‘চোখ নামিয়ে কথা বলুন চৌধুরী সাহেব। আমরা আপনার খাইও না, পরিও না।‘
আচ্ছা, চৌধুরী সাহেব চোখ নামাবেন কীভাবে? চোখ তো মুখমণ্ডলের যেখানে আছে, সবসময় সেখানেই থাকে। নামানো বা উঠানো যায় না। বড়জোর তিনি চশমা নামিয়ে কথা বলতে পারেন অথবা চোখের পাতাগুলো একটুখানি ডাউন করতে পারেন। মানুষ তার কোনো অঙ্গ বা প্রত্যঙ্গের রঙ নিজে নিজে পরিবর্তন করতে পারে না। তবুও বলি, চোখ রাঙিয়ে কথা বলবেন না।
কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হলো, কথাগুলো ম্যাকানিকালি যতোই ভুল হোক, মানুষ যা বুঝার তা ঠিকই বুঝে নেয়।
২. আমরা অন্যের হাতে হাত রেখে অনেক প্রতিজ্ঞা করি। সে প্রতিজ্ঞার পরণতি যাই হোক, হাতে হাত রাখা নিয়ে আমার কোনো প্রশ্ন নেই। কিন্তু মানুষ যখন চোখে চোখ রাখার কথা বলে, তখন জ্যামিতিটা মিলে না। আপনি যদি কারো চোখে চোখ রাখতে চান, তাহলে নাক সামলাবেন কী করে?
তবুও কবি গেয়েছেন, ‘চোখ যে মনের কথা বলে, চোখে চোখ রাখা শুধু নয়… “। যদিও চোখ কোনো কথা বলতে পারে না, শুনতেও পারে না।
৩. ‘ছেলেকে/মেয়েকে চোখে চোখে রেখো।‘ কন্টাক্ট লেন্স ও সুরমা, কাজল এসব প্রসাধন ছাড়া অন্য কিছু চোখে রাখা যায় কি না আমার জানা নেই। চশমা রাখা যায় নাক–কানে।
৪.‘বাঁশ বাগানের মাথার উপর চাঁদ উঠেছে ঐ’। উঠুক, কোনো সমস্যা নাই। চাঁদ দিগন্ত রেখার নিচে ছিল, সেটা ধীরে ধীরে বাঁশ বাগানের মাথার উপর উঠেছে, যদিও গাছের মাথা থাকে না। মাথা থাকে কেবল প্রাণীর।
শিশুর দাঁত উঠেছে বলতে বুঝি–আগে দাঁত ছিল না, এখন গজিয়েছে। অবশ্য শিশুর উপরের চোয়ালে দাঁত উঠে না, দাঁত চোয়াল থেকে নিচের দিকে নামে।
৫. কিছু মানুষ কোনো কোনো ঘটনা দেখেও না দেখার ভাণ করে। ওদেরকে নাকি চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিতে হয়।
আচ্ছা বলুন তো, যে মানুষ স্বাভাবিক চোখ দিয়েই দেখে না, তার চোখে যদি আঙুল দেওয়া হয়, তাহলে কি সে দেখতে পাবে? মোটেই না।
৬. বড় মুশকিলের মধ্যে আছি। যদি বলা হয়, কোনো মানুষের চোখ উঠেছে, তাহলে যুক্তিশাস্ত্রের বিধানমতে বুঝতে হবে– ঐ মানুষের আগে চোখ ছিলো না, এখন গজিয়েছে; অথবা আগে চোখ কপালের নিচে ছিল, এখন কপালে কিংবা মাথায় উঠে গেছে। কিন্তু হোমোস্যাপিয়েন্স এর বিবর্তনের ইতিহাসে এরকম কোনো ঘটনা নেই।
তবুও চক্ষু চিকিৎসক থেকে শুরু করে ম্যাংগো–পিপল পর্যন্ত সবাই বলছে, ‘আপনার চোখ উঠেছে।‘
আমার চোখ আগেও ছিল, এখনও আছে। যেখানে ছিল, সেখানেই আছে।
(এসব আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র, অপপ্রচার।)
আমি শুধু চাই, নির্মলেন্দু গুণের কবিতার মতো মায়াভরা কণ্ঠে–
কেউ অন্তত আমাকে জিজ্ঞেস করুক : ‘তোমার চোখ এতো লাল কেন?’