শীর্ষ চীনা ভিন্নমতাবলম্বী, শিল্পী ও চলচ্চিত্রনির্মাতা আই ওয়েইয়েই বলেছেন, বিশ্বে বেইজিংয়ের প্রভাব এত ব্যাপক হয়েছে যে একে আর এখন কার্যকরভাবে থামানো যাবে না। তিনি বলেন, ‘চীনকে নিয়ে পশ্চিমের আরও কয়েক দশক আগেই উদ্বিগ্ন হওয়া দরকার ছিল। ইতোমধ্যেই কিছুটা দেরি হয়ে গেছে, কেননা চীনে পশ্চিমারা যে শক্তিশালী ব্যবস্থা দাঁড় করিয়েছে, এখন তা কেটে ফেলতে চাইলে সেটি গভীরভাবে আঘাত করবে। এ কারণেই চীন বেশ উদ্ধত। খবর বিডিনিউজের।
সুপরিচিত এ শিল্পী চীনের ব্যাপারে তার আগের অবস্থানেই অটল আছেন বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে বিবিসি। ২০০৮ সালের বেইজিং অলিম্পিকের জন্য বার্ড’স নেস্ট স্টেডিয়ামের নকশা করে বিশ্বজুড়ে খ্যাতি অর্জন করেছিলেন। চীনের সরকারের বিরুদ্ধে কথা বলে ব্যাপক ঝামেলায় জড়িয়ে পড়ার পর ২০১৫ সালে তিনি ইউরোপ চলে যান। প্রথমে জার্মানির বার্লিনে বসবাস করলেও গত বছর থেকে তিনি যুক্তরাজ্যের ক্যামব্রিজে থাকছেন।
আই ওয়েইয়েই’র ধারণা, চীন এখন তার বিপুল অর্থনৈতিক শক্তিকে কাজে লাগিয়ে বিশ্বজুড়ে তার রাজনৈতিক প্রভাব চাপিয়ে দিচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় সামপ্রতিক বছরগুলোতে চীন অনেক বেশি আগ্রাসীও হয়ে উঠেছে। এক দশক আগেও বিশ্বজুড়ে চীন নিজেদের একটা ‘বিনয়ী চেহারা’ হাজির করতো। দেশটির সরকারের আনুষ্ঠানিক স্লোগানও ছিল– ‘শক্তি লুকিয়ে রাখো, অনুকূল সময়ের অপেক্ষা করো’। সেসময় মন্ত্রীরা যে দিকটির উপর জোর দিতেন তা হল– চীন এখনও একটি উন্নয়নশীল দেশ এবং পশ্চিমাদের কাছ থেকে এর এখনও অনেক কিছু শেখার আছে। শি জিনপিং ক্ষমতায় আসার পর চীনের সুর বদলে যায়। ২০১২ সালে শি চীনের কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক হওয়া পরের বছর চীনের প্রেসিডেন্ট হন। এরপর থেকে চীনের আগের ‘বিনয়ী চেহারা’ উধাও হয়ে যায়। তাদের নতুন স্লোগান হয়– ‘অর্জনের জন্য সংগ্রাম’। এক হিসেবে চীন এখনও একটি উন্নয়নশীল দেশ, কেননা এর প্রায় ২৫ কোটি বাসিন্দা এখনও দারিদ্র্যসীমার নিচে অবস্থান করছে। এর মধ্যেই দেশটি এখন বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি হয়ে দাঁড়িয়েছে। আগামী এক দশকে কিংবা তারও আগে চীনের অর্থনীতি যুক্তরাষ্ট্রকে ছাড়িয়ে যাবে বলেই ধারণা করা হচ্ছে।
এমন এক সময়ে বিশ্বজুড়ে চীনের প্রভাব বাড়ছে, যখন যুক্তরাষ্ট্রের কর্তৃত্ব প্রতিদিনই একটু একটু করে কমছে। বেইজিংয়ের প্রভাবও এ কারণেই গ্রিনল্যান্ড থেকে ক্যারিবীয় অঞ্চল, পেরু থেকে আর্জেন্টিনা, দক্ষিণ আফ্রিকা, জিম্বাবুয়ে, পাকিস্তান থেকে মঙ্গোলিয়া পর্যন্ত প্রতিদিনই আরও বেশি দৃশ্যমান হচ্ছে। বারবাডোজ যে সমপ্রতি তাদের রাষ্ট্রপ্রধানের স্থান থেকে রানিকে বাদ দিয়েছে এ জন্যও চীনকে দায়ী করা হচ্ছে।