চিনির দাম লাগামহীন

আজাদী প্রতিবেদন | শুক্রবার , ১১ নভেম্বর, ২০২২ at ৭:২৮ পূর্বাহ্ণ

বেড়েই চলেছে চিনির দাম। গত দুইদিনের ব্যবধানে খুচরা বাজারে চিনির দাম বেড়েছে ১০ টাকা পর্যন্ত। অনেক খুচরা ব্যবসায়ী দাম আরো বাড়তে পারে ভেবে চিনি বিক্রি কমিয়ে দিয়েছেন এমন অভিযোগ ক্রেতাদের। তাই অনেক খুচরা দোকানেও মিলছে না চিনি। অন্যদিকে পাইকারিতে সরবরাহ সংকটের অজুহাতে গত দুইদিনে প্রতি মণে (৩৭.২৩৭ কেজি) দাম বেড়েছে ১৫০ টাকা। সব মিলিয়ে চিনির বাজার বর্তমানে টালমাটাল-এমনটাই বলছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা। ব্যবসায়ীরা বলছেন, ডলারের মূল্যবৃদ্ধির কারণে গত কয়েক মাস ধরে টানা চিনির দাম বাড়ছে। এখন ব্যাংকে এলসি (ঋণপত্র) খোলার পরিমাণ কমে যাওয়ায় দেখা দিয়েছে সরবরাহ সংকট। এছাড়া আন্তর্জাতিক বাজারেও চিনির দাম বাড়তি। এদিকে ভোক্তারা বলছেন, এলসি খোলা থেকে বাজারে আসা পর্যন্ত তিন চার মাস পর্যন্ত সময় লাগে। অথচ ব্যবসায়ীরা এখন সরবরাহ সংকটের অজুহাত দেখিয়ে দাম বৃদ্ধি করে যাচ্ছেন। নিয়মিত মনিটরিং করা হলে কমতে পারে দাম।
খাতুনগঞ্জের পাইকারি বাজারে গতকাল খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পাইকারিতে প্রতি মণ চিনি বিক্রি হচ্ছে ৩ হাজার ৮৫০ টাকা। গত

দুই দিন আগে বিক্রি হয় ৩ হাজার ৭০০ টাকায়। অন্যদিকে কাজীর দেউড়ির খুচরা বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রতি কেজি চিনি বিক্রি হচ্ছে ১১৫ টাকায়। গত দুইদিন আগে চিনি বিক্রি হয়েছে ১০৫ টাকায়।
খাতুনগঞ্জের পাইকারি ব্যবসায়ী জানান, খাতুনগঞ্জের বাজারে পণ্য বেচাকেনা ও লেনদেনে যুগ যুগ ধরে কিছু প্রথা চালু আছে। নিজেদের সুবিধার অনেক প্রথা আছে যেগুলো আইনগতভাবে স্বীকৃত নয়। এরমধ্যে অন্যতম হচ্ছে ‘ডেলিভারি অর্ডার (ডিও) স্লিপ’। চিনি কিংবা অন্য কোনো পণ্য কেনাবেচায় ডিও বেচাকেনার মাধ্যমে বিভিন্ন আগাম লেনদেন হচ্ছে। দেখা যায়, পণ্য হাতে না পেলেও ওই স্লিপটিই বেচাকেনা হচ্ছে। কোনো কোম্পানি বাজার থেকে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ পণ্যের ডিও কিনে নেয়। যে দরে ডিও কেনা হয়, তার বাজার দর যদি বেড়ে যায়, তখন পণ্যটি ডেলিভারি দিতে তারা গড়িমসি করে। আবার দেখা যায়, কোম্পানির পণ্যই আসেনি কিন্তু ডিও কিনে রেখেছেন অনেক বেশি। এর ফলেও কোম্পানি বাজারে পণ্য ডেলিভারি দিতে পারে না। ফলে এসব পণ্যের দামও নিয়ন্ত্রণে থাকে না। এক্ষেত্রে চিনির ডিও বেচাকেনা বেশি হয়। বর্তমানে চট্টগ্রামে একটি শিল্পগ্রুপ বাজারে প্রচুর পরিমাণে ডিও বিক্রি করেছে। কিন্তু অনেকে ডিও’র চিনি নিতে পারছেন না। কারণ হিসেবে ব্যবসায়ীরা বলছেন, দুই সপ্তাহ আগে প্রতি মণ চিনির ডিও ছিল ৩ হাজার ৫০০ টাকা। কিন্তু বর্তমানে দাম বাড়ার কারণে ওই দরের পণ্য ডেলিভারি দিচ্ছে না কোম্পানিগুলো।
চাক্তাই খাতুনগঞ্জ আড়তদার সাধারণ ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. মহিউদ্দিন দৈনিক আজাদীকে বলেন, বাজারে চিনির সরবরাহ সংকট রয়েছে; তাই দামও বাড়ছে। কৃত্রিম সংকটের অভিযোগ সঠিক নয়।
কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) চট্টগ্রাম বিভাগীয় সভাপতি এসএম নাজের হোসেন বলেন, চিনির বাজার নিয়ে কারসাজির ঘটনা নতুন কিছু নয়। প্রশাসনের যেভাবে নজরদারি থাকার কথা, সেভাবে হচ্ছে না। প্রশাসনের নজরদারির অভাবেই ব্যবসায়ীরা কৃত্রিম সংকট তৈরি করার সুযোগ পাচ্ছেন। আসলে আমাদের দেশে গুটিকয়েক চিনি আমদানিকারক আছে। তারা নির্দিষ্ট কিছু ডিস্ট্রিবিউটরের মাধ্যমে চিনি বিক্রি করেন। এভাবে চিনির বাজারটা পুরোপুরি তাদের দখলে চলে যায়। বর্তমান বাজারে সরকারি চিনিকলগুলোর চিনি পাওয়া যাচ্ছে না। এছাড়া সরকারি চিনিকলগুলোর বিপণন অব্যবস্থাপনার কারণে বেসরকারি চিনির আমদানিকারকরা কারসাজি করার সুযোগ পাচ্ছেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধব্রাজিল থেকে ৫৩ টাকায় চিনি পেল সরকার
পরবর্তী নিবন্ধদীর্ঘ সময় ক্ষমতায় থাকাতেই উন্নয়ন সম্ভব হচ্ছে : প্রধানমন্ত্রী