মীরসরাই উপজেলার বারইয়ারহাট পৌর এলাকায় চেয়ারে পা তুলে বসা নিয়ে পরস্পর মারামারিতে গুরুতর জখম হয়ে তাহমিদ খাঁন (২০) নামে এক ছাত্রদল কর্মী প্রাণ হারিয়েছেন। নিহত তাহমিদ স্থানীয় কদমতলা মাদ্রাসার ৯ম শ্রেণির শিক্ষার্থী। সে কোরআনে হাফেজ ছিল। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একজন সক্রিয় কর্মী থেকে তাহমিদ সদ্য ছাত্রদলে যোগদান করেছিল। এর আগে সে ইসলামী ছাত্র আন্দোলন জোরারগঞ্জ থানার সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করে। পাশাপাশি নিরাপদ সড়ক আন্দোলন মীরসরাই উপজেলা শাখার যুগ্ম সদস্য সচিবের দায়িত্বও পালন করে তাহমিদ।
সরজমিনে প্রাপ্ত তথ্য–নিহতের পরিবার ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, বুধবার রাত ৯টার দিকে বারইয়ারহাট বাজারের ট্রাফিক মোড়ে স্থানীয় ছাত্রদল কর্মী যোবায়ের পা তুলে বসে চা খাচ্ছিল। এসময় স্থানীয় পৌর বিএনপি নেতা নজরুল ইসলাম লিটন বড় ভাইয়ের সামনে এভাবে পা তুলে চা খাচ্ছিস কেন বলে লাথি দিয়ে ফেলে দেয়। এতে যোবায়েরও ক্ষিপ্ত হয়ে লিটনকে পাল্টা হামলা করতে যায়। এসময় দুপক্ষে সংঘর্ষ বেঁধে যায়। আর এই সংঘর্ষে গুরুতর আহত হয় যোবায়েরের সঙ্গে থাকা ছাত্রদল কর্মী তাহমিদ খাঁন (২০), মোজাম্মেল (২০), আবিদ (২২) সহ অন্তত ৫ জন। ঘটনার খবর পেয়ে জোরারগঞ্জ থানা পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। ঘটনাস্থলে পৌঁছে বারইয়াহাট পৌর বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক দিদারুল আলম মিয়াজী আহতদের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করায়। কিন্তু তাহমিদের অবস্থা আশক্সক্ষাজনক দেখে তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে রাত ১টায় তাহমিদ চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করে।
বারইয়াহাট পৌর ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক মোহন দে জানান, সম্প্রতি তাহমিদ বারইয়ারহাট পৌরসভা ছাত্রদলের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হয়ে সভা সমাবেশে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করত।
এদিকে বারইয়াহাট পৌরসভার কদমতলা এলাকায় তাহমিদের বাড়িতে গেলে দেখা যায়, মা জোহরা বেগম একমাত্র পুত্র সন্তানকে হারিয়ে পাগল প্রায় হয়ে গেছেন। মায়ের একটাই দাবি, আমার একমাত্র বুকের ধন একমাত্র পুত্রের খুনির বিচার চাই। দুই বোন আকলিমা ও ফারিহা বলে, মাদ্রাসা থেকে পরীক্ষা দিয়ে এসে বন্ধুদের সাথে বাজারে গিয়েছিল। আমাদের ভাইটি আর ফিরে এলো না। আর কখনও আসবেও না।
বাবা আলমগীর হোসেন নিজের মালিকানাধীন চয়েস বাস চালান। তিনি একমাত্র পুত্রকে হারিয়ে শোকে পাথর হয়ে গেছেন। তিনি বলেন, আমার ছেলেটিকে ওরা এভাবে মেরে ফেলল? ও তো কোনো দোষ করেনি। যদি দোষ করে থাকে, তাহলে আমি বিচার করতাম। একদম শেষ করে দিতে হবে? আমি এখন কী নিয়ে বাঁচব?
এদিকে নিহতের মৃতদেহ পোস্টমর্টেম শেষে গতকাল সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় বারইয়াহাট পৌরসভার কদমতলার নিজ বাড়িতে এসে পৌঁছালে স্বজনদের আহাজারি ও কান্নায় পুরো এলাকায় শোকের ছায়া নেমে আসে। গতকাল রাত ১০টায় নামাজে জানাজা শেষে নিহত তাহমিদকে বাড়ির পার্শ্বের কদমতলা কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে বলে জানান তাহমিদের মামা ইউনুস ড্রাইভার।
এই বিষয়ে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি মনোনিত প্রার্থী নুরুল আমিন চেয়ারম্যান বলেন, নিহত ছেলেটি আমাদের একজন নতুন সমর্থক। সদ্য বারইয়ারহাট পৌর ছাত্রদলে যোগও দিয়েছে। আমি ঘটনার নিন্দা জানাচ্ছি। পাশাপাশি এই নির্মম হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে যারাই জড়িত তাদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানাচ্ছি।
ঘটনার বিষয়ে জোরারগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ কাজী নাজমুল হক বলেন, আমরা জেনেছি হামলাকারী ও হতাহতদের আগে থেকেই মহাসড়কের পূর্বপাড় ও পশ্চিম পাড় কেন্দ্রিক কিছু বিরোধ ছিল। আগেও তুচ্ছ বিষয় নিয়ে ওরা বিরোধে জড়াতো। নিহতের পরিবার থেকে এই বিষয়ে মামলা রুজু করা হবে এবং পুরো ঘটনা তদন্তপূর্বক আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
চট্টগ্রাম জেলা পুলিশের সহকারী পুলিশ সুপার (মীরসরাই সার্কেল) এএসপি নাদিম হায়দার চৌধুরী বলেন, তাহমিদ হত্যার পেছনে কারা জড়িত, কারা তাকে গুরুতর আঘাত করেছে, যার ফলে তার মৃত্যু হয় এ ব্যাপারে বিস্তারিত তদন্ত ও ফুটেজ বিশ্লেষণ করছি। পরবর্তীতে আমরা তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেব।












