চিকিৎসা ব্যয় কমাতে পরিকল্পিত উদ্যোগ গ্রহণ করা প্রয়োজন

| মঙ্গলবার , ১ মার্চ, ২০২২ at ১০:১১ পূর্বাহ্ণ

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বছরে বিশ্বজুড়ে প্রায় ১০০ কোটি মানুষ স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। তাদের মধ্যে প্রায় ১৫ কোটি মানুষ স্বাস্থ্যসেবার ব্যয় মেটাতে গিয়ে বিপর্যয়ের সম্মুখীন হচ্ছে, দারিদ্র্য সীমার নিচে চলে যাচ্ছে। বাংলাদেশে চার কোটি ৮০ লাখ মানুষ দারিদ্র্য সীমার নিচে অবস্থান করছে এবং প্রতি বছর অসুস্থতার কারণে নতুন করে ৬৪ লাখ মানুষ দরিদ্রতার শিকার হচ্ছে।
সমপ্রতি স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইউনিটের এক গবেষণায় দেখা যায়, স্বাস্থ্য ব্যয়ভার বহন করতে গিয়ে প্রতি বছর ৮৬ লাখের বেশি মানুষের আর্থিক অবস্থার অবনতি হচ্ছে। অতিরিক্ত ব্যয়ের কারণে ১৬ শতাংশ মানুষ স্বাস্থ্যসেবা নেন না। এ হিসাবে প্রায় তিন কোটি মানুষ প্রয়োজন হলেও চিকিৎসা নিচ্ছেন না।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের সাবেক এক পরিচালক বলেন, প্রকৃত অর্থে প্রতি বছর বাজেটে স্বাস্থ্য খাতে সরকারি বরাদ্দ হ্রাস পাচ্ছে। করোনা মহামারির কারণে বাজেটে বরাদ্দ কিছুটা বাড়ানো হলেও তা প্রত্যাশিত পর্যায়ের নয়। ব্যক্তির ব্যয় কমাতে হলে স্বাস্থ্য, অর্থ ও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়কে একযোগে কাজ করতে হবে। অন্যথায় প্রত্যাশিত ফল মিলবে না।
বস্তুত সংসারে ব্যয়ের একটি অংশ যায় চিকিৎসার পেছনে। আজকাল প্রতিটি পরিবারেই কোনো না কোনো সদস্যের জন্য বা একাধিক সদস্যের জন্য ওষুধপত্র কিনতে হয়। আর প্রতিনিয়ত এ ব্যয় বেড়ে চলেছে। ফলে অন্যান্য খরচের সঙ্গে তাল মেলাতে গিয়ে হিমশিম খেতে হয় নিম্ন ও মধ্যবিত্ত পরিবারকে। এমনকি উচ্চ-মধ্যবিত্ত পরিবারগুলোও এ নিয়ে হিমশিম খাচ্ছে।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছিলেন, দেশের সব মানুষকে বিনামূল্যে স্বাস্থ্যসেবার আওতায় আনা সম্ভব নয়। বিত্তবানরা অর্থ ব্যয় করে যে কোনো জায়গায় চিকিৎসা নিতে পারেন। কিন্তু যাদের টাকা নেই বিশেষ করে দরিদ্র মানুষ টাকার অভাবে যেন চিকিৎসা বঞ্চিত না হয়, সেদিকে নজর দিচ্ছি। এজন্য রোডম্যাপ প্রণয়নের কাজ চলছে। ধাপে ধাপে মানুষ এর সুফল পাবেন।
বিশেষজ্ঞদের মতে, সার্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হলে ব্যক্তির ওপর স্বাস্থ্য ব্যয়ের চাপ কমাতে হবে। এ কথা বলা হয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ধারণাপত্রেও। কিন্তু বাংলাদেশের ক্ষেত্রে ঘটছে উল্টো ঘটনা। ব্যক্তির চিকিৎসা ব্যয়ের চাপ না কমে বরং দিন দিন বাড়ছে। সরকারি হাসপাতালে বিনামূল্যে ওষুধ, পথ্য সরবরাহ করা হলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসার উচ্চ ব্যয়ের কারণে সেবা নিতে পারছে না সাধারণ মানুষ।
সমপ্রতি এক গবেষণা রিপোর্টে বলা হয়েছে, সরকারি হাসপাতালে ৩ শতাংশ রোগী ওষুধ পায়। বাকি ৯৭ ভাগ রোগীই ওষুধ পায় না। এসব কারণে রোগীরা বেসরকারি হাসপাতালে ছুটে ও দরিদ্র হয়ে পড়ে। এ সংখ্যা প্রতিবছর প্রায় ৮৬ লাখ। আরও জানা যায়, ২০১২ সালে রোগীর স্বাস্থ্যসেবার খরচ কমিয়ে আনতে ২০ বছর মেয়াদি একটি পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। এটি বাস্তবায়ন হবে ২০৩২ সালে। সেখানে বলা হয়েছে, স্বাস্থ্যসেবায় মানুষের খরচ বর্তমান শতকরা ৬৪ ভাগ থেকে ৩২ ভাগে নামিয়ে আনতে হবে। কারণ একজন প্রাইভেট চিকিৎসকের কাছে চিকিৎসা নেওয়া এবং একাধিক টেস্ট করা সবার পক্ষে সম্ভব হয় না। প্রাইভেট চিকিৎসকের আবার আলাদা আলাদা ফি। রোগ নির্ণয়ের ক্ষেত্রেও একই অবস্থা। আজকাল আবার টেস্ট ছাড়া চিকিৎসা করার রীতি প্রায় উঠে গেছে! তারপর ওষুধের প্রশ্ন। এত বিশাল খরচ সবাই বহন করতে পারে না। চিকিৎসার জন্য দেশে সরকারি হাসপাতালের পাশাপাশি অসংখ্য প্রাইভেট ক্লিনিক গড়ে উঠেছে। এসব ক্লিনিকে চিকিৎসা নিতে আসে অসংখ্য মানুষ। কিন্তু ব্যয়বহুল হওয়ায় দরিদ্র রোগীদের হিমশিম খেতে হয়। ডাক্তার দেখানো থেকে শুরু করে মেডিকেল টেস্ট পর্যন্ত এই ব্যয় বহন করা অনেকের পক্ষেই সম্ভব হয় না। ফলে কখনো অন্যের কাছ থেকে ধার নিয়ে, আবার কখনো পরিবারের সম্পদ বিক্রি করে তারা চিকিৎসা করে। এভাবে চিকিৎসা ব্যয় মানুষের আর্থিক সামর্থ্যকে সীমাবদ্ধ করছে। এ বাস্তবতায় মানুষের জীবনমান উন্নয়নে চিকিৎসা ব্যয় কমাতে পরিকল্পিত উদ্যোগ গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করা প্রয়োজন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে