চিনুয়া আচিবি – নাইজেরিয়ার কথাশিল্পী, কবি, চিন্তক ও শিক্ষাবিদ। মূলত ঔপন্যাসিক হিসেবে খ্যাতিমান হলেও কবি হিসেবেও তাঁর জনপ্রিয়তা কম নয়। আফ্রিকার আধুনিক সাহিত্যের জনক হিসেবে আদৃত তিনি।
সামাজিকভাবে ঐতিহ্যশালী ও মর্যাদাবান একটি পরিবারে চিনুয়ার জন্ম ও বেড়ে ওঠা। ১৯৩০ সালের ১৬ নভেম্বর তাঁর জন্ম। মাধ্যমিক পরীক্ষায় বিশেষ কৃতিত্ব অর্জন করে চিকিৎসা বিজ্ঞানে ভর্তি হন তিনি। কিন্তু এক বছর পর তা ছেড়ে দিয়ে ভর্তি হন ইংরেজি সাহিত্যে, ইবাদান বিশ্ববিদ্যালয়ে। এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকেই ১৯৫৩ সালে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন আচিবি। ঔপনিবেশিক শৃঙ্খল ও শোষণ থেকে মুক্তির রাজনৈতিক সচেতনতার প্রত্যয় তাঁর জীবনে আসে এখানে পাঠের সময়। সাহিত্যকে তিনি সমাজ বদলের হাতিয়ার হিসেবে গ্রহণ করেছিলেন। আচিবি বিশ্বাস করতেন, মানুষের কল্যাণে শিল্প, শিল্পের কল্যাণে মানুষ নয়। সাহিত্য ও বুদ্ধিবৃত্তিক রচনার মাধ্যমে তিনি আফ্রিকার নিজস্ব সভ্যতা, ঐতিহ্য, ইতিহাস ও সংস্কৃতির ওপর আলোকপাত করায় সচেষ্ট ছিলেন। আর এভাবেই তিনি বিশ্ববাসীকে ভাবতে শেখান, আফ্রিকানরাও সভ্য মানুষ। বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে তিনি ছিলেন মুক্তিকামী মানুষের স্বপক্ষে।
১৯৭১ সালে সার্ত্র, মালরো প্রমুখ বুদ্ধিজীবী যখন স্বাধীনতাকামী এই দেশটির স্বপক্ষে বিশ্বজনমত সৃষ্টিতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখছিলেন সে সময় আচিবির অনুভূতিও ছিল একই। তিনি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করেছিলেন যে, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ সে সময়কার এক অনিবার্য ঐতিহাসিক ঘটনা। ১৯৫৯ সালে প্রকাশিত হয় তাঁর উপন্যাস ‘থিংস ফল অ্যাপার্ট’। উপন্যাসটি সারা বিশ্বে আলোড়ন তোলে। ২০১৩ সালের ২২ মার্চ প্রয়াত হন আফ্রিকার গণমানুষের হিতৈষী চিনুয়া আচিবি।