নগরীর রিয়াজউদ্দিন বাজারে চুরির স্বীকারোক্তি আদায়ে দোকান কর্মচারী রাসেলের দুই হাত–পা জানালায় বেঁধে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ধরে পিটিয়েছিলেন দোকান মালিক আরাফাত ও তার ভাই আরমান। রাসেলের বাবা–মায়ের সামনে করা এ অমানুষিক কর্মকাণ্ডে সহযোগিতা করেছিল ভবনটির মালিক ও দোকানের কর্মচারীরা। গত শুক্রবার চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সরোয়ার জাহানের আদালতে রাসেল হত্যার ঘটনায় গ্রেপ্তার হওয়া তিন আসামির ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে এসব তথ্য উঠে এসেছে।
গত সোমবার কোতোয়ালী থানাধীন রিয়াজউদ্দিন বাজারে এসএস টাওয়ারে আরাফাত এন্ড ব্রাদার্স নামে একটি দোকানের গোডাউনে মালামাল চুরির অভিযোগে রমজান আলী রাসেল (১৯) নামে এক দোকান কর্মচারীকে বেঁধে পেটানো হয়। এ সময় ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। ওই ঘটনায় কোতোয়ালী থানায় নিহতের বাবা হাফাজ উদ্দিনের করা একটি মামলায় গ্রেপ্তার হয় দোকান মালিকের ভাই আরমান এবং জাহাঙ্গীর ও ইউনুছ নামে দুই কর্মচারী। তবে মূল অভিযুক্ত দোকান মালিক আরাফাত ঘটনার পর থেকেই পলাতক রয়েছেন।
গত শুক্রবার আদালতে দেয়া জবানবন্দিতে আসামিরা রাসেলকে শারীরিক নির্যাতনের পুরো ঘটনার বিবরণ দিয়েছেন। ঘটনার মূল অভিযুক্ত দোকান মালিকের বড় ভাই আরমান জবানবন্দিতে জানান, রাসেল মারা যাওয়ার আগের রাতে (২০ সেপ্টেম্বর) দোকানের গোডাউনে ঘুমাতে যাওয়ার সময় তার ছোট ভাই আরাফাত তাকে দোকানের দুধ চুরি হওয়ার কথা বলে। পরদিন সকাল সাড়ে ১১টার দিকে আরমান গোডাউনে গেলে জানালার সাথে রাসেলের দুই হাত–পা বাঁধা অবস্থায় দেখতে পায়। এ সময় আরাফাত ছাড়াও ওই গোডাউনে রাসেলের বাবা–মা, তার ভাই সাইফুল ও দোকান কর্মচারী জাহাঙ্গীরকে থাকতে দেখে। তার সামনেই রাসেলকে মারধর ও ভয়ভীতি দেখায় আরাফাত। একপর্যায়ে আরমানও চুরির স্বীকারোক্তি আদায়ে তার ভাইয়ের সাথে যোগ দিয়ে রাসেলকে লাঠি দিয়ে মারধর করে। ওইদিন আনুমানিক ১২টায় আরেক দোকান কর্মচারী ইউনুছ গোডাউনে প্রবেশ করে। একটি পর্যায়ে রাসেল দুধ চুরির কথা স্বীকার করে বলে জবানবন্দিতে আরমান জানিয়েছে।
আরমান জবাবনবন্দিতে আরও জানায়, ভবনের জমিদার জসিম জানতে পেরে পরে তিনি ঘটনাস্থলে আসেন। এ সময় দোকান মালিককে রাসেলের বাবা–মায়ের কাছ থেকে একটি স্ট্যাম্পে দস্তখত নেয়ার পরামর্শ দেয় জসিম। পরে জমিদার ও আরাফাতের পরামর্শে আরমান গোলাম রসুল মার্কেটে একটি স্ট্যাম্প কিনতে যায়। সেখান থেকে ফিরে আবারো গোডাউনের উদ্দেশ্যে রওনা হলে স্থানীয়রা রাসেল মারা গেছে বলে তাকে ও ইউনুছকে আটক করে মারধর করেন। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে তাদের উদ্ধার করে।
মামলায় আরেক অভিযুক্ত আরেক আসামি জাহাঙ্গীর ও ইউনূস জবানবন্দিতে ঘটনার কথা স্বীকার করেছেন।