চৌধুরী জহুরুল হক : নিরীক্ষাধর্মী সৃজনশীল শিল্পস্রষ্টা

| মঙ্গলবার , ৩ জানুয়ারি, ২০২৩ at ৫:৪৫ পূর্বাহ্ণ

চৌধুরী জহুরুল হক। তিনি একাধারে শিক্ষাবিদ, নাট্যকার, গল্পকার, গীতিকার, রসসাহিত্য স্রষ্টা ও প্রগতিশীল সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব। সৃজনশীল চিন্তা, গবেষণা ও সম্পাদনার কাজও করেছেন প্রচুর। চৌধুরী জহুরুল হকের জন্ম ১৯৪৭ সালের ১ মার্চ চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায়। কৈশোরেই তাঁর মধ্যে সাহিত্য চেতনার উন্মেষ ঘটে। বারো বছর বয়সে ‘সচিত্র সন্ধানী’তে প্রকাশিত হয় তাঁর রচিত গল্প ‘একটি কবিতার জন্ম’।

চট্টগ্রাম কলেজে বাংলা সম্মান শ্রেণিতে পড়ার সময় পুরোপুরি সাহিত্য চর্চায় মনোনিবেশ করেন তিনি। ১৯৬৯ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা সাহিত্যে এম.এ ডিগ্রি লাভ করেন। কর্মজীবনে নাজিরহাট কলেজ, নিজামপুর কলেজ, সিলেট এমসি কলেজ এবং চট্টগ্রাম কলেজে অধ্যাপনার পর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগে যোগ দেন। শিক্ষক হিসেবে নিবেদিতপ্রাণ জহুরুল হক সাহিত্যের প্রতিও ছিলেন প্রবল অনুরাগী। তাই শিক্ষকতা ও সাহিত্যচর্চা দুটোই তিনি পেশা হিসেবে বেছে নেন। সাহিত্যে তাঁর অন্যতম ব্যতিক্রমী সৃষ্টি ‘চোঙ্গা গল্প’। এটি মূলত রম্যরচনা।

এ ধরনের গল্পগুলো ব্যাপক পাঠকপ্রিয়তা অর্জন করে এবং সাহিত্যে এই নতুন ধারাটি একটি আন্দোলনে রূপ নেয়। নাট্য জগতেও তাঁর অবদান অনস্বীকার্য। তাঁর পিএইচ.ডি গবেষণার বিষয় ছিল ‘বাংলাদেশের নাটক: বিষয়বস্তু ও শিল্পরূপ’। বেতার, টেলিভিশন ও মঞ্চের জন্য তিনি প্রচুর নাটক রচনা করেন। তাঁর সুচারু সম্পাদনায় প্রকাশিত হয় ‘সাতসতেরো’, ‘ঐতিহ্য’, ‘চট্টগ্রাম উৎসব স্মরণিকা’ (মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর সহযোগে), ‘আজিকে এ আকাশতলে’ ইত্যাদি সংকলন। চৌধুরী জহুরুল হকের উল্লেখযোগ্য রচনাগুলোর মধ্যে রয়েছে : ‘শাড়ির রঙে রঙ’, ‘চিঠি’, ‘পঞ্চ রঙ’, ‘ক্ষমা’, ‘কবিকাহিনি’, ‘কল্পিত কল্পনা’, ‘পত্রমিতা’ ইত্যাদি। ‘কৃষ্ণপদ বিদ্যারত্ন রচিতকাব্যনাট্য একশৃঙ্গ নাটক বা ভগবান বুদ্ধদেবের পূর্বজীবনী’, ‘এবনে গোলাম নবীর পাঠশালার স্মৃতি ও অন্যান্য’, এবং ‘সুচরিত চৌধুরীর কবিতা’ ইত্যাদি গ্রন্থ সম্পাদনায় চৌধুরী জহুরুল নিষ্ঠা ও বিচক্ষণতার পরিচয় দিয়েছেন।

মাহবুবুল আলম চৌধুরী রচিত ‘কাঁদতে আসিনি, ফাঁসির দাবি নিয়ে এসেছি’ শীর্ষক একুশের প্রথম কবিতার পূর্ণাঙ্গ মূল পাঠ উদ্ধারের কৃতিত্ব তাঁর। লুপ্তপ্রায় এই পাঠের ওপর ভিত্তি করে তিনি রচনা করেন গবেষণামূলক গ্রন্থ ‘প্রসঙ্গ: একুশের প্রথম কবিতা’। তাঁর আঁকার হাত ছিল চমৎকার। তিন খণ্ডে রচিত রচনাসমগ্রের প্রচ্ছদে তাঁর আঁকা ছবি ব্যবহৃত হয়েছে। সূক্ষ্‌ম পর্যবেক্ষণশীল দৃষ্টিভঙ্গি, মেধা, মনন ও নতুন উদ্ভাবনী কৌশল দিয়ে তিনি সাহিত্যে এক নবীন মাত্রা সঞ্চার করেন। ২০০৮ সালের ৩ জানুয়ারি তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধএই দিনে
পরবর্তী নিবন্ধবেকারত্ব দূর করতে কর্মমুখী শিক্ষায় গুরুত্ব দেয়া হোক