লোহাগাড়ায় চুনতি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্যের ভেতর দিয়ে বয়ে যাওয়া রাতার ছড়া থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। যার ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বনের পরিবেশ, ধ্বংস হচ্ছে জীববৈচিত্র্য। অভয়ারণ্যের চুনতি বিটের আওতাধীন লুতু মিয়ার ঘোনা এলাকায় একাধিক স্থান থেকে এসব বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। জানা যায়, চুনতি অভয়ারণ্য দেশের অন্যতম প্রাচীন ও গুরুত্বপূর্ণ জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ এলাকা হিসেবে পরিচিত। সেই অভয়ারণ্যের ভেতর দিয়ে প্রবাহিত রাতার ছড়া থেকে চলছে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন। দিনে বালু উত্তোলন করে, রাতের আঁধারে ট্রাকে করে এসব বালু বিভিন্ন স্থানে পাচার করা হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নাকের ডগায় এমন বালু বাণিজ্য চললেও নেই কোনো দৃশ্যমান প্রতিরোধ। এর ফলে ছড়ার স্বাভাবিক প্রবাহ ব্যাহত হচ্ছে, পানি শুকিয়ে যাচ্ছে, আশপাশের গাছপালা হারাচ্ছে শেকড়ের শক্তি। সবচেয়ে ভয়াবহ প্রভাব পড়ছে অভয়ারণ্যের জীববৈচিত্র্যে। হাতি, হরিণ, বানর, বনমোরগ, গুইসাপসহ অনেক প্রাণী এখন নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছে। একটি অভয়ারণ্যের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে হলে এর জলাধার ও প্রাকৃতিক বাস্তুতন্ত্র রক্ষা করা অপরিহার্য। অথচ এখানেই চলছে পরিবেশ বিধ্বংসী তৎপরতা। পরিবেশবিদরা বলছেন, একটি অভয়ারণ্যের প্রাণ থাকে তার জলাধার ও প্রাকৃতিক পরিবেশে। সেখানে এমন অবৈধ বালু উত্তোলন শুধু আইন লঙ্ঘনই নয়, এটি ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্যও চরম হুমকি।
স্থানীয়রা জানান, একটি প্রভাবশালী মহল আইনের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে অভয়ারণ্যের লুতু মিয়ার ঘোনা এলাকায় ৩টি স্থান থেকে অবৈধভাবে অবাধে বালু উত্তোলন করে আসছে। বন আইন লঙ্ঘন করে যারা এই কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে চুনতির অভয়ারণ্যও একদিন হারিয়ে যাবে।
গত ১০ অক্টোবর অবৈধভাবে বালু পরিবহন করায় অভয়ারণ্য এলাকা থেকে একটি ডাম্পট্রাক আটক করে বনবিভাগ। বনবিভাগের দাবি–অভয়ারণ্য এলাকা সংলগ্ন কুলপাগলী ছড়া থেকে অবৈধভাবে উত্তোলিত বালু পরিবহনের সময় ডাম্পট্রাকটি জব্দ করা হয়েছে। কিন্তু স্থানীয়দের দাবি–আটককৃত ট্রাকটি অভয়ারণ্যের লুতু মিয়ার ঘোনা এলাকা থেকে অবৈধভাবে উত্তোলিত বালু পরিবহন করছিল।
গত মঙ্গলবার সরেজমিনে দেখা গেছে, চুনতি অভয়ারণ্যের ভেতর দিয়ে প্রবাহিত রাতার ছড়া থেকে অবৈধভাবে উত্তোলিত বালু পরিবহনের জন্য অভয়ারণ্যের ভেতর তৈরি করা হয়েছে অস্থায়ী রাস্তা। সে রাস্তায় যানবাহন চালানো সহজ করতে কেটে ফেলা হয়েছে বহু বনজ গাছ। সড়কটি এখন কর্দমাক্ত ও বিপজ্জনক। পায়ে হাঁটারও উপযুক্ত নয়। পাহাড়ি পরিবেশ ধ্বংস করে বালু মজুদের জন্য সমতল করা হয়েছে বিভিন্ন স্থান। এর ফলে শুধু গাছপালা নয়, ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে প্রাণীকূলের আবাসস্থল। এমন পরিস্থিতিতে জীববৈচিত্র্য ও স্থানীয় জনজীবন দুটোই পড়েছে হুমকির মুখে। এছাড়া বালু উত্তোলনকারীদের বিশ্রামের জন্য তৈরি করা টং ঘরে সন্ধ্যার পর মাদকসেবীদের আড্ডা বসে বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয়রা। অভয়ারণ্যের ভেতর এমন অবৈধ কর্মকাণ্ড চলতে থাকলে একসময় পুরো অঞ্চল জীবজন্তুশূন্য হয়ে পড়বে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নজরদারির ঘাটতি থাকায় অপরাধীরা দিন দিন বেপরোয়া হয়ে উঠছে বলে অভিযোগ পরিবেশবিদদের।
চুনতি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য বিটের বিট কর্মকর্তা চঞ্চল কুমার তরফদার জানান, খবর পেয়ে গত মঙ্গলবার বিকেলে ঘটনাস্থলে গিয়ে বালু উত্তোলনের স্থানে তৈরি করা টং ঘরগুলো ভেঙে দেয়া হয়েছে। এছাড়া রাতার ছড়া থেকে উত্তোলিত বালুগুলো জব্দ করার জন্য উপজেলা প্রশাসনকে অবহিত করা হয়েছে।
লোহাগাড়া উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মং এছেন জানান, বালু উত্তোলনের স্থান সরেজমিন পরিদর্শন করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।