চীন-তাইওয়ান উত্তেজনার পেছনে কী?

| শুক্রবার , ৫ আগস্ট, ২০২২ at ৭:৫৪ পূর্বাহ্ণ

তাইওয়ানের বেশিরভাগ নাগরিকই স্বশাসিত দ্বীপটির এখনকার স্থিতাবস্থা বজায় রাখার পক্ষে, যেখানে তাইওয়ান না স্বাধীন, না পরাধীন। চীনের হুমকি ধামকি উপেক্ষা করে তাইওয়ানে মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসির সফরের পর স্বশাসিত দ্বীপটিকে ঘিরে উত্তেজনা চরমে পৌঁছেছে। বিবিসি লিখেছে, বৈশ্বিক ও আঞ্চলিক নানান ইস্যুতে ওয়াশিংটন ও বেইজিংয়ের মধ্যে এমনিতেই টানাপোড়েন চলছিল, পেলোসির সফর তা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। বেইজিং-তাইপে বিরোধের কেন্দ্রে অবস্থান করছে তাইওয়ান নিয়ে চীন সরকারের দৃষ্টিভঙ্গি। খবর বিডিনিউজের।
চীন তাইওয়ানকে একটি বিচ্ছিন্ন প্রদেশ হিসেবে দেখে, সে হিসেবে, তাইওয়ান চীনেরই অংশ। অন্যদিকে তাইওয়ানের অনেক নাগরিকই স্বাধীনতা আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষিত হোক বা না হোক তাদের স্বশাসিত দ্বীপটিকে পৃথক দেশ মনে করেন।
ইতিহাস যা বলে

অস্ট্রোনেশিয়ান আদিবাসী লোকজনই জানামতে প্রথম তাইওয়ানে বসতি স্থাপন করে। এই অস্ট্রোনেশিয়ানরা এখনকার দক্ষিণ চীন থেকেই সেখানে গিয়েছিলেন বলে মনে করা হয়। চীনের রেকর্ডে দ্বীপটির প্রথম উল্লেখ পাওয়া যায় ২৩৯ খ্রিস্টাব্দে, সেসময় এক রাজা তাইওয়ানে একটি অভিযাত্রী দল পাঠান। ১৬২৪ থেকে ১৬৬১ সাল পর্যন্ত দ্বীপটি ডাচ উপনিবেশ ছিল, এরপর ১৬৮৩ থেকে ১৮৯৫ সাল পর্যন্ত এটি চীনের কিং রাজবংশের শাসনাধীনে ছিল।
কারা তাইওয়ানকে স্বীকৃতি দিয়েছে?

তাইওয়ান যে আসলে কী, তা নিয়ে মতভেদ ও বিভ্রান্তি আছে। দ্বীপটির নিজস্ব সংবিধান, গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত নেতৃত্ব, সশস্ত্র বাহিনীতে তিন লাখের মতো সক্রিয় সদস্য রয়েছে। কমিউনিস্টদের কাছে হারানো ভূমি ফিরে পাওয়ার আকাঙ্‌ক্ষায় চিয়াং কাই-শেকের নির্বাসিত সরকার একসময় পুরো চীনেরই কর্তৃত্ব দাবি করতো।
জাতিসংঘে চীনের আসনে তারাই প্রতিনিধিত্ব করতো, পশ্চিমা অনেক দেশই চীনের সরকার হিসেবে তাদেরই স্বীকৃতি দিয়েছিল। মূল ভূখণ্ডের শতকোটি মানুষের প্রতিনিধিদের বাদ দিয়ে তাইপেতে থাকা অল্প কিছু মানুষের প্রতিনিধিদের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি নিয়ে ১৯৭০-র দিক থেকে প্রশ্ন ওঠা শুরু করে। ১৯৭১ সালে জাতিসংঘও তাইওয়ানে থাকা চীন প্রজাতন্ত্রের সরকারের বদলে বেইজিংয়ের সরকারকে চীনের সরকার হিসেবে মেনে নেয়।
তাইওয়ান-চীনের সম্পর্ক

১৯৮০-র দিকে তাইওয়ান চীনে ভ্রমণ ও বিনিয়োগের নিয়মকানুন শিথিল করলে দুই পক্ষের সম্পর্ক ভালো হতে শুরু করে। ১৯৯১ সালে স্বশাসিত দ্বীপটি জানায়, বেইজিংয়ের গণপ্রজাতন্ত্রী চীন সরকারের সঙ্গে তাদের যুদ্ধ শেষ হয়েছে। চীন তখন তাইওয়ানকে তথাকথিত ‘এক দেশ, দুই ব্যবস্থার’ আওতায় একত্রিত হওয়ার প্রস্তাব দেয়, যে প্রস্তাব অনুযায়ী ১৯৯৭ সালে হংকংও মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে একত্রিত হয়।
তাইওয়ানের কাছে স্বাধীনতা কতটা গুরুত্ব বহন করে?

রাজনৈতিক দূরত্ব নিরসনে অগ্রগতি খূব একটা দেখা না গেলেও, তাইওয়ান-চীনের মধ্যে বাণিজ্য দিন দিনই বেড়েছে। ১৯৯১ সাল থেকে ২০২১ সালের মে পর্যন্ত চীনে তাইওয়ানের বিনিয়োগের পরিমাণ ১৯ হাজার ৩৫০ কোটি ডলারে দাঁড়িয়েছে বলে তাইওয়ানি কর্মকর্তাদের হিসাব বলছে। দ্বীপটির অনেক লোকজনই চীনের ওপর তাদের অর্থনীতির নিভর্রশীলতা নিয়ে চিন্তিত। অন্যরা আবার মনে করেন, বাণিজ্যিক সম্পর্ক যত ভালো হবে, চীনের সামরিক পদক্ষেপের সম্ভাবনাও তত কমবে। কেননা চীনকে তখন সামরিক পদক্ষেপের কারণে নিজের অর্থনীতির ক্ষতিটাও বিবেচনায় নিতে হবে।
বিতর্কিত এক বাণিজ্য চুক্তিকে কেন্দ্র করে ২০১৪ সালে তাইওয়ানে ‘সূর্যমুখী আন্দোলন’ও হয়েছে; দ্বীপটির ওপর চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাবের বিরোধিতায় সেবার শিক্ষার্থী ও আন্দোলনকর্মীরা তাইওয়ানের পার্লামেন্ট দখলেও নিয়ে নিয়েছিল।
এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র কেন?

ওয়াশিংটন বলছে, তারা ‘এক চীন’ নীতিতে অটল, যাতে বেইজিংয়ের সরকারকেই স্বীকৃতি দেওয়া হচ্ছে। তাদের আনুষ্ঠানিক কূটনৈতিক সম্পর্কও বেইজিংয়ের সঙ্গে, তাইপের সঙ্গে নয়। অন্যদিকে তাইওয়ান আক্রান্ত হলে তাদের পাশে দাঁড়ানোর প্রতিশ্রুতিও আছে তাদের।
যে কারণে তারা তাইওয়ানকে নানান সামরিক সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে। চীন তাইওয়ানে আক্রমণ করে বসলে তা ‘গভীর উদ্বেগের’ হবে বলে সতর্কও করেছে তারা। স্বশাসিত দ্বীপটি আক্রান্ত হলে যুক্তরাষ্ট্র তাদের সুরক্ষায় সামরিক শক্তি নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়বে কিনা, এ বছরের মে মাসে এমন এক প্রশ্নের জবাবে ‘হ্যাঁ’ বলেছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধএকই সঙ্গে প্লেন ওড়ালেন পাইলট মা-মেয়ে, মুগ্ধ নেট দুনিয়া
পরবর্তী নিবন্ধচট্টগ্রামে কমেছে করোনা সংক্রমণ, নতুন শনাক্ত ৯ জন