চিন্তায় চেতনায় রুচিশীল ব্যক্তিত্ব

গৌতম কানুনগো | শনিবার , ৪ নভেম্বর, ২০২৩ at ৫:৪২ পূর্বাহ্ণ

বাংলা সাহিত্য ও সংস্কৃতির ভুবনের একজন ঋদ্ধ মানুষ ড. মাহবুবুল হক। চলনে বলনে পোশাকে আশাকে চিন্তায় চেতনায় একজন পরিশীলিত রুচিশীল ব্যক্তিত্ব। চট্টগ্রাম একাডেমিসহ বহুসংগঠনের আয়োজনে আলোচনা সভায় তাঁর বক্তব্য শুনেছি এবং দেখেছি তাঁর অসাধারণ উপস্থাপনার ভঙ্গিমা। অনেক বিচিত্র বিষয়ে তার পঠনের ব্যাপ্তি আমাকে অভিভূত করে। মাহবুবুল হকের জন্ম ১৯৪৮ এ ফরিদপুরে। বাবার চাকরিসূত্রে চট্টগ্রাম আসা এবং স্থায়ী ভাবে বসবাস। বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে অধ্যাপনার পাশাপাশি দীর্ঘকাল ধরে কাজ করছেন বাংলা ভাষা নিয়ে। ষাট এর দশকে চট্টগ্রামে প্রগতিশীল ছাত্র রাজনীতির একজন নিরলস কর্মী ছিলেন। বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের তিনি ছিলেন একজন সক্রিয় সংগঠক। চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুল থেকে ১৯৬৪ সালে কৃতিত্বের সাথে প্রথম বিভাগে এস.এস.সি ১৯৬৬ সালে এইচ এস সি এবং একই কলেজ থেকে ১৯৬৯ সালে দ্বিতীয় শ্রেণিতে প্রথম স্থান অধিকার করে বাংলায় স্নাতক সম্মান ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৭০ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা এম.এ তে প্রথম শ্রেণিতে তৃতীয় হন। এখান থেকেই ড. মনিরুজ্জামানের তত্ত্বাবধানে পি.এইচ.ডি অর্জন করেন ১৯৯৭সালে। তাঁর গবেষণার বিষয় ছিলো :’তিনজন আধুনিক কবি: সমর সেন, সুভাষ মুখোপাধ্যায় ও সুকান্ত ভট্টাচার্য। স্কুলজীবন থেকেই লেখালেখির শুরু। অষ্টম শ্রেণিতে ‘নবদিগন্ত’, নবম ও দশম শ্রেণিতে চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুল বার্ষিকী সম্পাদনার মাধ্যমে সম্পাদনার হাতেখড়ি। ১৯৬৪ তে দ্বিমাসিক সাহিত্যপত্র ‘কলরোল’ সম্পাদনা করেন। ১৯৬৭তে ‘মিছিল, ‘অন্বেষা’, ‘পদাতিক’, ‘রবিকরে কবিক্‌ণ্ঠ’; ১৯৭৯ তে ‘সাহসী ঠিকানা’, ১৯৮১ তে ‘চিটাগাং গাইড’, ১৯৯৫ এ ‘হাজার বছরের চট্টগ্রাম’, ১৯৯৭ ও ২০০১ এ ‘আজিকে এ আকাশতলে’ সম্পাদনা করেন। আবুল ফজল, আবদুল হক চৌধুরী, ওহীদুল আলম প্রমুখের প্রয়াণ স্মরণপত্র সহ বহু স্মরণিকা ও সংকলন সম্পাদনার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর মাহবুবুল হক দেশ গড়ার গঠনমূলক কাজে সংগঠক হিসাবে কাজ করায় ব্রতী হন। সে সময়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদানের আমন্ত্রণ পেলেও তিনি তাতে সাড়া দেন নি। বাংলা একাডেমির গবেষক হিসাবে মনোনয়ন পেলেও যোগ দেন নি তাতে। ১৯৭৬এ পিতার আকস্মিক মৃত্যুর পর পরিবারের হাল ধরতে তিনি চাকরি নিতে বাধ্য হন এবং পেশা হিসাবে শিক্ষকতাকেই বেছে নেন। কর্মজীবনের শুরু ১৯৭৮ সাল, রাংগুনীয়া কলেজে বাংলা বিভাগের প্রভাষক হিসাবে। ১৯৮১ সালে যোগদান করেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে। পরে যোগ দেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে। বহুমাত্রিক প্রতিভার অধিকারী মাহবুবুল হক একুশে পদক, বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার, নজরুল পদক, ফিলিপস পুরস্কার, মুক্তিযুদ্ধ পদক, মধুসূদন পদক, চট্টগ্রাম একাডেমি পুরস্কার এবং একুশে পদক সহ অসংখ্য পুরস্কার,পদক ও সম্মাননা অর্জন করেছেন। তাঁকে জানাই বিনম্র শ্রদ্ধা আর অফুরন্ত ভালোবাসা। প্রার্থনা করি তাঁর সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘজীবন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধরণেশ দাশগুপ্ত : এক অনন্য প্রগতিশীল সত্তা
পরবর্তী নিবন্ধআসুন স্রষ্টার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই