চিন্ময়সহ ৩৮ জনকে আসামি করে চার্জশিট

আইনজীবী আলিফ হত্যা

আজাদী প্রতিবেদন | বুধবার , ২ জুলাই, ২০২৫ at ৬:২৩ পূর্বাহ্ণ

আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফ হত্যা মামলায় সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় দাসসহ ৩৮ জনকে আসামি করে চার্জশিট দিয়েছে পুলিশ। গতকাল মঙ্গলবার চট্টগ্রামের মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের প্রসিকিউশন শাখায় মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও নগর পুলিশের সহকারী কমিশনার (কোতোয়ালী জোন) মো. মাহফুজুর রহমান এ চার্জশিট দাখিল করেন।

চার্জশিটভুক্ত বাকি ৩৭ জন হলেন চন্দন দাশ মেথর, রিপন দাশ, রাজীব ভট্টাচার্য্য, শুভ কান্তি দাশ, আমান দাশ, বুঞ্জা, রনব, বিধান, বিকাশ, রমিত প্রকাশ রমিত দাস, রুমিত দাশ, নয়ন দাশ, ওমকার দাশ, বিশাল, লালা দাশ, সামীর, সোহেল দাশ, শিব কুমার, বিগলাল, পরাশ, গণেশ, ওম দাস, পপি, অজয়, দেবী চরণ, দেব, জয়, লালা মেথর, দুর্লভ দাশ, সুমিত দাশ, সনু দাস, সকু দাশ, ভাজন, আশিক, শাহিত, শিবা দাস ও দ্বীপ দাশ। এদের মধ্যে চিন্ময় দাশ, চন্দন দাশ, রিপন দাশ, রাজীব ভট্টাচার্য্য, আমান দাশ, বুঞ্জা, রনব, বিধান, বিকাশ, রমিত, রুমিত, নয়ন, সামীর, শিব কুমার, ওম দাস, অজয়, দেবী চরণ, দুর্লভ, সুমিত দাশ ও সনু দাস বর্তমানে কারাগারে আছেন। বাকিরা পলাতক।

আদালত সূত্র জানায়, আলিফ হত্যা মামলাটি হয়েছিল ৩১ জনের বিরুদ্ধে। এর মধ্যে গগন দাশ, বিশাল দাশ ও রাজকাপুর মেথরকে চার্জশিটে রাখা হয়নি। এ তিনজনের বিষয়ে চার্জশিটে বলা হয়েছে, ঘটনার সাথে এ তিনজনের জড়িত থাকার বিষয়ে তথ্যপ্রমাণ পাওয়া যায়নি। বাকি থাকে ২৮ জন। ২৮ জনের সাথে চিন্ময় দাশসহ ১০ জনকে যুক্ত করে মোট ৩৮ জনের বিরুদ্ধে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা চার্জশিট দাখিল করেছেন। ঘটনার সাথে চিন্ময় দাশসহ এ ১০ জনের জড়িত থাকার বিষয়টি তদন্তে উঠে এসেছে।

আদালত সূত্র আরো জানায়, মামলার তদন্তকালীন সুকান্ত নামে অপর একজনের নাম ওঠে। কিন্তু তদন্তে সুকান্তের সঠিক নামঠিকানা পাওয়া যায়নি। এজন্য চার্জশিটে তাকে রাখা হয়নি।

চার্জশিটে বলা হয়, রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় গ্রেপ্তার করার পর চিন্ময় দাশকে চট্টগ্রামের মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে তোলা হয়। সেখানে জামিন নামঞ্জুর হলে তিনি সমর্থকদের উত্তেজিত করেন এবং যে সকল আইনজীবী তার জামিনের বিরোধিতা করেছেন তাদের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন তিনি। যখন পুলিশ প্রিজন ভ্যানে করে তাকে নিয়ে যাচ্ছিলেন তখন তার নির্দেশে ও উস্কানিতে প্রিজন ভ্যানের সামনে শুয়ে জয় শ্রীরাম ধ্বনি দিয়ে উশৃঙ্খল স্লোগান দেওয়া হয়। প্রিজন ভ্যানের ভেতর থেকে উত্তেজনামূলক বক্তব্য দিয়েছেন তিনি। এরই ধারাবাহিকতায় ৬০০ থেকে ৭০০ সমর্থক আদালত পাড়ায় নৈরাজ্য সৃষ্টি করেন।

উশৃঙ্খল ইসকন সদস্যরা তাকে ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন উল্লেখ করে চার্জশিটে বলা হয়, পুলিশ সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করলে পুলিশের ওপর আক্রমণ করা হয়। এরপর লাঠিচার্জ করলে ত্রাস সৃষ্টি করে আদালত পাড়া ত্যাগ করার সময় চিন্ময়ের সমর্থকরা আইনজীবী, বিচারপ্রার্থী ও বিচারকের গাড়িসহ ২০ থেকে ২৫টি গাড়ি ভাঙচুর করা হয়। দোকানপাট ভাঙচুর করা হয়। এমনকি সাধারণের ওপর হামলা করা হয়।

চার্জশিট বলা হয়, একপর্যায়ে ইসকন সন্ত্রাসীদের ধাওয়া দিলে ত্রাস সৃষ্টিকারী ও হামলাকারীরা আদালত পাড়ার অদূরের রঙ্গম হলের গলির মুখে চলে যায়। ওই সময় তথা বিকাল সাড়ে ৩টা কিংবা ৪টার দিকে আদালতের কার্যক্রম শেষে বাসায় যাওয়ার উদ্দেশ্যে রঙ্গম হলের গলির মুখে দাঁড়িয়েছিলেন আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফ। সেখান থেকে তাকে ৩০ থেকে ৪০ জন ইসকন সন্ত্রাসী অতর্কিতভাবে আলিফকে হত্যার উদ্দেশ্যে টেনেহেঁচড়ে মেথরপট্টির দিকে নিয়ে যায়। তখন আইনজীবীসহ সাধারণরা আলিফকে উদ্ধার করার জন্য সেখানে গিয়ে ধাওয়া দিলে তারা আলিফকে ছেড়ে দিয়ে মেথরপট্টির ভেতরে চলে যায়। এ সময় আলিফকে নিয়ে আসার সময় ইসকন সদস্যরা কিরিচ, রামদা, বঁটি, ক্রিকেট খেলার স্ট্যাম্প, গাছের বাটাম, লাঠি, লোহার রড, ছুরি, পাথর, হকিস্টিক ও ত্রিশূল দিয়ে আলিফসহ সবার ওপর আক্রমণ করা হয় এবং আলিফকে পায়ে আঘাত করে ফেলে দেওয়া হয়। আলিফ উঠে দাঁড়ানোর চেষ্টা করলে আসামি রিপন দাশ তার হাতে থাকা ধারালো বঁটি দিয়ে ঘাড়ে পরপর দুটি কোপ মারেন। চন্দন দাশ মেথর কিরিচ দিয়ে পেটে ও ঘাড়ে কোপ মারেন। রাজীব ভট্টাচার্য্যও কিরিচ দিয়ে আলিফের শরীরে কোপ মারেন। শিবা, সুমিত, সোহেল, অজয়, ওমকার, রুমিত, দেবী, বিকাশ লাঠি দিয়ে আলিফকে আঘাত করেন। বুঞ্জা বাটাম দিয়ে আলিফকে আঘাত করেন। অন্য আসামিরাও বিভিন্নভাবে আলিফকে আঘাত করেন। এসবের ফলে আলিফের দেহ যখন নিথর হয়ে আসছিল তখন ধারালো অস্ত্রধারী হামলাকারী নারকীয় উল্লাস প্রকাশ করেন।

নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (প্রসিকিউশন) মফিজ উদ্দিন দৈনিক আজাদীকে বলেন, আলিফ হত্যা মামলায় চিন্ময় দাশসহ ৩৮ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করেছে তদন্ত কর্মকর্তা। যথাসময়ে এ চার্জশিট আদালতের নজরে দেওয়া হবে।

বাদীর আইনজীবী মো. রায়হানুল ওয়াজেদ চৌধুরী বলেন, চার্জশিট দাখিল হয়েছে তা শুনেছি। আমরা চার্জশিট পর্যালোচনা করে আদালতে আমাদের বক্তব্য উপস্থাপন করব।

নগরীর নিউ মার্কেট মোড়ে জাতীয় পতাকা অবমাননার অভিযোগে গত বছরের ৩১ অক্টোবর চিন্ময় দাশের বিরুদ্ধে একটি রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা হয়। দণ্ডবিধির ১২০()/১২৪()/১৫৩()১০৯/৩৪ ধারায় মামলাটি দায়ের হয়। কোতোয়ালী থানায় দায়ের হওয়া উক্ত রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় গত বছরের ২৫ নভেম্বর ঢাকা থেকে চিন্ময়কে গ্রেপ্তার করা হয়। পরদিন ২৬ নভেম্বর তাকে চট্টগ্রামের আদালতে হাজির করা হয়। তার পক্ষের আইনজীবীরা তার জামিন চেয়ে সেদিন একটি আবেদন করেন। শুনানি শেষে চট্টগ্রামের মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট কাজী শরীফুল ইসলাম জামিন নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। এ নিয়ে সংঘাত হয় এবং আইনজীবী আলিফ খুন হন।

আদালত পাড়ায় ওইদিনের সংঘাত ও খুনের ঘটনায় সাতটি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে কোতোয়ালী থানায় ৬টি ও আদালতে একটি মামলা দায়ের হয়। পুলিশ জানায়, কোতোয়ালী থানায় দায়ের হওয়া মামলাগুলোর মধ্যে পুলিশ বাদী হয়ে ৭৯ জনের নামে তিনটি, আলিফের বাবা বাদী হয়ে ৩১ জনের নামে একটি (হত্যা মামলা) ও তার ভাই বাদী হয়ে ১১৬ জনের নামে একটি ও মোহাম্মদ উল্লাহ নামে এক ব্যবসায়ী ২৯ জনের নামে একটি মামলা দায়ের করেন। এছাড়া মো. এনামুল হক নামে একজন বাদী হয়ে ১৬৪ জনের নামে আদালতে আরো একটি মামলা দায়ের করেন। আদালত সেটি কোতোয়ালী থানাকে তদন্তের নির্দেশ দেয়।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ২ জুলাই : দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত রাজপথে থাকার ঘোষণা
পরবর্তী নিবন্ধগাড়ির বয়সসীমা নির্ধারণ, আসছে ক্র্যাশ প্রোগ্রাম