রাঙ্গুনিয়ায় চোর সন্দেহে গণপিটুনিতে রবিউল হোসেন রুবেল (৩০) নামে একজনের মৃত্যু হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ১টার দিকে উপজেলার লালানগর ইউনিয়নের ইসলামিয়া পাড়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। নিহত রুবেল চন্দ্রঘোনা বনগ্রাম এলাকার মোহাম্মদ আলীর ছেলে। তার বাড়ি চন্দ্রঘোনা বনগ্রাম হলেও দীর্ঘদিন যাবত তিনি লালানগর ৫ নং ওয়ার্ডে তার শ্বশুর বাড়িতে থাকেন বলে জানা যায়। পেশায় দিনমজুর রুবেল মাঝেমধ্যে সিএনজিচালিত টেক্সি চালায় বলে জানান স্বজনরা। এ ঘটনায় নিহতের স্ত্রী কাজলী আক্তার বাদী হয়ে অজ্ঞতানামা আসামিদের বিবাদী করে থানায় হত্যা মামলা দিয়েছেন।
মামলার এজহার ও স্বজনদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, নিহত রুবেল বৃহস্পতিবার বিকেলে তার স্ত্রীর বড় ভাইয়ের টেক্সিতে গ্যাস নেয়ার উদ্দেশে বের হন। রাতে কাপ্তাই রাস্তারমাথা থেকে গ্যাস নিয়ে আসার পথে লালানগর বন্দেরাজাপাড়া এলাকায় এলে স্থানীয় কয়েকজন তাকে গতিরোধ করে। তার বিরুদ্ধে গত ২৫ ডিসেম্বর রাতে ধামাইরহাট বাজারে কামরুলের মোবাইলের দোকানে চুরি করে ২ লক্ষ টাকা ও ৩টা মোবাইল নিয়ে আসে মর্মে অভিযোগ করে। এ সময় রুবেল ঘটনার ব্যাপারে অস্বীকার করলে তাকে লালানগর ইউনিয়নের ৪ নং ওয়ার্ডের ইসলামপাড়া কুমারপাড়া এলাকায় নিয়ে যায় এবং ব্যাপক মারধর করা হয়। একপর্যায়ে দুজনের নাম স্বীকার করলে তাদেরও ধরে এনে মারধর করে স্থানীয়রা। মারধরের একপর্যায়ে রুবেল নিস্তেজ হয়ে পড়লে তাকে ওই অবস্থায় রেখে চলে যায় তারা। গতকাল শুক্রবার ভোর ৭টার দিকে স্ত্রী কাজলী খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গেলে হাত–পা বাধা অবস্থায় রুবেলকে মৃত অবস্থায় দেখতে পান। পরে থানায় খবর দিলে পুলিশ লাশ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়।
নিহতের স্ত্রীর বড় ভাই জসিম বলেন, রুবেলকে আমি গ্যাস নিতে পাঠিয়েছিলাম। আসার পথে মরিয়মনগর ডিসি সড়কের শান্তিনিকেতন এলাকা থেকে কয়েকজন গাড়িতে ওঠে। তারা বন্দেরাজাপাড়া এলাকায় এলে গাড়িতে থাকা কয়েকজনসহ স্থানীয়রা মিলে এই ঘটনা ঘটিয়েছে। রাত সাড়ে ১টা থেকে ভোর পর্যন্ত দীর্ঘ মারধরে তার মৃত্যু হয়েছে।
তিনি জানান, নিহত রুবেলের প্রকৃত বাড়ি ফেরিঘাট, মা–বাবা নেই। ছোট থেকেই বনগ্রামে পালক সন্তান হিসেবে বড় হয়েছিলো। গত ৯ বছর আগে তার বোনকে বিয়ে করে সেখানেই থাকছেন। সংসারে ৬ বছরের ছেলে সন্তান রয়েছে তার। তবে স্থানীয়রা জানান, মৃত মো. রুবেলের বিরুদ্ধে ইতিপূর্বেও একাধিক চুরির অভিযোগ রয়েছে।
এ ব্যাপারে রাঙ্গুনিয়া থানার ওসি সাব্বির মোহাম্মদ সেলিম জানান, তার লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে। এই ব্যাপারে তার স্ত্রী হত্যা মামলা দিয়েছেন। জড়িতদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা হবে বলে তিনি জানান।