চিকিৎসকদেরও বাধা, জরিমানা

কঠোর লকডাউনে মুভমেন্ট পাস

আজাদী অনলাইন | বুধবার , ১৪ এপ্রিল, ২০২১ at ১০:১৮ অপরাহ্ণ

কঠোর বিধিনিষেধের মধ্যে দ্বিতীয় দফায় লকডাউন শুরুর প্রথমদিন রাজধানী ঢাকায় বেশ কয়েকজন চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীকে আটকেছে পুলিশ। এরমধ্যে একজন চিকিৎসককে ৩ হাজার টাকা জরিমানাও করা হয়েছে।
ফাউন্ডেশন ফর ডক্টরস সেফটি রাইটস অ্যান্ড রেসপনসিবিলিটিজ-এফডিআরএস জানিয়েছে, রাজধানীজুড়ে এ ধরনের বেশকিছু ঘটনা ঘটেছে। বিডিনিউজ
এফডিআরএস এর যুগ্ম মহাসচিব রাহাত আনোয়ার চৌধুরী আজ বুধবার (১৪ এপ্রিল) রাতে জানিয়েছেন, বুধবার লকডাউনের প্রথম দিন বিভিন্ন স্থানে চিকিৎসকরা হয়রানির শিকার হয়েছেন।
তিনি বলেন, “করোনাভাইরাস সংক্রমণ মোকাবেলায় চিকিৎসক-স্বাস্থ্যকর্মীরা সম্মুখসারিতে থেকে কাজ করছেন। প্রজ্ঞাপনে চিকিৎসা সেবায় নিয়োজিত ব্যক্তিদের লকডাউনের আওতামুক্ত রাখা হয়েছে। আমরা তো সাধে রাস্তায় বের হই না। আমরা তো চাকরি করি, হাসপাতালে না গেলে চাকরি থাকবে না। সরকার কি মেনে নেবে আমি হাসপাতালে না গেলে? যদি ঘোরাঘুরি করতে যায় তাহলে আটকালে ঠিক আছে। কিন্তু আমি কাজ করতে যাচ্ছি। আমার কার্ড দেখাচ্ছি। এরপরও হয়রানি করা হয় তাহলে তো দুঃখজনক। আমার ধারণা অতি উৎসাহী কেউ কেউ এ ধরনের ঘটনা ঘটিয়েছেন। আমাদের এক চিকিৎসককে জাহাঙ্গীর গেট এলাকায় গালাগালি করা হয়েছে।”
রাস্তায় ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ে বের হওয়ায় স্কয়ার হাসপাতালের এক চিকিৎসককে তিন হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
স্কয়ার হাসপাতালের কোভিড ইউনিটে কর্মরত চিকিৎসক নাজমুল হক জানান, সপ্তাহে তিনদিন তিনি হাসপাতালে দায়িত্ব পালন করেন। তার বাবাও করোনাভাইরাস আক্রান্ত। এ কারণে গত কয়েকদিন গ্রামের বাড়ি মুন্সিগঞ্জ থেকে অফিস করছেন। বুধবারও নিজের গাড়িতে করে অফিসে যাচ্ছিলেন।
তিনি বলেন, “হাইকোর্টের সামনে চেকপোস্টে আমাকে পুলিশ সদস্যরা আটকায়। আমি জানি চিকিৎসকরা চলাচল করতে পারবেন। এ কারণে আমার আইডি কার্ড দেখাই। তারপরও আমার গাড়ির নামে ৩ হাজার টাকা জরিমানা লিখে দেয়।”
বুধবার কর্মক্ষেত্রে যাওয়ার সময় বিড়ম্বনার মুখে পড়েছেন অন্য চিকিৎসকরাও। তাদের অনেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এসব ঘটনা তুলে ধরেছেন।
সৌরভ চৌধুরী নামে একজন চিকিৎসক বলেছেন, “কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের নার্সদের বহনকারী গাড়ি টঙ্গী থেকে আসার সময় মুভমেন্ট পাস নেই বলে দুই ঘণ্টা আটকে রেখেছে পুলিশ। তাদের সামনে দিয়েই সাংবাদিকদের গাড়ি চলে গেছে।”
আরেকজন চিকিৎসক অভিযোগ করেছেন কার্ড দেখিয়ে বারবার অনুরোধ করার পরও রিকশা নিয়ে আসতে দেয়নি।
আইসিডিডিআর,বি’র একজন চিকিৎসক অভিযোগ করেন, সকাল ৭টায় টঙ্গী কলেজগেট থেকে অফিসে আসার সময় স্টেশন রোডে পুলিশ আটকায়। অফিসের কার্ড দেখানোর পরও বলে বের হওয়া নিষেধ। এমনকি তাদের হাসপাতালে থেকেই ডিউটি করার পরামর্শ দিয়ে পুলিশ বলেছে, “আজকেই ফার্স্ট অ্যান্ড লাস্ট ওয়ার্নিং। অন্যদিন আর যেতে দেব না।”
কোভিড-১৯ মহামারীতে লকডাউনের মধ্যে মানুষের ‘অনিয়ন্ত্রিত ও অপ্রয়োজনীয়’ চলাচল কমাতে এবং জরুরি বিশেষ প্রয়োজনে যাতায়াতের সুবিধায় বাংলাদেশ পুলিশ মঙ্গলবার চালু করছে মুভমেন্ট পাস।
এ বিষয়ে পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি (মিডিয়া) সোহেল রানা বলেন, “যাত্রাপথে নিজ পরিচয় এবং জরুরি সেবা বা কাজের সাথে যুক্ত থাকার প্রমাণ দেখালে কারোই পুলিশি জেরার মুখোমুখি হওয়ার কথা নয়। সরকারি নির্দেশনা মতে যারা জরুরি সেবার সাথে যুক্ত রয়েছেন তাদেরকে সহায়তা করার জন্য মাঠ পর্যায়ের সকল পুলিশ সদস্যকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।”
এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “পরিচয় জানতে চাইলে বা তথ্য জানতে চাইলে কেউ কেউ পুলিশকে সহযোগিতা করছেন না, এমন তথ্যও আমরা মাঠ পর্যায়ের পুলিশ সদস্যদের নিকট থেকে পাচ্ছি। তাই দায়িত্ব পালনকালে পুলিশকেও সহযোগিতা করবেন, সম্মানিত নাগরিকদের নিকট আমাদের এমনটাই প্রত্যাশা।”

পূর্ববর্তী নিবন্ধ‘তপোবহ্নির শিখা জ্বালো’ বাংলা নববর্ষ-১৪২৮ বরণ
পরবর্তী নিবন্ধপুলিশ আটকে দিল মোটরসাইকেল, কাজ থামিয়ে দিল উইন্সম্যানরা