খুব বেশি দিন আগের কথা নয়, যখন চীন নিজেই বিদেশী অর্থসাহায্য নিতো। তবে এখন সবকিছুই উল্টে গেছে। এখন চীনের কাছ থেকে উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য ঋণ নিচ্ছে দেড় শতাধিক দেশ। নতুন এক হিসেবে বলা হচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্র এবং বিশ্বের অন্য প্রধান শক্তিধর দেশগুলো অন্য দেশকে উন্নয়নের জন্য যে অর্থ সহায়তা দিচ্ছে, তার কমপক্ষে দ্বিগুণ বেশি অর্থ দিচ্ছে চীন। যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়া অঙ্গরাজ্যের উইলিয়াম এ্যাণ্ড মেরি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা কেন্দ্র এইডডাটার এক জরিপে দেখা যাচ্ছে, ১৮ বছর সময়কালে চীন মোট ১৬৫টি দেশে মঞ্জুরি বা ঋণ হিসেবে ৮৪,৩০০ কোটি ডলার পরিমাণ অর্থ দিয়েছে এবং তা খরচ হয়েছে ১৩,৪২৭টি অবকাঠামো প্রকল্পে। এই অর্থের অধিকাংশই হচ্ছে চীনের বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় ব্যাংক থেকে আসা, এবং এগুলো দেয়া হয়েছে চড়া সুদে ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ ঋণ’ হিসেবে।
সমালোচকরা আশংকা প্রকাশ করেন, চড়া সুদের যেসব ঋণ থেকে চীনের এসব প্রকল্পের অর্থায়ন হচ্ছে তা অনেক দেশের জনগণের অগোচরেই তাদের কাঁধে বিশাল ঋণের বোঝা চাপিয়ে দিচ্ছে। এইডডাটার নির্বাহী পরিচালক ব্র্যাড পার্কস বলছেন, কোন এক বছরে চীনের গড় আন্তর্জাতিক অর্থায়নের পরিমাণ হচ্ছে ৮,৫০০ কোটি ডলার। এর সাথে তুলনায় দেখা যাচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্র প্রতি বছর বৈশ্বিক উন্নয়ন কার্যক্রমে যে সহায়তা দিচ্ছে তার পরিমাণ হলো মাত্র প্রায় ৩,৭০০ কোটি ডলার। অতীতে এক সময় আফ্রিকান দেশগুলোকে ঋণের ফাঁদে ফেলার জন্য দোষ দেয়া হতো পশ্চিমা দেশগুলোকে। চীন এসব দেশকে অর্থ ঋণ দিচ্ছে অন্য কায়দায়। এখানে এক দেশ থেকে অন্য দেশে মঞ্জুরি বা ঋণের মাধ্যমে প্রকল্প অর্থায়ন করা হচ্ছে না। বরং চীন যে ঋণ দিচ্ছে তার প্রায় সবটাই আসছে রাষ্ট্রীয় ব্যাংকের ঋণ হিসেবে। গ্রহীতা দেশের সরকারি ঋণের যে আনুষ্ঠানিক বিবরণ থাকে, তাতে চীন থেকে নেয়া এসব ঋণের কথা উল্লেখ করা হয় না। কারণ চীনের রাষ্ট্রীয় ব্যাংকগুলোর সাথে করা এসব চুক্তিতে অনেক সময়ই কেন্দ্রীয় সরকারের কোন প্রতিষ্ঠানের নাম থাকে না।
ফলে এসব চুক্তি থেকে যায় সরকারের দলিলপত্রের বাইরে। তা ছাড়া এতে গোপনীয়তা সংক্রান্ত যেসব ধারা থাকে তার ফলেও সরকার জানতে পারে না ঋণ নেবার সময় বন্ধ দরজার ওপাশে ঠিক কী সমঝোতা হয়েছিল।
এইডডাটা বলছে, এই ধরনের অজানা ঋণের পরিমাণ ৩৮.৫০০ কোটি ডলার পর্যন্ত হতে পারে। চীন যে সব রাষ্ট্রীয় উন্নয়ন ঋণ দেয়, তার বিপরীতে অনেক সময় অস্বাভাবিক ধরনের কোল্যাটেরাল দাবি করা হয়। ইদানিং প্রায়ই চীনা ঋণ গ্রহীতাকে প্রাকৃতিক সম্পদ বিক্রি করে পাওয়া নগদ অর্থ দেবার অঙ্গীকার করতে হচ্ছে।
তবে চীন হয়তো শিগগীরই ঋণের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতার সম্মুখীন হতে পারে। জুন মাসে জি-সেভেন জোটের সভায় ঘোষণা করা হয় যে চীনের প্রভাব মোকাবিলার জন্য জি-সেভেন একটি পরিকল্পনা করেছে; যার আওতায় বৈশ্বিক অবকাঠামো প্রকল্পে অর্থায়ন করা হবে। তবে এ প্রকল্পগুলো আর্থিক ও পরিবেশগত দিক থেকে টেকসই কিনা তা দেখা হবে।