সারাদেশের মতো চট্টগ্রামেও অব্যাহত রয়েছে ডেঙ্গু–চিকুনগুনিয়ার দাপট। এই রোগ দুটি এডিস মশার কামড় থেকে সৃষ্টি হয়। গত ২৯ জুলাই দৈনিক আজাদীতে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলতি জুলাই মাসে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ৬ জন মারা গেছেন। আগের ছয় মাসে মারা গেছেন মাত্র দুইজন। জুলাই মাসে ডেঙ্গু আক্রান্ত ও মৃত্যুহার দুটোই বাড়ছে। এ মাসে মোট ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছে ৩৮২ জন। সব মিলিয়ে চলতি বছর মোট আক্রান্ত হয়েছেন ৮২৭ জন। অপরদিকে চিকুনগুনিয়ার আক্রান্তের হারও বাড়ছে। চলতি বছর মঙ্গলবার পর্যন্ত চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন ৮০৩ জন। তবে সরকারি পর্যায়ে চট্টগ্রামে চিকুনগুনিয়া পরীক্ষার ব্যবস্থা নেই। এছাড়া বেসরকারি ল্যাবেও পরীক্ষার সুবিধা সীমিত। তাই অনেক রোগী পরীক্ষার বাইরে রয়ে গেছেন বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। বেশিরভাগ চিকিৎসক তাই রোগীর উপসর্গ দেখেই চিকিৎসা দেন।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, চিকুনগুনিয়া ভাইরাসের কোনো নির্দিষ্ট চিকিৎসা নেই। ওষুধ সাধারণত লক্ষণগুলো উপশম করার জন্য ব্যবহার করা হয়। জ্বর কমানোর ওষুধ, ব্যথা উপশম করার ওষুধ, প্রচুর তরল পান করা এবং পরিমিত বিশ্রাম নিলে ৫ থেকে ১০ দিনে আক্রান্ত ব্যক্তি সাধারণত সুস্থ হয়ে যায়। তবে তীব্র রোগলক্ষণ ও গুরুতর কোনো সমস্যা হলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। তাঁরা বলেন, চিকুনগুনিয়া ভাইরাস প্রতিরোধের সবচেয়ে ভালো উপায় হলো মশার কামড় এড়ানো। মশারি খাটিয়ে, লম্বা হাতার জামা ও লম্বা প্যান্ট পরে, প্রয়োজনে কাজের জায়গায় মশারি ব্যবহার করে, মশারোধী স্প্রে ও লোশন ব্যবহার করে আমরা মশার কামড় এড়াতে পারি। বাড়ির চারপাশে পানি জমতে না দেওয়া এবং যেখানে–সেখানে যেন মশা ডিম পাড়তে না পারে, সেদিকেও খেয়াল রাখুন। চিকুনগুনিয়া ভাইরাসের কোনো টিকা নেই। তবে গবেষকেরা টিকা নিয়ে কাজ করছেন।
আজাদীতে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বেশ কয়েকজন বিশেষজ্ঞ ব্যক্তির অভিমত তুলে ধরা হয়েছে। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মো. আবদুর রব বলেন, ডেঙ্গুর পাশাপাশি চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত রোগী বাড়ছে। চিকুনগুনিয়ায় জ্বর সেরে যাওয়ার পরে শরীরে ব্যথা থাকছে। রোগী সিঁড়ি বেয়ে ওঠানামা করতে হিমশিম খেতে হয়। অপরদিকে ডেঙ্গু আক্রান্ত হলে বাসায় চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চিকিৎসা নিতে পারবেন। তবে র্দীর্ঘমেয়াদি রোগ যাদের রয়েছে, তাদের একটু সতর্ক থাকতে হবে। শারীরিক কোনো জটিলতা দেখা দিলে হাসপাতালে ভর্তি করাতে হবে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত রোগীদের জ্বর থাকলেও সর্দি কাশি থাকে না। রোগীদের গায়ে ব্যথা থাকে। গায়ে ফুসকুড়ি (র্যাশ) থাকতে পারে, নাও থাকতে পারে। ডেঙ্গু রোগীদের ক্ষেত্রে দেখা যায়, চোখের পেছনে, পিঠ–কোমর ও মাংসপেশিতে ব্যথা থাকে। আর চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্তদের ক্ষেত্রে দেহের গিঁটে গিঁটে ব্যথা থাকে। পা ফুলে যায়। গায়ে ফুসকুড়ি থাকে। ব্যথার মাত্রা এত বেশি থাকে যে রোগী হাঁটতে পারেন না। অন্যদিকে ডেঙ্গুর ক্ষেত্রে মৃত্যুঝুঁকি বেশি থাকে। ডেঙ্গুর তিন–চার দিন পর জ্বরের প্রকোপ কমে এলে জটিলতা দেখা দিতে পারে। অনেকের ফুসফুসে পানি জমে যেতে পারে। চিকুনগুনিয়ায় মৃত্যুঝুঁকি কম, কষ্ট বেশি। চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে ৭০ শতাংশ এক থেকে দুই সপ্তাহের মধ্যে সুস্থ হয়ে যান। ৩০ শতাংশ ক্ষেত্রে রোগী তিন মাস পর্যন্ত অসুস্থ থাকতে পারেন, গায়ে ব্যথা থাকতে পারে। ৫ থেকে ৭ শতাংশ রোগীর ক্ষেত্রে সুস্থ হতে বছরের পর বছর লেগে যেতে পারে।
তাঁরা বলছেন, বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে জরুরি ভিত্তিতে সরকারকে নজরদারি জোরদার করতে হবে। এছাড়া বিনামূল্যে পরীক্ষার ব্যবস্থা চালু করতে হবে। এ বিষয়ে জনগণকে সচেতন করতে ব্যাপক প্রচার চালাতে হবে। অন্যথায়, পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করার আশংকা রয়েছে। দেশের স্বাস্থ্যখাত আবারও বিপর্যয়ের মুখে পড়তে পারে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, জরুরি ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করলে চিকুনগুনিয়ার বিস্তার রোধ করা সম্ভব। অন্যথায় জনস্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়বে ভয়াবহভাবে।