চুনতি অভয়ারণ্যে ফিরল দেয়াঙ পাহাড়ের হাতির পাল

এলাকায় খুশির আমেজ, পাহারায় ৫০ সদস্যের ইআরটি টিম

এম. নুরুল ইসলাম, আনোয়ারা | সোমবার , ১৪ এপ্রিল, ২০২৫ at ৬:০৮ পূর্বাহ্ণ

আনোয়ারা দেয়াঙ পাহাড়ের হাতির পাল চুনতি অভয়ারণ্যে ফিরে গেছে। ৭ বছর ধরে কেইপিজেড ও আশপাশের এলাকায় হাতির পালটি তাণ্ডব চালিয়ে আসছিল। হাতিগুলো চলে যাওয়ার খবরে দুই উপজেলার দুই লক্ষাধিক ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের মাঝে আনন্দ, স্বস্তি দেখা দিলেও, হাতিগুলো আবারো ফিরে আসার ভয় যেন কাটছে না তাদের।

এই এলাকায় হাতির আক্রমণে প্রাণ হারিয়েছে ২৪ জন, আহত হয়েছেন অনেকে। আহতদের মধ্যে একজন বিদেশি বিনিয়োগকারীও রয়েছেন। হাতির কারণে নষ্ট হয়েছে লক্ষ লক্ষ টাকার ফসল ও স্থাপনা। হাতি সরাতে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ না নেয়ায় শেষ পর্যন্ত মাঠে নামে এলাকাবাসী। সড়ক অবরোধ, মানববন্ধন, মিছিল, সভাসমাবেশ করেন তারা। এমন পরিস্থিতিতে গত শনিবার রাতে ১টিসহ তিন দফায় হাতিগুলো দেয়াঙ পাহাড় থেকে তৈলারদ্বীপ সাঙ্গু নদী পার হয়ে চুনতি অভয়ারণ্যে ফিরে যাওয়ার খবরে আনোয়ারাকর্ণফুলীর দুই লাখের বেশি মানুষের মাঝে খুশির আমেজ ছড়িয়ে পড়েছে। এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ হাতিগুলো যাতে চুনতি অভয়ারণ্য থেকে আনোয়ারায় ফিরে আসতে না পারে সে ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করার দাবি জানিয়েছে। জানা যায়, হাতিগুলো চুনতি অভয়ারণ্যে ফিরে যেতে সহযোগিতা করেছেন আনোয়ারাকর্ণফুলীর এলিফ্যান্ট রেসপন্স টিম (ইআরটি) দলের সদস্যরা। বনবিভাগ জলদির রেঞ্জ কর্মকর্তা হাসানুজ্জামান শেখ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। স্থানীয় বাসিন্দা ও চট্টগ্রাম জেলা মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি ওসমান গনী জানান, বিগত দুই শত বছরের ইতিহাসে দেয়াঙ পাহাড়ের টিলা কিংবা এই এলাকায় কখনো হাতি বসবাস করার কথা আমাদের পূর্ব পুরুষের মুখে শুনিনি। আমরা নিজেরাও দেখিনি। কেইপিজেড প্রতিষ্ঠার পর সেখানে বড় বড় পানির লেক তৈরি হলে বিগত সাতআট বছর ধরে হাতিগুলো এসে সেখানে অবস্থান শুরু করে এবং আসা যাওয়া শুরু করে। এ অবস্থায় হাতিরগুলো সাধারণ মানুষের সামনে যেন যমদূত। হাতিগুলো চুনতি অভয়ারণ্যে তাদের নিজস্ব বাসস্থলে ফিরে যাওয়ার খবরটি আমাদের জন্য অত্যন্ত খুশির খবর। তবে আবার যে হাতিগুলো ফিরবে না সেটার তো কোন নিশ্চয়তা নেই। তাই এলাকার হাজার হাজার ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের পক্ষে আমাদের দাবি একটাইহাতিগুলো যাতে আর আনোয়ারায় ফিরে আসতে না পারে সে ব্যাপারে যেন বন বিভাগ যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করে।

বন বিভাগের বাঁশখালী জলদী রেঞ্জ কর্মকর্তা আনিসুজ্জামান শেখ জানান, দেয়াঙ পাহাড় কেইপিজেড এলাকায় ৫টি হাতি থাকার কথা শোনা গেলেও আমরা কখনো ৫টি পাইনি। আমরা ৪টি হাতি দেখতে পেয়েছি। হাতিগুলোর মধ্য দুই মাস আগে ১টি হাতি চুনতি অভয়ারণ্যে চলে আসে। এরপর আমাদের এলিফ্যান্ট রেসপন্স টিমের (ইআরটি) সহায়তায় ৩ দিন আগে দুটি হাতি আর গত শনিবার রাতে ১টি চুনতি অভয়ারণ্যে চলে আসে। পুরো বিষয়টি বন বিভাগের নজরে রয়েছে। হাতিগুলো যাতে আনোয়ারায় আর না ফিরে সে ব্যাপারে আমাদের এলিফ্যান্ট রেসপন্স টিম (ইআরটি) দলের ৫০ জন সদস্য সাঙ্গু নদের তীরে দিনে রাতে পাহারা বসিয়েছি।

কেইপিজেডের উপমহাব্যবস্থাপক মো. মুশফিকুর রহমান জানান, আমাদের গঠিত বন বিভাগ দ্বারা প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত এলিফ্যান্ট রেসপন্স টিম (ইআরটি) সদস্যরা জানিয়েছে হাতিগুলো তাদের বাসস্থান চুনতি অভয়ারণ্যে চলে গেছে। বিষয়টি বন বিভাগও নিশ্চিত করেছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধনির্বাচিত সরকারের বিকল্প আপনারা না : সালাহ উদ্দিন
পরবর্তী নিবন্ধসড়কে এক মাসে ৯০ দুর্ঘটনা, ৯০ মৃত্যু