চৌধুরী হাটে হাসিল আদায়ের ঘোষণায় উত্তেজনা

খাস আদায়ে তিন সদস্যের কমিটি চসিকের ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের প্রতিবাদ

মোরশেদ তালুকদার | শনিবার , ২৪ জুন, ২০২৩ at ৬:৩৭ পূর্বাহ্ণ

প্রথমবারের মত দক্ষিণ পাহাড়তলী ওয়ার্ডের শতবর্ষী চৌধুরীহাটে বসা কোরবানি পশুর অস্থায়ী বাজার থেকে হাসিল আদায়ের উদ্যোগ নিয়েছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক)। আজ শনিবার থেকে খাস আদায়ের মাধ্যমে এ হাসিল আদায়ে তিন সদস্যের একটি কমিটিও গঠন করেছে সংস্থাটি। গতকাল শুক্রবার বাজারটিতে মাইকিং করে হাসিল আদায়ের ঘোষণা দেয়া হয়। তবে হাসিল আদায়ের ঘোষণার প্রতিবাদ জানিয়েছে স্থানীয় লোকজন। তাদের দাবি, বাজারটি বসে রেলওয়ের জায়গায়। তাছাড়া অতীতে কোনো মেয়র হাসিল আদায়ের উদ্যোগ নেয়নি বলেও জানান তারা। এমনকি ওয়ার্ড আওয়ামী লীগও কর্পোরেশনের সিদ্ধান্তের বিপক্ষে। আজ সকাল ১১ টায় চৌধুরীহাট রেলস্টেশন চত্ত্বরে হাসিল আদায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ সমাবেশ করার কথা ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের। বিষয়টিকে ঘিরে এলাকায় ‘শান্তিবিঘ্নে’র শঙ্কা করছেন কেউ কেউ। সবমিলিয়ে চসিকের হাসিল আদায়ের ঘোষণায় চৌধুরী হাট এলাকায় উত্তেজনা দেখা দিয়েছে।

জানা গেছে, গত ১১ মে জেলা প্রশাসন বরাবর ২৩টি অস্থায়ী হাট বসানোর অনুমতি চেয়ে আবেদন করে চসিক। এতে হাটহাজারী থানার চৌধুরী হাটের বাজারটিও অর্ন্তভুক্ত ছিল। পরবর্তীতে ১৪ জুন জেলা প্রশাসন চসিককে ৯টি হাট বসানোর অনুমতি দেয়। সেখানে চৌধুরী হাটের পশুর বাজারটি ছিল না। এর কারণ হিসেবে জানা গেছে, জেলা প্রশাসন সিএমপি থেকে চসিকের প্রস্তাবিত বাজারগুলোর বিষয়ে মতামত সংগ্রহ করে। কিন্তু মেট্রোপলিটন এলাকায় না হওয়ায় বাজারটি নিয়ে সিএমপি মতামত দেয়নি। সর্বশেষ জেলা পুলিশের মতামত পাওয়ার পর ২১ জুন চৌধুরী হাটে পশুর বাজার বসানোর জন্য চসিককে অনুমতি দেয় জেলা প্রশাসন।

এদিকে ২০ জুন থেকে কোরবানি পশুর হাটগুলো শুরু হয়। এ অবস্থায় সময় না থাকায় দরপত্রের মাধ্যমে ইজারাদার নিয়োগের সুযোগ নাই। তাই চৌধুরী হাটের পশুর বাজার থেকে খাস আদায়ের মাধ্যমে হাসিল আদায়ের সিদ্ধান্ত নেয় চসিক। এর প্রেক্ষিতে ২২ জুন এস্টেট অফিসার মো. রেজাউল করিমকে আহ্বায়ক করে তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে দেন প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা মো. নজরুল ইসলাম। কমিটির অন্য দুই সদস্য হচ্ছেনএস্টেট শাখার সহকারী দিদার আলম ও সার্ভেয়ার সুজন চৌধুরী।

শন্তিবিঘ্নের শঙ্কা : দক্ষিণ পাহাড়তলী ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর জাফর আলম চৌধুরী দৈনিক আজাদীকে বলেন, হঠাৎ করে হাসিল আদায়ের ঘোষণায় আমি চরমভাবে শান্তিবিঘ্নের আশঙকা করছি। যদি প্রশাসন মুভ করে তাহলে কার বিরুদ্ধে করবে? কারণ সবাই তো জনগণ। তাছাড়া আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকেও তো প্রতিবাদ সমাবেশের আয়োজন করা হচ্ছে।

তিনি বলেন, চৌধুরী হাট বাজারের ঐতিহ্য আছে। এটা শতবর্ষী বাজার। আমার জন্মের আগে থেকে এ বাজার বসে আসছে। এটা ইজারাবিহীন একটা বাজার। মহিউদ্দীন চৌধুরী, মনজুর আলম এবং আ জ ম নাছির মেয়র থাকাকালীর হাসিল আদায় করেননি। এমনকি বর্তমান মেয়র রেজাউল করিমের তিন বছর চলছে, এতদিন হাসিল আদায় করেনি। হঠাৎ করে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে হাসিল আদায় করার ঘোষণা কেন দেয়া হল বুঝে আসছে না।

তিনি বলেন, ব্যক্তিগতভাবে আমি মনে করি বাজারটি এতদিন যেভাবে ইজারাবিহীন ছিল এখনো সেভাবে থাকা উচিত। অতীতে অনেক মেয়র ছিলেন সবার চোখেই তো বাজারটি পড়েছে। তারা কেউ হাসিলের উদ্যোগ নেয়নি। এখন কেন নিবে? তাছাড়া বাজারটি জেলা প্রশাসনের এবং সিটি কর্পোরেশনের জায়গায় বসে না। এটা বসে রেলওয়ের জায়গার উপর। দুইতিন মাস আগে থেকে যদি ইজারা আদায়ের বিষয়টি বলা হতো তখন কথা ছিল। তাছাড়া বাজারে ইজারাদারও তো নিয়োগ দেয়নি, এমনকি পত্রিকায় ইজারা বিজ্ঞপ্তিও দেয়নি। এখন কি সিস্টেমে হাসিল নিবে তা ১৭ বছরের কাউন্সিলর হিসেবেও আমার মাথায় আসছে না।

হাটহাজারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনিরুজ্জামান আজাদীকে বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় যেটা করণীয় আমরা সেটা করব।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে চসিকের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা বলেন, বাজারটি থেকে খাস আদায়ের জন্য স্থানীয় কাউন্সিলরকে অনুরোধ করা হলেও তিনি দায়িত্ব নেননি। তাছাড়া একটি পক্ষ বাজারটি থেকে হাসিল আদায়ের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে। যারা দীর্ঘদিন বাজারটিতে ‘খুঁটি বাণিজ্য’ করে আসছে। ক্রেতারা অন্য বাজার থেকে পশু কিনলে হাসিল দেয়। সেক্ষেত্রে চৌধুরী হাটে দিলে তাদের আপত্তি থাকার কথা না।

আওয়ামী লীগের প্রতিবাদ : দক্ষিণ পাহাড়তলী ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. তানভির আহমদ আজাদীকে জানান, আজ সকাল ১১টায় চৌধুরী হাট রেল স্টেশন চত্ত্বরে ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের উদ্যোগে প্রতিবাদ সমাবেশ হবে। তিনি বলেন, হাসিলবিহীন বাজার হিসেবে শতবছরের ঐতিহ্য আছে চৌধুরী হাটের। বিভিন্ন অপশক্তি এ বাজারের প্রতি কুনজর দেয়। তাদের উদ্দেশ্য ধান্ধাবাজি করা এবং দলের ভাবমুূর্তি ক্ষুণ্ন করা। দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন না হওয়ার জন্য প্রতিবাদ সমাবেশে জনগণকে সচেতন করা হবে। এখানে কোনো চাঁদাবাজি, কোনো হাসিল হবে না। এটা রেলওয়ের জায়গা। এখানে কর্পোরেশনের কিছু নাই।

সিটি মেয়রও তো আওয়ামী লীগের। তাহলে দলের ভাবমূর্তি কীভাবে ক্ষুণ্ন হবে জানতে চাইলে বলেন, আমাদের দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হলে ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সেক্রেটারি হিসেবে আমি প্রতিবাদ করব। সেটা মেয়র হোক বা অন্য কেউ হোক।

বাজারটি বর্তমানে কীভাবে পরিচালিত হয় জানতে চাইলে বলেন, স্থানীয় লোকজন খুঁটি বেঁধে গরুছাগল বিক্রি করে। এখানে হাসিল বলতে কোনো শব্দ নাই।

বিব্রত স্থানীয় কাউন্সিলর : দক্ষিণ পাহাড়তলী ওয়ার্ড কাউন্সিলর গাজী মো. শফিউল আজিম দৈনিক আজাদীকে বলেন, দীর্ঘ ৪০ বছর বাজারটি হাসিলবিহীন চলে আসছে। এখন জেলা প্রশাসন অনুমতি দেয়ায় সিটি কর্পোরেশন হাসিল আদায় করার সিদ্ধান্ত নেয়। দীর্ঘ সময় এটা হাসিলবিহীন বাজার হিসেবে চলে আসায় স্থানীয় লোকজন হাসিল দেয়ার পক্ষে না। যারা শুরু থেকে বাজারটি বসানোর উদ্যোক্তা ছিলেন তারাও হাসিল দেয়ার পক্ষে না। এ অবস্থায় জনপ্রতিনিধি হিসেবে আমাকে জনগণের পক্ষে থাকতে হচ্ছে। আবার কর্পোরেশনের কাউন্সিলর হিসেবে কর্পোরেশনের বিপক্ষে যাওয়ার সুযোগ নাই। ফলে আমি বিব্রতকর অবস্থায় আছি। বিষয়টি নিয়ে আলোচনার জন্য আগামীকাল (আজ) বিকেল ৪টায় বাজারটির উদ্যোক্তাদের সঙ্গে বৈঠক ডেকেছি। সেখানে আলোচনা করে একটা সিদ্ধান্ত হবে।

চসিকের বক্তব্য : চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের ভূসম্পত্তি কর্মকর্তা রেজাউল করিম দৈনিক আজাদীকে বলেন, অস্থায়ী পশুর হাট বসানোর অনুমতি চেয়ে জন্য জেলা প্রশাসনের কাছে আমরা যেসব বাজারের তালিকা দিই সেখানে চৌধুরী হাটের বাজারটিও ছিল। মেট্রোপলিটন এলাকায় না হওয়ায় বাজারটির বিষয়ে জেলা প্রশাসনকে সিএমপি কোনো মতামত জানাতে পারেনি। জেলা পুলিশের মতামত পাওয়ার পর জেলা প্রশাসন আমাদের অনুমতি দেয়। মাত্র একদিন আগে অনুমতি পাই। শেষ মুহূর্তে অনুমতি পাওয়ায় দরপত্র আহ্বান করে ইজারাদার নিয়োগের সুযোগ নাই। তাই খাস আদায়ের সিদ্ধান্ত হয়েছে। গতকাল শুক্রবার বাজরটিতে খাস আদায়ের বিষয়ে মাইকিং করা হয়েছে এবং আজ শনিবার থেকে খাস আদায় (হাসিল) আদায় করা হবে বলেও জানান তিনি।

এ বিষয়ে জানার জন্য সিটি মেয়রের মোবাইলে একাধিকবার কল দিলেও রিসিভ করেন নি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধজামাতুল আনসারের প্রতিষ্ঠাতা শামিন মাহফুজ স্ত্রীসহ গ্রেপ্তার
পরবর্তী নিবন্ধদেশের সম্পদ বিক্রি করার বাপের মেয়ে আমি নই : শেখ হাসিনা