চিকিৎসকের পদ ৯, আছেন দুজন ২৭ নার্সের জায়গায় ৪ জন

বিলাইছড়ি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সেবা ব্যাহত

রাঙামাটি প্রতিনিধি | শনিবার , ৫ জুলাই, ২০২৫ at ৪:৫৭ পূর্বাহ্ণ

সীমান্তবর্তী উপজেলা রাঙামাটির বিলাইছড়ি। দুর্গম এই উপজেলার একদিকে ভারতের মিজোরাম, অন্যদিকে মিয়ানমারের চিন প্রদেশ। উপজেলাবাসীর চিকিৎসাসেবা গ্রহণের একমাত্র গন্তব্য বিলাইছড়ি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। বর্তমানে চিকিৎসক, নার্স ও জনবল সংকটে ভুগছে ৫০ শয্যার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি।

এর মধ্যে চিকিৎসক রয়েছেন মাত্র ২ জন। এছাড়া ৪ জন নার্স, ১ জন টেকনিশিয়ান, ২ জন পরিচ্ছন্নতাকর্মী দিয়ে চলছে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সেবা কার্যক্রম। অপ্রতুল জনবলের কারণে রোগীরাও পাচ্ছেন না কাঙ্ক্ষিত সেবা। চিকিৎসক ও জনবল সংকটের কারণে ব্যাহত হচ্ছে চিকিৎসা সেবা।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ১৯৮৩ সালে রাঙামাটির সীমান্তবর্তী বিলাইছড়ি উপজেলা সদরে ১০ শয্যাবিশিষ্ট টিনশেডের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি নির্মিত হয়। পরে এটিকে ৩১ শয্যায় উন্নীত করা হয়ে। ২০১৮ সালে নতুন ৩ তলা ভবন নির্মাণের পর ৩১ শয্যা থেকে ৫০ শয্যায় উন্নীত হয়। উপজেলার চার ইউনিয়নের প্রায় ৩০ হাজারের অধিক মানুষের একমাত্র ভরসা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি।

রাঙামাটি জেলা সিভিল সার্জন (সিএস) কার্যালয়ের তথ্যমতে, বিলাইছড়ি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে জনবল কাঠামো অনুযায়ী কনসালটেন্ট, গাইনি, মেডিসিন, সার্জারিসহ ৯টি চিকিৎসক পদ রয়েছে। এর মধ্যে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা রয়েছেন একজন। তিনিও অফিসিয়াল বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত থাকেন। কর্মরত রয়েছেন ২ জন চিকিৎসক। এছাড়া ২৭টি নার্স পদে কর্মরত রয়েছেন ৪ জন মাত্র। ৮ জন ল্যাব টেকনিশিয়ানের মধ্যে মাত্র ১ জন কর্মরত রয়েছেন। এছাড়া হিসাবরক্ষক, পরিসংখ্যানবিদ, আয়া, স্টোরকিপারের পদও শূন্য। দুর্গম উপজেলাটিতে আধুনিকভাবে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অবকাঠামো গড়ে উঠলেও পর্যাপ্ত চিকিৎসক ও জনবল না থাকায় চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন উপজেলাবাসী।

উপজেলার পুরিহলা মোনের বাসিন্দা শশধর চাকমা বলেন, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিতে চিকিৎসক সংকট রয়েছে। তাছাড়া পর্যাপ্ত পরিমাণ নার্স, টেকনিশিয়ান, ওয়ার্ড বয়সহ অন্যান্য জনবল নেই। হাসপাতালে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক না থাকায় আমাদের রাঙামাটি সদরে ও চট্টগ্রামে যেতে হয়। ফলে এলাকার যারা সাধারণ রোগী রয়েছে তাদের আর্থিক সংকটে পড়তে হয়। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পরিচ্ছন্নতাকর্মী রত্না তঞ্চঙ্গ্যা বলেন, ওয়ার্ড বয়, পরিচ্ছন্নতাকর্মী ও আয়াসহ ১৫ জন থাকার কথা। বর্তমানে শুধু পরিচ্ছন্নতাকর্মী আমিসহ দুজন রয়েছি। অন্য পদগুলো খালি রয়েছে।

সিনিয়র নার্স ইশিতা চাকমা বলেন, চারজন নার্স মিলে হাসপাতাল সামলাতে হয়। এর মধ্যে একজন নার্স মাতৃকালীন ছুটিতে যাবেন। মাত্র তিনজন নার্স থাকব। প্রতিদিন রোগীর চাপ থাকে।

বিলাইছড়ি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কর্মরত চিকিৎসক ডা. উম্মে সাইকা বলেন, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসকের সংকট রয়েছে। মাত্র দুজন চিকিৎসক দিয়ে এত বড় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রোগীদের স্বাস্থ্যসেবা দেওয়া কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে।

রাঙামাটির সিভিল সার্জন (সিএস) ডা. নূয়েন খীসা বলেন, রাঙামাটি জেলায় এমনিতে চিকিৎসক সংকট রয়েছে। তার মধ্যে বিলাইছড়ি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে মাত্র দুজন চিকিৎসক রয়েছেন। পাশাপাশি নার্সের সংকটও রয়েছে। চারজন নার্স রয়েছেন। এ ব্যাপারে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। আশা করছি শীঘ্রই এই সংকট কেটে যাবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধমাতামুহুরী নদীতে ফেলা হচ্ছে ২০ হাজার জিও ব্যাগ
পরবর্তী নিবন্ধসিরিজে টিকে থাকার লড়াইয়ে আজ মাঠে নামছে বাংলাদেশ