চ্যালেঞ্জের মুখে গ্যাসের এক লাখ প্রিপেইড মিটার স্থাপনের কাজ

নতুন করে জিআই লাইন তৈরিতে ব্যয় হবে মোটা অংকের অর্থ বাড়তি খরচ যোগাতে বাড়ির মালিকদের ‘না’

হাসান আকবর | বুধবার , ১১ অক্টোবর, ২০২৩ at ৬:১০ পূর্বাহ্ণ

বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে যাচ্ছে গ্যাসের এক লাখ প্রিপেইড মিটার স্থাপনের কাজ। নগরীতে গ্যাসের এক লাখ প্রিপেইড মিটার স্থাপনের ব্যাপারে সার্ভে শুরু করার পরই চ্যালেঞ্জটি সামনে এসে দাঁড়িয়েছে। প্রিপেইড মিটার স্থাপনের জন্য প্রতিটি বাড়িতেই নতুন করে গ্যাসের জিআই লাইন তৈরি করতে হবে। যাতে বেশ মোটা অংকের অর্থ ব্যয় হবে। বিদ্যমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে বাড়ির মালিকেরা বাড়তি এই খরচ যোগানোর ক্ষেত্রে ‘না’ সূচক মতামত দিতে শুরু করেছে। প্রি পেইড মিটারের ব্যাপারে ব্যাপক আগ্রহ থাকলেও নয়া লাইন তৈরির খরচের কারণে অধিকাংশ মানুষই পিছু হটছে। বিষয়টি নিয়ে ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্টদের কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে।

সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম মহানগরীতে আবাসিক গ্যাস খাতে এক লাখ প্রিপেইড মিটার স্থাপনের উদ্যোগ নেয়া হয় বেশ আগে। ২০১৮ সালে নগরীতে প্রথম দফায় আবাসিক গ্যাস সংযোগে ৬০ হাজার প্রি পেইড মিটার স্থাপনের কাজ সম্পন্ন করা হয়। জাপান সরকারের সাথে সম্পাদিত চুক্তির আওতায় জাপান ইন্টারন্যাশনাল কোঅপারেশন এজেন্সির (জাইকা) ঋণ সহায়তায় এসব মিটার স্থাপন করা হয়। কর্ণফুলী গ্যাসের প্রায় ৬ লাখ আবাসিক গ্রাহকের মাঝে প্রথম দফায় ৬০ হাজার গ্রাহককে প্রিপেইড মিটার দেয়া হলে বেশ সাড়া পড়ে। বিশেষ করে গ্যাসের চুরি একেবারে কমে যায়। কমে যায় অপচয়ও। প্রিপেইড মিটার স্থাপনের পর নগরীর আবাসিক খাতে গ্যাসের খরচ বহুলাংশে কমে যায়। আগে সিঙ্গেল বার্নার এবং ডাবল বার্নারের যে ট্যারিফ বিল পরিশোধ করা হতো প্রি পেইড মিটারে তা প্রায় অর্ধেকে নেমে আসে। চুলা না জ্বালালে কোনো বিল আসে না। আবার নিজেরাও ইচ্ছে করলে বিল সাশ্রয় করতে পারছে। পোস্টপেইড চুলা থেকে প্রিপেইড মিটারে খরচ কমে যাওয়ায় এই সিস্টেমটি বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠে। চট্টগ্রামের আবাসিক গ্রাহকদের অনেকেই প্রি পেইড মিটারের জন্য আগ্রহ প্রকাশ করে। গ্রাহকদের ব্যাপক আগ্রহের প্রেক্ষিতে চট্টগ্রামে নতুন করে আরো ১ লাখ প্রিপেইড মিটার স্থাপনের জন্য পৃথক একটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। ২৪১ কোটিরও বেশি টাকার এই প্রকল্পটির সব আনুষ্ঠানিকতা ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। নিয়োগ দেয়া হয়েছে ঠিকাদার। জাপানের টয়োকিকি কোম্পানি লিমিটেড নামের একটি প্রতিষ্ঠান ১ লাখ প্রিপেইড মিটার স্থাপনের কার্যাদেশ পেয়েছে।

কার্যাদেশ পাওয়ার পর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে মিটার আমদানির জন্য এলসি খোলার প্রক্রিয়াসহ বিভিন্ন কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে। এরমধ্যে অন্যতম হচ্ছে সার্ভে কার্যক্রম। যেসব গ্রাহক প্রি পেইড মিটার স্থাপনের ব্যাপারে আবেদন করেছেন তাদের আবেদনগুলো যাছাই বাছাই শেষে মিটার লাগানোর উপযোগী আছে কিনা তা পরীক্ষা করা হচ্ছে। এই কার্যক্রম শুরু হয়েছে গত দিনকয়েক আগে। আর সার্ভে কার্যক্রম শুরু করেই জাপানি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি বেশ বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে।

চট্টগ্রাম মহানগরীতে ৮২ হাজার গ্রাহক ইতোমধ্যে প্রি পেইড মিটারের জন্য আবেদন করেছিলেন। উক্ত আবেদনকারীদের বাসা বাড়িতে সার্ভে শুরু করা হয়েছে। আর সার্ভে শুরু করতে গিয়ে বাসাবাড়ির গ্যাস লাইন ঠিকঠাক আছে কিনা সেটি দেখতে গিয়ে বড় ধরনের ঘাপলা পাওয়া যাচ্ছে। পাঁচ সাত তলা বিল্ডিং এ ১০/১৫টি চুলা একই জিআই পাইপ লাইন দিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। অধিকাংশ বাড়িতেই রাইজার থেকে প্রথম তলায় যে গ্যাস লাইন নিয়ে যাওয়া হয়েছে সেখান থেকেই দ্বিতীয় তলায়, আবার দ্বিতীয় তলা থেকে তৃতীয় তলায় লাইন টানা হয়েছে। একটি পাইপ লাইন থেকে ২০/৩০টি চুলা রয়েছে এমন অনেক বাড়ি রয়েছে বলে উল্লেখ করে সার্ভে কার্যক্রমে অংশ নেয়া একজন প্রকৌশলী বলেছেন, আগে যেভাবে এক লাইন থেকে ৩০ লাইনে সংযোগ টানা হয়েছে এখন সেভাবে সংযোগ দেয়া সম্ভব নয়। রাইজারের পর থেকে প্রতিটি চুলার জন্য আলাদা জিআই পাইপ লাইন টানতে হবে। এক রাইজারে যদি ১০টি চুলা থাকে তাহলে রাইজার থেকে দশটি জিআই পাইপ লাইন টেনে ১০টি চুলা পর্যন্ত নিয়ে যেতে হবে। কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির অনুমোদিত ঠিকাদার দিয়েই নয়া পাইপ লাইন স্থাপনের কাজ করাতে হবে। নয়া এই পাইপ লাইন তৈরির পুরো খরচই বাড়িওয়ালাকে পরিশোধ করতে হবে। তবে মিটার, মিটার শেডসহ আনুষাঙ্গিক খরচ কোম্পানির পক্ষ থেকে করে দেয়া হবে। এতে এক একটি মিটারের পেছরে কোম্পানির ব্যয় হবে প্রায় ২৬ হাজার টাকা।

মিটার স্থাপনসহ আনুষাঙ্গিক খরচের উক্ত ২৬ হাজার টাকা বাড়িওয়ালাকে পরিশোধ করতে না হলেও রাইজারের পর থেকে চুলা পর্যন্ত আলাদা পাইপলাইন স্থাপন করতে বাড়িওয়ালাদের চুলা ভেদে হাজার হাজার টাকা দরকার। পাইপের দাম অনেক বেড়ে গেছে, বেড়ে গেছে শ্রমিক মজুরি। এতে করে আলাদা আলাদা পাইপলাইন নির্মাণে বেশ মোটা অংকের অর্থই ব্যয় হবে। বাসা বাড়ির মালিকদের অনেকেই এই খরচের কারণে প্রি পেইড মিটার স্থাপনের আগ্রহ থেকে সরে আসতে শুরু করেছেন। তারা বলছেন, এখন এতো টাকা খরচ করার মতো অবস্থা নেই। এক একটি চুলার পেছনে পাইপ, মজুরি এবং কন্ট্রাক্টরের ব্যবসা মিলে ৩০/৩৪ হাজার টাকাও খরচ হতে পারে।

বাসাবাড়ির মালিকদের অনাগ্রহ পুরো প্রকল্পটির জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দেখা দিচ্ছে বলে উল্লেখ করে সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র বলেছে, প্রকল্পটির জন্য সরকার প্রায় আড়াইশ কোটি টাকা খরচ করবে। অথচ বাড়ি মালিকদের পাইপ স্থাপনের খরচের কারণে বিশাল এবং গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পটি বাস্তবায়নে সংকট তৈরি হতে পারে। তিনি বলেন, অ্যাপার্টমেন্টগুলোতে প্রতি ফ্ল্যাটের জন্য আলাদা আলাদা গ্যাস পাইপ লাইন রয়েছে। সেখানে বাড়তি কোনো খরচ নেই। শুধু বাড়িগুলোর ক্ষেত্রে এই সমস্যাটি প্রকট হয়ে দেখা দিয়েছে।

কর্ণফুলী গ্যাসের পদস্থ একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, প্রকল্পের বিভিন্ন কার্যক্রম দ্রুত সম্পন্ন হচ্ছে। আগামী মাস দুয়েকের মধ্যেই নগরীতে প্রি পেইড মিটার লাগানোর কাজ শুরু হবে বলেও তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। খরচের জন্য গ্রাহকদের অনাগ্রহের ব্যাপারটি নিয়ে কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির কিছু করার নেই বলে মন্তব্য করে তিনি বলেন, প্রায় ৬ লাখ গ্রাহকের মধ্যে এক লাখ আগ্রহ গ্রাহক অবশ্যই পাওয়া যাবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধচবিতে গণতান্ত্রিক ছাত্র জোটের ওপর ছাত্রলীগের হামলার অভিযোগ
পরবর্তী নিবন্ধবাবাকে হত্যা করে ১০ টুকরা করে বড় ভাই, মাথাটা ফেলি আমি