চুরির মামলায় আদালতে হাজিরা দিতে এসে করত বাইক চুরি!

চোরচক্রের প্রধান রিপন দুই সহযোগীসহ গ্রেপ্তার ১৩, মোটরসাইকেল উদ্ধার

ঋত্বিক নয়ন | শুক্রবার , ৬ অক্টোবর, ২০২৩ at ৫:১১ পূর্বাহ্ণ

পটিয়ার বাসিন্দা রিপন। মোটরসাইকেল চুরি তার ‘বাঁ হাতের খেল’। মোটরসাইকেল দেখলেই তার চুরির নেশা মাথায় জেঁকে বসে। চুরির মামলায় হাজিরা কিংবা উকিলের সঙ্গে দেখা করতে চট্টগ্রামের কোর্ট বিল্ডিংয়ে গেলে, সেখান থেকেও চুরি করেন মোটরসাইকেল। অবস্থাটা এমন দাঁড়িয়েছে যে, যতবার তিনি কোর্টবিল্ডিং আসেন অন্তত একটা মোটরসাইকেল পার্কিং স্ট্যান্ড থেকে হাওয়া হয়ে যাবেই! গ্রেপ্তার হওয়ার পর নিজেই পুলিশকে জানিয়েছেন যে, কোর্টবিল্ডিংয়ে আসেন তিনি বাস, রিকশা বা সিএনজি টেক্সিতে চেপে। যাওয়ার সময় যান মোটরসাইকেল চালিয়ে। তার কাছে আছে বিশেষ কায়দায় তৈরি একটি ‘ম্যাজিক’ চাবি; যা দিয়ে মোটরসাইকেলের যেকোনো তালা খুলতে সময় লাগে ৪০ সেকেন্ড থেকে এক মিনিট।

চোরাই এই মোটরসাইকেল বিক্রি বা হাতবদলের ধরনটিও বেশ অদ্ভূত। রিপন চট্টগ্রাম থেকে চুরি করা মোটরসাইকেল কুমিল্লার আরেক চোর অভির কাছে বিক্রি করেন। কুমিল্লা থেকে ফেরার সময় সেখান থেকে মোটরসাইকেল চুরি করে সেটা বিক্রি করেন কক্সবাজারের মহেশখালীর সজীবের কাছে। আবার সেখান থেকে ফেরার সময় যে মোটরসাইকেলটি চুরি করেন, সেটি কুমিল্লায় নিয়ে বিক্রি করে দেন। ফলে এসব চোরাই মোটরসাইকেলের খোঁজ পাওয়াটাও কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। ৩২ বছর বয়সী রিপন পটিয়ার কোলাগাঁও ৩ নম্বর ওয়ার্ডের আবদুল আলীমের ছেলে। তার বর্তমান বাসস্থান বাকলিয়া এলাকার বাস্তুহারা চুনার গলি এনাম কলোনিতে। রিপনের বিরুদ্ধে নগরীর কোতোয়ালী, বাকলিয়া, পাঁচলাইশ, পটিয়া, ফেনী সদর থানা ও কুমিল্লার নাঙ্গলকোট থানায় আটটি মামলা রয়েছে।

সিএমপির অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার (দক্ষিণ) নোবেল চাকমা আজাদীকে জানান, দীর্ঘদিন ধরে বাইক চুরির সঙ্গে জড়িত এই চক্রের মূলহোতা রিপনসহ তিনজন অবশেষে ধরা পড়ে নগরীর কোতোয়ালী থানা পুলিশের ধারাবাহিক অভিযানে। তাদের কাছ থেকে তাৎক্ষণিক উদ্ধার করা হয় ১৩টি চোরাই মোটরসাইকেল। সংঘবদ্ধ এই চোরচক্র বরাবরই পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে একের পর এক বাইক চুরির ঘটনা ঘটিয়ে যাচ্ছিল। বুধবার (৪ অক্টোবর) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে নগরীর কোতোয়ালী এলাকার মেরিনার্স রোডে এস আলম বাস ডিপোর বিপরীত পাশ থেকে বাইক চোরচক্রের মূল হোতা রিপনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ওই সময়ই তার কাছ থেকে একটি চোরাই ‘অ্যাপাচি আরটিআর’ মোটরসাইকেল উদ্ধার করা হয়। কোর্ট বিল্ডিং এলাকাই শুধু নয়, নগরীর বাকলিয়া, পাঁচলাইশ, পটিয়া ছাড়াও এই চক্রটির বাইক চুরির নেটওয়ার্ক বিস্তৃত ফেনী ও কুমিল্লা পর্যন্ত।

ওসি কোতোয়ালী জাহিদুল কবীর আজাদীকে বলেন, গ্রেপ্তারকৃত রিপনকে জিজ্ঞাসাবাদের পর কোতোয়ালী থানা পুলিশের বিশেষ টিম দ্রুতই অভিযানে নামে কুমিল্লা চৌদ্দগ্রাম ও নাঙ্গলকোট এলাকায়। সেখান থেকে গ্রেপ্তার করা হয় চোরচক্রের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য কুমিল্লা চৌদ্দগ্রামের চিওড়া ডিমাতলীর মৃত মনু মিয়ার পুত্র আব্দুল কাদের জিলানী অভিকে। ২৬ বছর বয়সী এই যুবকের ডেরা থেকে তাৎক্ষণিক বিভিন্ন ব্র্যান্ডের ৮টি চোরাই মোটরসাইকেল উদ্ধার করা হয়। আব্দুল কাদের জিলানী অভির বিরুদ্ধে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম ও ফেনীর সোনাগাজী থানায় কমপক্ষে পাঁচটি মামলা রয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।

কোতোয়ালী থানা পুলিশ এরপর অভিযান চালায় কক্সবাজার জেলার মহেশখালী থানা এলাকায়। সেখানে ধরা পড়ে চোরচক্রের অন্যতম হোতা মহেশখালী উপজেলার মাতারবাড়ি মনহাজীর পাড়ার মোস্তাক আহমেদের পুত্র সজিবুল ইসলাম সজিব (২১)। তার কাছ থেকে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের ৪টি চোরাই মোটরসাইকেল জব্দ করা হয়।

জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তারকৃতরা জানায়, অতিরিক্ত লক দেওয়া থাকে না এবং দুর্বল লক থাকা মোটরসাইকেল টার্গেট করত চক্রটি। এরপর চক্রটি তাদের কাছে থাকা মাস্টার চাবি দিয়ে ৪০ থেকে ৫০ সেকেন্ডেই মোটরসাইকেল চুরি করে পালিয়ে যেত। পরবর্তীতে ৩০ থেকে ৫০ হাজার টাকায় চোরাই এসব মোটরসাইকেল বিক্রি করত তারা।

পূর্ববর্তী নিবন্ধদেবে গিয়ে রাস্তা দুইভাগ, বাঁশের সাঁকোতে ঝুঁকিপূর্ণ পারাপার
পরবর্তী নিবন্ধতারুণ্যের উচ্ছ্বাসের কবিতা উৎসব শুরু