উচ্চমূল্যের বাজারে চা শ্রমিকদের ৩০০ টাকা মজুরিও যথেষ্ট নয় জানিয়ে তাদের দাবির প্রতি সংহতি প্রকাশ করে বিবৃতি দিয়েছেন দেশের ৪৫ জন নাগরিক। গতকাল ওই নাগরিকদের পক্ষে অ্যাসোসিয়েশন ফর ল্যান্ড রিফর্ম অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (এএলআরডি) নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা গণমাধ্যমে যৌথ একটি বিবৃতি পাঠান। খবর বিডিনিউজের।
বিবৃতিতে বলা হয়, গত ১৪ অগাস্ট, চা শিল্পের মালিকরা শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি ১২০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৩৪ টাকা করার যে প্রাথমিক প্রস্তাব দিয়েছিল, সেটি শ্রমিকদের প্রতি ‘অবহেলা ও উপহাসের নামান্তর’। আমাদের দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী একজন কৃষি শ্রমিকের ন্যূনতম মজুরি ৩ কেজি ৩৭০ গ্রাম চালের সমপরিমান। বর্তমানে গ্রামের একজন মজুরকে সারাদিনের জন্য মজুরি দিতে হয় কমপক্ষে ৪০০ থেকে ৬০০ টাকা। এছাড়াও শ্রম মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন নিম্নতম মজুরি বোর্ড বিভিন্ন সেক্টরের যে ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণ করেছে তা আরও বেশি। শুধু তাই নয়, সেখানে প্রতিবছর বেতন বৃদ্ধির বিধান রয়েছে।
চা উৎপাদক ও রপ্তানিকারক অন্যান্য দেশের দৃষ্টান্ত তুলে ধরে বলা হয়, পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে চা শ্রমিকদের বর্তমান ন্যূনতম দৈনিক মজুরি ২৩২ রুপি, যা বাংলাদেশি টাকায় ২৭৭ টাকা এবং তারাও এই মজুরি বৃদ্ধির দাবি করছে। সর্ববৃহৎ চা রপ্তানিকারক দেশ শ্রীলঙ্কা, নেপাল, কেনিয়া এবং চীনে দৈনিক মজুরি চা শ্রমিকদের দাবিকৃত মজুরির চেয়েও বেশি। তাহলে কীসের ভিত্তিতে বাংলাদেশে চা শ্রমিকদের দৈনিক মজুরি ১২০ টাকা রয়ে গেল? বিবৃতিদাতারা বলেন, বর্তমানের এই উচ্চ বাজার মূল্যের সময় দৈনিক ১২০ টাকা মজুরিতে কোনো একটি পরিবার কেন, একজন ব্যক্তির সংসারও চালানো সম্ভব নয়।
চা-বোর্ডের তথ্যের উল্লেখ করে বিবৃতিতে বলা হয়, দেশের ১৬৭টি চা-বাগানে ৫ লাখের বেশি চা-জনগোষ্ঠীর মধ্যে স্থায়ী শ্রমিক প্রায় এক লাখ। একজন শ্রমিকের মজুরির ওপর কমপক্ষে ৫ জনের ভরণপোষণ নির্ভর করে। বর্তমান দ্রব্যমূল্যের বাজারে ৩০০ টাকা মজুরি পেলেও তা সম্ভব নয়। চা শ্রমিকদের ন্যায়সঙ্গত দাবি যাতে চা বাগান মালিকরা মেনে নেয় অবিলম্বে সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে তা নিশ্চিত করার দাবি জানান দেশের ওই ৪৫ জন নাগরিক।
বিবৃতিতে বলা হয়, সরকারি তথ্য অনুসারে, দেশে মাথাপিছু বাৎসরিক আয় ২ হাজার ৮২৪ ডলার অর্থাৎ ২ লাখ ৬৮ হাজার ২৮০ টাকা। চা-শ্রমিকদের বার্ষিক আয় মাত্র ৪৩ হাজার ২০০ টাকা। আমরা তাই চা শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধির দাবির প্রতি সম্পূর্ণ সহমত পোষণ করে তাদের নায্য ও মানবিক ৩০০ টাকা ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণের জন্য সরকারের কাছে জোর দাবি জানাচ্ছি।
বিবৃতিদাতারা হলেন- মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশনের চেয়ারপার্সন সুলতানা কামাল, উন্নয়ন সংস্থা ‘নিজেরা করি’র সমন্বয়কারী খুশি কবির, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি জাফরুল্লাহ চৌধুরী, ড. হামিদা হোসেন, সিটিজেন প্ল্যাটফর্ম ফর এসডিজির আহ্বায়ক দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য, সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার, ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান, অর্থনীতিবিদ মোস্তাফিজুর রহমান, রিসার্চ ইনিশিয়েটিভ বাংলাদেশের (রিব) নির্বাহী পরিচালক ড. মেঘনা গুহঠাকুরতা, বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রানা দাশগুপ্ত প্রমুখ।












