নগরীর বহাদ্দারহাট এম এ মান্নান ফ্লাইওভারের র্যাম্পের দুটি পিলারে আদৌ ফাটল হয়েছে কীনা তা নিরপেক্ষ বিশেষজ্ঞ দল দিয়ে পরীক্ষা করবে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক)। এ লক্ষ্যে চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (চুয়েট) এবং সড়ক ও জনপথ বিভাগের (সওজ) সমন্বয়ে তদন্ত কমিটি করবে সংস্থাটি। কমিটিতে একজন করে উপযুক্ত প্রতিনিধি পাঠানোর অনুরোধ জানিয়ে আজ বৃহস্পতিবার চুয়েট ও সওজকে চসিকের চিঠি পাঠানোর কথা রয়েছে। কমিটিতে চসিক ও সিডিএর কাউকে রাখা হবে না। এদিকে কালুরঘাটমুখী আরাকান সড়কের সাথে সংযুক্ত র্যাম্পটিতে ‘হাইট ব্যারিয়ার’ (ভারী যান চলাচলে প্রতিবন্ধকতা) দিচ্ছে চসিক। গতকাল বিকেল থেকে এর নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে। গত সোমবার রাতে র্যাম্পটির দুটি পিলারে ফাটল দেখার খবর জানাজানি হয়। বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে আতংক দেখা দেয়। পরে ওইদিন রাত ১১টার দিকে সিটি মেয়রের নির্দেশে চসিকের দুইজন কাউন্সিলর ঘটনাস্থলে পৌঁছে সিএমপির সহযোগিতায় র্যাম্পটিতে যান চলাচল বন্ধ করে দেয়। এছাড়া নিচ থেকেও দোকানপাট সরিয়ে দেয়া হয়।
পরদিন মঙ্গলবার ‘ত্রুটি’ সংশোধনের অনুরোধ জানিয়ে ফ্লাইওভার নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠান সিডিএকে চিঠি দেয় চসিক। এছাড়া চসিকের প্রকৌশলীরা নির্মাণ বা ডিজাইনের ত্রুটির জন্য ফাটল হতে পারে বলেও মন্তব্য করেন। একইদিন সকালে সিডিএর সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলী বিভিন্ন গণমাধ্যমকে বলেছেন, র্যাম্পটি নির্মাণ করা হয়েছিল হালকা যানবাহন চলাচলের জন্য। কিন্তু ভারী যানবাহন চলাচল করার কারণে ফাটল দেখা দেয়। অবশ্য বিকেলে দাবি করেন, এটা ফাটল নয়। এটা ঢালাইকালীন চার্টারে ব্যবহৃত ফোম সরে যাওয়ার দাগ। সর্বশেষ গতকাল বুধবার পরিদর্শন শেষে র্যাম্পটির নকশা প্রণয়নকারী প্রতিষ্ঠান ডিজাইন প্ল্যানিং অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট (ডিপিএম) কনসালটেন্টস লিমিটেড জানায়, এটা ফাটল নয়। কনস্ট্রাকশন জয়েন্ট।
এ অবস্থায় গতকাল বিকেলে টাইগারপাসস্থ নগর ভবন কার্যালয়ে অনির্ধারিত এক বৈঠকে সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী চুয়েট ও সওজ দিয়ে প্রকৌশলগত দিক খতিয়ে দেখার নির্দেশনা দেন। এর প্রেক্ষিতে কমিটি করা হচ্ছে। বিষয়টি নিশ্চিত করে প্যানেল মেয়র গিয়াস উদ্দিন দৈনিক আজাদীকে বলেন, ফ্লাইওভারটি খুব গুরুত্বপূর্ণ। যানবাহন বন্ধ থাকায় মানুষের ভোগান্তি হচ্ছে। ফাটলের যে কথাটি বলা হচ্ছে সেটা টেকনিক্যাল বিষয়। তাই মেয়র মহোদয় প্রকৌশলীদের দিয়ে পরীক্ষা করাতে সিদ্ধান্ত দিয়েছেন।
চসিকের প্রধান প্রকৌশলী মো. রফিকুল ইসলাম মানিক দৈনিক আজাদীকে বলেন, ফাটল নিয়ে সিডিএর পক্ষ থেকেও দুইরকম বক্তব্য এসেছে। প্রথমে তারা ভারী গাড়ির চাপের জন্য ফাটলের কথা বলেছিল। পরে বলেছেন ফাটল না। তাই বিষয়টি নিরপেক্ষ তদন্তের সিদ্ধান্ত হয়েছে। মেয়র মহোদয়ও নির্দেশনা দিয়েছেন। এ প্রকৌশলী বলেন, চুয়েট এবং রোডস অ্যান্ড হাইওয়ের সমন্বয়ে আমরা একটি নিরপেক্ষ তদন্ত কমিটি করব। কমিটির জন্য উযুক্ত প্রতিনিধি প্রেরণের অনুরোধ জানিয়ে আমরা আগামীকাল (আজ) তাদের চিঠি পাঠাব। প্রতিষ্ঠান দুটি তাদের পছন্দ অনুযায়ী বিশেষজ্ঞ পাঠাবেন। আমরা নিজ থেকে বলব না, অমুককে পাঠাতে হবে। কারণ আমরা জানি না, সংশ্লিষ্ট বিষয়ে তাদের এক্সপার্ট কে? কাজেই যারা এক্সপার্ট তাদের মধ্যে কাউকে পাঠাবেন। কমিটিতে সিটি কর্পোরেশন ও সিডিএর কোনো প্রতিনিধি রাখা হবে না।
অবশেষে হাইট ব্যারিয়ার : ফ্লাইওভারটি উদ্বোধন করা হয়েছিল ২০১৩ সালের ১২ অক্টোবর। তখন র্যাম্পটি ছিল না। পরে ২০১৬ সালে কালুরঘাটমুখী র্যাম্পটি যুক্ত করার উদ্যোগ নেয় সিডিএ। নির্মাণ শেষে ২০১৭ সালের ডিসেম্বর মাসে সেটি চালু হয়। গতকাল পরিদর্শন শেষে ডিপিএম বিশেষজ্ঞ দল জানায়, র্যাম্পটি হালকা যানবাহন চলাচলের উপযোগী করে ডিজাইন করা হয়েছে। এটির প্রবেশ মুখে একটি ব্যারিয়ার স্থাপন করতে হবে।
এ বিষয়ে ডিপিএম’র প্রতিবেদনে বলা হয়, এটা লাইট ভেহিক্যালের (হালকা যানবাহন) জন্য ডিজাইন করা হয়েছে। এজন্যে র্যাম্পটি চালু করার সময় ওখানে একটি ‘বার’ লাগিয়ে তাতে ‘এখানে ভারী যানবাহন চলা নিষেধ’ লিখে দেয়ার পরামর্শ দেয়া হয়েছিল। উচ্চতারোধক এই ধরনের কোনো বার র্যাম্পের গোড়ায় পাওয়া যায়নি।
ডিপিএম’র পরামর্শ পাওয়ার পর চসিক সেখানে হাইট ব্যারিয়ার স্থাপনের উদ্যোগ নেয়। গতকাল বিকেলে উপস্থিত হয়ে দেখা গেছে, হাইট ব্যারিয়ার স্থাপনে প্রয়োজনীয় সরাঞ্জাম আনা হয়েছে। প্রাথমিক কাজও শুরু হয়েছে। হাইট ব্যরিয়ার স্থাপনের বিষয়টি চসিকের প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম মানিক আজাদীকে নিশ্চিত করেছেন।