খাতুনগঞ্জের চিনির বাজারে ভর করেছে সেই পুরনো ‘মিল সিন্ডিকেট’। রমজানের আগেই চিনির বাজারে দাম বৃদ্ধির পাঁয়তারার অংশ হিসেবে মিল মালিকরা কৃত্রিম সংকট করে সিরিয়াল ধরে চিনির সরবরাহ করছেন। ফলে চিনির দাম মণে (৩৭.৩২ কেজি) বেড়েছে ১২০ টাকা পর্যন্ত। কেজি হিসেবে প্রায় ৪ টাকা। ব্যবসায়ীরা বলছেন, আওয়ামী সরকারের আমলে গুটিকয়েক চিনির মিল মালিকের হাতে জিম্মি ছিল বাজার। তবে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকার চিনির বাজারে আমদানি উন্মুক্ত করে দেয়, যার প্রভাবও পড়তে শুরু করে বাজারে। কমতে কমতে দেড়শত টাকার চিনি এক পর্যায়ে একশত টাকার নিচে নেমে আসে। তবে সম্প্রতি যেসব ছোট ব্যবসায়ী চিনি আমদানি করেছেন, তাদের আমদানি মূল্যের চেয়েও কম দামে চিনি বিক্রি করে ছোট আমদানিকারকদের লোকসান দিতে বাধ্য করেন মিল মালিকরা। ফলে ছোট আমদানিকারকরা এখন আর চিনি আমদানি করতে সাহস পাচ্ছেন না। সেই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে এখন মিল মালিকরা সরবরাহ সংকট তৈরি করে দাম বৃদ্ধি করছেন। অপরদিকে ভোক্তারা বলছেন, আওয়ামী লীগ সরকার চিনির বাজারে গুটিকয়েক রাঘব বোয়ালকে ব্যবসা করার সুযোগ করে দিয়েছিল। এখন মনে হচ্ছে, সেই পথে আবার যাচ্ছে তারা। চিনির আমদানি মূল্যের সাথে বিক্রয় মূল্যের তদারকি করলে আসল চিত্র বের হয়ে আসবে। তাই প্রশাসনকে এ ব্যাপারে নজরদারি বাড়াতে হবে।
গতকাল খাতুনগঞ্জের পাইকারি বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত এক সপ্তাহ খাতুনগঞ্জের পাইকারি বাজারে মণপ্রতি (৩৭.৩২ কেজি) চিনি বিক্রি হয়েছে ৩ হাজার ২৮০ টাকায়। বর্তমানে সেই চিনি বিক্রি হচ্ছে ৩ হাজার ৪০০ টাকায়।
খাতুনগঞ্জের পাইকারি ব্যবসায়ীরা জানান, খাতুনগঞ্জের বাজারে পণ্য বেচাকেনা ও লেনদেনে যুগ যুগ ধরে কিছু প্রথা চালু আছে। নিজেদের সুবিধার অনেক প্রথা আছে যেগুলো আইনগতভাবে স্বীকৃত নয়। এরমধ্যে অন্যতম হচ্ছে ‘ডেলিভারি অর্ডার (ডিও) স্লিপ’। চিনি কিংবা অন্য কোনো পণ্য কেনাবেচায় ডিও বেচাকেনার মাধ্যমে বিভিন্ন আগাম লেনদেন হচ্ছে। দেখা যায়, পণ্য হাতে না পেলেও ওই স্লিপটিই বেচাকেনা হচ্ছে। কোনো কোম্পানি বাজারে আসার আগে নির্দিষ্ট পরিমাণ পণ্যের ডিও বিক্রি করে। যে দরে ডিও বিক্রি হয়, তার বাজার দর যদি বেড়ে যায়, তখন পণ্য ডেলিভারি দিতে তারা গড়িমসি করে। আবার দেখা যায়, কোম্পানির পণ্যের তুলনায় ডিও বিক্রিও হয় বেশি। এর ফলেও কোম্পানি বাজারে পণ্য ডেলিভারি দিতে পারে না। ফলে এসব পণ্যের দামও নিয়ন্ত্রণে থাকে না।
চাক্তাই খাতুনগঞ্জ আড়তদার সাধারণ ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. মহিউদ্দিন দৈনিক আজাদীকে বলেন, চিনির বাজারে আসলে সিন্ডিকেট বলে তেমন কিছু নাই। খাতুনগঞ্জে যে কোনো পণ্যের দাম বাড়লে সিন্ডিকেট কারসাজির অভিযোগ উঠে। আসলে শুধু চিনি নয়, ভোগ্যপণ্যের দাম উঠানামা করে চাহিদা ও যোগানের ওপর।
আলাউদ্দিন নামের একজন ভোক্তা জানান, চিনির বাজার আবার অস্থির হয়ে উঠেছে। এটি ভালো লক্ষণ নয়। সরকারকে এখনি বাজার তদারকি করতে হবে।












