাধনের বিকল্প নেই বলে বিশেষজ্ঞরা অভিমত প্রকাশ করেছেন। এরই মধ্যে অর্থ বিভাগ থেকে গত ১৩ ডিসেম্বর জারি করা পরিপত্রে বলা হয়েছে, বরাদ্দের বাইরে মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোকে অতিরিক্ত কোনো অর্থ দেওয়া হবে না। এ ছাড়া অর্থবছরের বাকি ছয় মাসে (জানুয়ারি-জুন) অনুমোদনবিহীন নতুন কোনো প্রকল্পের জন্য টাকাও চাওয়া যাবে না। অন্যদিকে প্রকল্পের অব্যয়িত অর্থ ব্যয় দেখানো যাবে না অন্য কোনো খাতে। সাশ্রয়ের জন্য কম গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প বাদ দিয়ে প্রকল্পের সংখ্যাও কমাতে হবে। প্রয়োজনে ধীরগতির প্রকল্প থেকে অর্থ কেটে দ্রুতগতির জনগুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পে জোগান দিতে হবে।

বলা অনাবশ্যক যে, বর্তমানে বাংলাদেশসহ গোটা বিশ্ব একটি সংকটময় পরিস্থিতি পার করছে। এ পরিপ্রেক্ষিতে অর্থ বিভাগের বাজেট পরিপত্রটি সময়োপযোগী বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। তাঁরা বলেন, ‘তবে এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগকে অর্থ বিভাগের নির্দেশনা পুরোপুরি মানতে হবে। সবচেয়ে বড় কথা, কৃচ্ছ্রসাধনের ক্ষেত্রে মন্ত্রণালয়গুলোকে আরও সচেতন ও বাস্তবমুখী হতে হবে। তা না হলে এ নির্দেশনা কাজে আসবে না। মনে রাখা প্রয়োজন, ব্যয় তখনই বাড়ানো সম্ভব, যখন আয় বাড়ে।’

অতি সম্প্রতি পত্রিকান্তরে এক সাক্ষাৎকারে বিশ্বব্যাংক, ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন বলেছেন, স্বল্প সময়ে বেশি ঋণ পরিশোধের বিষয়টি আগামী দিনে বাংলাদেশের জন্য চাপের বিষয় হবে। চাপ যে বাড়বে, তা নিয়ে কোনো অনিশ্চয়তা নেই। কিন্তু কতটা চাপ তৈরি হবে, সেটাই হলো প্রশ্ন। বর্তমানে আমরা বছরে ২০০ কোটি ডলারের বেশি ঋণ পরিশোধ করি। ২০২৬ সালের পর তা আরও বেড়ে যাবে। এখন যেসব ঋণের অর্থ পরিশোধ করছি, তার সঙ্গে আগামী কয়েক বছরের মধ্যে নতুন করে বেশ কিছু অর্থ যোগ হবে। ফলে বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়াতে বাড়বে জ্বালানি তেল আমদানিও। এ ছাড়া আরও বেশ কয়েকটি বড় প্রকল্পের কাজও চলমান। সব মিলিয়ে আগামী কয়েক বছরের মধ্যে ঋণ পরিশোধ ও আমদানি ব্যয়ের ওপর চাপ অনেক বাড়বে। যদি সেই পরিমাণ নতুন অর্থায়ন জোগান দেওয়া না যায়, তাহলে রিজার্ভের ওপর বাড়তি চাপ তৈরি হবে। কোথায় কোন সময়ের মধ্যে কত ঋণ পরিশোধ করতে হবে, সব তথ্য আমাদের জানা। এ জন্য কোনো অনিশ্চয়তার কথা বলে তথ্য গোপন করা ঠিক হবে না। আগাম প্রস্তুতি নিয়ে পরিকল্পিত কৃচ্ছ্র সাধন করতে হবে। হঠাৎ কোনো সিদ্ধান্ত নিয়ে মানুষের কষ্টের মাধ্যমে কৃচ্ছ্র সাধন করা কোনো সমাধান না।

মূল্যস্ফীতি সামাল দেওয়ার চ্যালেঞ্জ নিয়ে শুরু করা নতুন অর্থবছরে সীমিত সম্পদের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করতে কৃচ্ছ্রসাধনের পথে হাঁটা শুরু করেছে সরকার। অর্থবছরের শুরুতেই প্রকল্প বাস্তবায়নে অগ্রাধিকার দিতে প্রকল্পের ক্যাটাগরি নির্ধারণ, যানবাহন কেনা বন্ধ, সরঞ্জাম কেনায় বরাদ্দের অর্ধেক অর্থ ব্যবহার, উন্নয়ন প্রকল্পের বিভিন্ন কমিটির সম্মানী ব্যয় বন্ধ রাখার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলেন, ‘সরকার অর্থবছরের শুরুতেই একটি ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আমরা এটাকে সমর্থন করি। রাজস্ব আয়ের যে অবস্থা তাতে আগে থেকেই এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ।’

তাঁরা বলেন, ‘সরকার খুবই ভালো একটি সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এটা দরকার আছে। আরও কোন কোন জায়গায় কৃচ্ছ্রসাধন করা যায়, সরকারের এটা দেখা উচিত। কারণ আমাদের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ওপর বড় একটা চাপ আছে। সরকারের আয়ের ওপরও একটা চাপ আছে। ব্যয় তো বাড়ছে অনেক। সেদিক থেকে আমি মনে করি উদ্যোগটা অবশ্যই প্রশংসনীয়। এটা বাস্তবায়ন করতে পাশাপাশি এ ধরনের আরও কিছু জায়গা আছে কি না বাজেটে সেটা বের করা দরকার। সরকারের খরচের জায়গাগুলো হয়তো আরও কমানো যেতে পারে।’

আমরা আসলে ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছি। অতীতেও আমাদের অর্থনীতি নানামুখী প্রাকৃতিক ও রাজনৈতিক দুর্যোগ অতিক্রম করে এগিয়েছে। দেশের মানুষ তাদের কাজ দিয়ে এগিয়ে নিয়েছে দেশকে। তাঁরা কঠোর পরিশ্রম করে অর্থনীতির চাকা সচল রেখেছেন। এবারও আমরা সমস্ত দুর্যোগ অতিক্রম করতে সক্ষম হবো- সেই প্রত্যাশা আমাদের।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে