চিকায় ঢাকা পড়েছে এ এফ রহমান হলের নাম

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

চবি প্রতিনিধি | শুক্রবার , ২৪ জুন, ২০২২ at ৫:৪৪ পূর্বাহ্ণ

বাস্তবে হলটির নাম এ এফ রহমান হলেও প্রথম দেখায় যে কারো মনে হতে পারে এটি ‘বিজয় হল’। ঐতিহ্যবাহী হলটির নাম ঢাকা পড়ে গেছে দেয়াল জুড়ে ছাত্রলীগের বগিভিত্তিক উপগ্রুপ বিজয়ের চিকায়। এতে গ্রুপভিত্তিক রাজনীতির দৃষ্টান্ত হয়ে আছে চার তলা উঁচু লাল দালানের এ এফ রহমান হলটি। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) আবাসিক হলগুলো বর্তমানে দখলে রয়েছে ছাত্রলীগের বগিভিত্তিক গ্রুপগুলোর কাছে। যার ফলে সাধারণ শিক্ষার্থীদের থাকতে হচ্ছে হলের বাইরে। অন্যথায় কোনো একটি গ্রুপের অনুসারী হিসেবে হলে উঠতে হয় শিক্ষার্থীদের। দীর্ঘদিন হলের আসন বরাদ্দ না হওয়ায় তৈরি হয়েছে এমন হল দখলের সংস্কৃতি। সর্বশেষ ২০১৭ সালের জুন মাসে হলের সিট বরাদ্দ দেওয়া হয়। এরপর থেকে ছাত্রলীগের নিয়ন্ত্রণে থাকছেন ছাত্ররা। সময়ে সময়ে অনেক বরাদ্দকৃত শিক্ষার্থীকেও বের করে দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে।

বগিভিত্তিক উপগ্রুপ বিজয়ের দখলে রয়েছে সর্বোচ্চ তিনটি হল- এ এফ রহমান, আলাওল এবং সোহরাওয়ার্দী হল। সিঙটি নাইনের দখলে শাহজালাল হল, সিএফসির দখলে শাহ আমানত হল। সূর্যসেন হলে রয়েছে এপিটাফ গ্রুপের অনুসারীরা। এছাড়া শহীদ আব্দুর রব হল ভাগাভাগি করে নিয়ন্ত্রণে রেখেছে বাংলার মুখ, ভিএঙ ও সিএফসিসহ কয়েকটি গ্রুপের অনুসারীরা। বছরের বিভিন্ন সময় বগি ভিত্তিক গ্রুপগুলো ক্যাম্পাসের বিভিন্ন জায়গায় চিকা মেরে নিজেদের অবস্থান জানান দেয়। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের এ এফ রহমান হলের চিত্রটা ভিন্ন। পুরো হলটির লাল দেয়াল ঢাকা পড়েছে বিজয়ের সাদা চিকায়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের এক শিক্ষার্থী বলেন, প্রথমদিন এসে ভেবেছিলাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো চবিতেও ‘বিজয়-৭১’ হল রয়েছে। পরে জানতে পারি এখানে ছাত্রলীগের বিজয় গ্রুপের অনুসারীরা থাকে বলেই হলটির চিত্র এমন। ব্যবস্থাপনা বিভাগের আরেক শিক্ষার্থী বলেন, সাধারণ শিক্ষার্থী হওয়ায় আবাসিক হলে ঢুকতেই ভয় লাগে। পড়াশোনার চেয়ে এখানে ছাত্রলীগের উপগ্রুপগুলোর চর্চাই হয় বেশি। হলগুলোতে একবার ঘুরে আসলেই বোঝা যায় কোন গ্রুপের আধিপত্য রয়েছে। সবসময় মনে হয়, এই বুঝি মারামারি লাগলো!

বিজয় গ্রুপের নেতা ও ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সম্পাদক নজরুল ইসলাম সবুজ আজাদীকে বলেন, শাটল ট্রেনের বগিভিত্তিক রাজনীতি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে অনেক আগে থেকে চর্চা হয়ে আসছে। আমরা বগিভিত্তিক রাজনীতির পক্ষে নয়, তবুও হলগুলোর দেয়ালে কর্মীরা হয়তো তাদের আবেগ থেকে চিকা মারে। সেটা শুধু আমাদের গ্রুপ না, প্রতিটি গ্রুপের কর্মীরা এটা করে থাকে। যদি এফ রহমান হলের বিষয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের আপত্তি থাকে সেক্ষেত্রে বিষয়টা আমরা গুরুত্বের সঙ্গে দেখবো। ছাত্রলীগ সবসময় সাধারণ শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ের পক্ষে কাজ করেছে।

শাখা ছাত্রলীগ সভাপতি রেজাউল হক রুবেল বলেন, বিষয়টা আমাদের চোখে পড়ার পর আমরা প্রশাসনকে বলেছিলাম বগি ভিত্তিক সংগঠনগুলোর চিকা মুছে দেওয়ার জন্য। কিন্তু প্রশাসন এতদিনেও কেন এ বিষয়ে নীরব, এটা আমারও প্রশ্ন। যেহেতু বগি ভিত্তিক সংগঠন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ থেকে নিষিদ্ধ, তাই এ ধরনের কর্মকাণ্ড সমর্থন করতে পারি না আমরা।

এ এফ রহমান হলের প্রভোস্ট প্রফেসর ড. কাজী এসএম খসরুল আলম কুদ্দুসী বলেন, বছরখানেক আগে আমরা পুরো হলটি পরিষ্কার করলাম। এর পরদিনই দেখা গেল হলের দেয়ালজুড়ে চিকা। এটা আমার কাছেও ভালো লাগেনি। যেহেতু এখানে ছাত্র সংগঠনগুলোর চিকা মারা হয়েছে। তাই তাদের নেতাদেরও বিষয়টি দেখা উচিৎ। এছাড়া আমি একা চাইলে তো হবে না, প্রশাসনেরও সহযোগিতা প্রয়োজন চিকা অপসারণ করতে হলে। সর্বোপরি হলের সৌন্দর্য রক্ষার দায়িত্ব আমাদের সবার।

এ ব্যাপারে প্রক্টর ড. রবিউল হাসান ভূঁইয়া আজাদীকে বলেন, সুন্দর একটি হলে এভাবে চিকা মারা অসুন্দর ও অগ্রহণযোগ্য বিষয়। আমরা সবার সাথে কথা বলে বিভিন্ন জায়গায় এ ধরনের চিকাগুলো মুছে দেওয়ার ব্যবস্থা করব।

পূর্ববর্তী নিবন্ধসড়কের বিভিন্ন স্থানে ধস, ঝুঁকি নিয়ে চলাচল
পরবর্তী নিবন্ধস্বপ্নের পদ্মা সেতু উদ্বোধন কাল