চিনির বাজারে নৈরাজ্য

চাক্তাই-খাতুনগঞ্জের বেশিরভাগ দোকানে মিলছে না চিনি নিয়মিত তদারকির দাবি ভোক্তাদের

জাহেদুল কবির | সোমবার , ১ মে, ২০২৩ at ৮:০৬ পূর্বাহ্ণ

চিনির বাজারে স্থিতিশীলতা আনতে সরকার দাম নির্ধারণ করে দিলেও এর কোনো সুফল পাচ্ছেন না ভোক্তারা। উল্টো দাম বেড়েই চলেছে। শুধু তাই নয়, চাক্তাই খাতুনগঞ্জের পাইকারি বাজারের বেশিরভাগ আড়তে মিলছে না চিনি। কয়েকজন খুচরা বিক্রেতা অভিযোগ করে বলেন, সরবরাহ সংকটের অজুহাত দেখিয়ে পাইকারিতে গত একসপ্তাহে প্রতি মণ (৩৭.২৩৭ কেজি) চিনি ৫০০ টাকা বেড়েছে। অর্থাৎ পাইকারি পর্যায়ে প্রতি কেজি চিনি বিক্রি হচ্ছে ১২৩ টাকা দরে। সেই চিনি খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ১৩০ টাকায়।

ভোক্তারা বলছেন, সরকার নির্ধারণ করে দেয়ার পরও দাম বাড়ার বিষয়টি মেনে নেয়া যায় না। কারণ আমাদের দেশে গুটি কয়েক শিল্পগ্রুপ চিনি আমদানি করে পরিশোধন ও বিপণেনর সাথে জড়িত। তাদের কাছ থেকে আমদানি তথ্য নিয়ে কড়া নজরদারি করলে চিনির দাম বাড়ার কথা না। খাতুনগঞ্জের পাইকারি বাজারে গতকাল খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পাইকারিতে প্রতি মণ চিনি বিক্রি হচ্ছে ৪ হাজার ৫৫০ টাকা। এক সপ্তাহ আগে বিক্রি হয় ৪ হাজার ৫০ টাকায়। অন্যদিকে কাজীর দেউড়ির খুচরা বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রতি কেজি চিনি বিক্রি হচ্ছে ১৩০ টাকায়। এক সপ্তাহ আগে চিনি বিক্রি হয়েছে ১২৫ টাকায়।

খাতুনগঞ্জের পাইকারি ব্যবসায়ী জানান, খাতুনগঞ্জের বাজারে পণ্য বেচাকেনা ও লেনদেনে যুগ যুগ ধরে কিছু প্রথা চালু আছে। নিজেদের সুবিধার অনেক প্রথা আছে যেগুলো আইনগতভাবে স্বীকৃত নয়। এরমধ্যে অন্যতম হচ্ছে ‘ডেলিভারি অর্ডার (ডিও) স্লিপ’। চিনি কিংবা অন্য কোনো পণ্য কেনাবেচায় ডিও বেচাকেনার মাধ্যমে বিভিন্ন আগাম লেনদেন হচ্ছে।

দেখা যায়, পণ্য হাতে না পেলেও ওই স্লিপটিই বেচাকেনা হচ্ছে। কোনো কোম্পানি বাজার থেকে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ পণ্যের ডিও কিনে নেয়। যে দরে ডিও কেনা হয়, তার বাজার দর যদি বেড়ে যায়, তখন পণ্যটি ডেলিভারি দিতে তারা গড়িমসি করে। আবার দেখা যায়, কোম্পানির পণ্যই আসেনি কিন্তু ডিও কিনে রেখেছেন অনেক বেশি। এর ফলেও কোম্পানি বাজারে পণ্য ডেলিভারি দিতে পারে না। ফলে এসব পণ্যের দামও নিয়ন্ত্রণে থাকে না। এক্ষেত্রে চিনির ডিও বেচাকেনা বেশি হয়।

এদিকে অনেক খুচরা বিক্রেতা চাক্তাই খাতুনগঞ্জের পাইকারি বাজারে হন্য হয়ে ঘুরেও চিনি কিনতে পারছেন না বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। যেসব ব্যবসায়ী চিনি বিক্রি করতে সম্মত হচ্ছেন, তারা আবার বিক্রির রশিদ দিচ্ছেন না। খুচরা ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, চিনির বাজারে এক প্রকার অরাজকতা চলছে। এভাবে চলতে থাকলে মানুষ ক’দিন পরে চিনি কিনতে পারবে না।

কাজীর দেউরির হক ভান্ডার স্টোরের খুচরা বিক্রেতা মো. মিজানুর রহমান বলেন, খাতুনগঞ্জে চিনি কিনতে গিয়ে হতাশ হয়ে ফেরত এসেছি। তাই আমাদের দোকানে আর খোলা চিনি বিক্রি করতে পারছি না। এখন কেবল প্যাকেটজাত চিনি বিক্রি করছি।

চাক্তাই খাতুনগঞ্জ আড়তদার সাধারণ ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. মহিউদ্দিন দৈনিক আজাদীকে বলেন, বাজারে যে পরিমাণ চাহিদা রয়েছে, সে পরিমাণ চিনির সরবরাহ নেই। তাই বাজার বাড়তি।

কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) চট্টগ্রাম বিভাগীয় সভাপতি এসএম নাজের হোসেন বলেন, চিনির বাজার নিয়ে কারসাজির ঘটনা নতুন কিছু নয়। প্রশাসনের যেভাবে নজরদারি থাকার কথা, সেভাবে হচ্ছে না। প্রশাসনের নজরদারির অভাবেই ব্যবসায়ীরা কৃত্রিম সংকট তৈরি করার সুযোগ পাচ্ছেন। আসলে আমাদের দেশে গুটিকয়েক চিনি আমদানিকারক আছে। তারা নির্দিষ্ট কিছু ডিস্ট্রিবিউটরের মাধ্যমে চিনি বিক্রি করেন। এভাবে চিনির বাজারটা পুরোপুরি তাদের দখলে রয়েছে। বর্তমান বাজারে সরকারি চিনিকলগুলোর চিনি পাওয়া যাচ্ছে না। এছাড়া সরকারি চিনিকলগুলোর বিপণন অব্যবস্থাপনার কারণে বেসরকারি চিনির আমদানিকারকরা কারসাজি করার সুযোগ পাচ্ছেন।

উল্লেখ্য, গত ৬ এপ্রিল বাণিজ্য মন্ত্রণালয় খোলা চিনির সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য নির্ধারণ করে প্রতি কেজি ১০৪ টাকা এবং মোড়কজাত চিনির দাম নির্ধারণ করে ১০৯ টাকা কেজি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধপ্রাইজবন্ডের ১১১তম ড্র, প্রথম পুরস্কার ০৬৪০৮৬৪
পরবর্তী নিবন্ধশেকল ছেঁড়ার দিন