চোখের জল মানে না বাঁধ

সৈয়দা সেলিমা আক্তার | শুক্রবার , ২৩ ডিসেম্বর, ২০২২ at ৬:১৫ পূর্বাহ্ণ

মামা আপনাকে নিয়ে লিখতে বসে অক্ষরগুলো বেয়ে নেমে আসছে অশ্রু। অযুত জল আটকাতে পারি না চোখের নদীর। কোত্থেকে শুরু করি কীভাবে শুরু করি। মনে পড়ে সে ছেলেবেলায় ঘুম থেকে কোলে নিয়ে মুখ হাত ধোয়ানো। স্কুলে আমাদের নামিয়ে দিয়ে বাজারে যেতেন। যুদ্ধের অনেক আগে আপনি এসেছেন। আম্মার বিয়ের সময় থেকে ছিলেন। আমাদের ভাতের লোকমা তুলে দেওয়ার আগে প্লেটের বর্ডারে সাজানো থাকতো মাছের টুকরো।

এটা নানার এটা নানীর এটা মায়ের এটা বাবার এরকম করে করে মুখে তুলে দিতেন ভাত। ঈদে বেড়াতে গেলে আপনি সঙ্গী আমাদের। ঈদী গুলো জমা রাখতাম আপনার কাছে। কখনো ঝুড়ি কখনো ব্যাগে বাজার করতে যেতেন। নানার সময়ে পানি এনে দিতেন খুব ভোরে বাইরে থেকে। মায়ের কথাও শুনেছেন অক্ষরে অক্ষরে। আমি দ্বিতীয় ছড়া উৎসবে গিয়েছিলাম আপনার সাথে। বার্ষিক পরীক্ষা শেষ হলে আব্বার সাথে বাড়ি ও কুমিরাঘোনা যেমন যেতাম, তেমনি আরো দুটো জায়গা ছিলো নির্ধারিত ডাক্তার আপাদের বাড়ি খরনা ও আপনার বাড়ি খাইয়ারা সওদাগর পাড়া।

একটা ঘটনা মনে আছে সাদাতের আঙুলখাবার অভ্যাস ছিলো আপনাদের বাড়ির মোস্তফা নামে একজন আঙুল টেনে নিয়েছিলো, আপনার সে কি প্রচণ্ড রাগ! যখন ঔষধ বা ডাব লাগতো যত রাত হোক এনে দিতেন। নানী, আম্মার পাশাপাশি আপনার ওষুধ ইনসুলিন দেখাশোনা করতাম আমি। মা বাবা নানীর পাশাপাশি আপনার হাতে আমাদের বেড়ে ওঠা। আমি একবার হাসপাতালে ভর্তি ছিলাম। যা খাই সব বমি হয়ে যাচ্ছিলো।

আপনার হাতে হরলিক্স খাওয়ার পর বমি বন্ধ হয়ে যায় আমার। আমার নতুন ঘরে আপনি কিছুদিন থেকেও গেছেন। ফোনে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ ছিলো। মোটেও বাড়িতে যেতে দিতে মন চায়নি শুধু মামী মারা যাওয়াতে ইফাতের স্ত্রী-সন্তান একা বলে মনকে বেঁধে দিতে হয়েছে।

আসা-যাওয়ার মধ্যেই ছিলেন। কিছুদিন আগেও ফোনে কথা হয়েছে মা ভাই বোন সবার খবর নিলেন। সোনিয়া ঢাকা থেকে আসলে ফোনে দিতে বলেছিলেন। নানাকে দেওয়া ওয়াদা রেখেছিলেন মৃত্যুর আগ পর্যন্ত আমাদের সাথে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ ছিলো। ফোনে আপনার মৃত্যুর খবর পেয়ে ফেনী চলে গিয়েছিলাম শেষ বারের মত দেখতে। চোখের জল বাঁধ মানে না।

পূর্ববর্তী নিবন্ধসুদীর্ঘ প্রতীক্ষার এক রোমাঞ্চকর বিজয় উপাখ্যান
পরবর্তী নিবন্ধকোরআন তেলাওয়াতের মর্যাদা; একটি বিশ্লেষণ