চাষিদের মলিন মুখে এখন ফুলের হাসি

চকরিয়ায় কোটি টাকার বিকিকিনি

চকরিয়া প্রতিনিধি | রবিবার , ১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ at ১০:৫৫ পূর্বাহ্ণ

করোনা সংকটের শুরু থেকে মলিন ছিল চকরিয়ার ফুল চাষিদের মুখ। অন্যান্য খাতের মত এই খাতেও লোকসান গুনতে হয়েছে তাদের। তবে বসন্ত উৎসব ও বিশ্ব ভালবাসা দিবস উপলক্ষে সেই সংকট কাটিয়ে উঠতে পেরেছেন উপজেলার কয়েকশ ফুল চাষি। গত এক সপ্তাহ ধরে চকরিয়ায় চলছে রকমারি ফুল বিকিকিনির ধুম। ইতোমধ্যেই বিভিন্ন প্রজাতির অন্তত কোটি টাকার ফুল বিক্রি করেছেন তারা।
সংশ্লিষ্টরা জানান, প্রতিবছর বসন্ত উৎসব ও বিশ্ব ভালবাসা দিবস ঘিরে আয়োজনের কমতি থাকে না। ফুল ছাড়া যেন দিবস দুটি উদযাপনের কথা চিন্তাই করা যায় না। তাই চাহিদা মেটাতে চট্টগ্রাম, কক্সবাজারসহ দেশের বিভিন্ন জায়গার ব্যবসায়ীরা চকরিয়ার বরইতলী ও হারবাং থেকে আগেই বিভিন্ন প্রজাতির ফুল কিনে নিয়েছেন।
গোলাপ নগর খ্যাত বরইতলী ও হারবাং ইউনিয়নের ফুল চাষিরা জানান, দুই ইউনিয়নে প্রায় পাঁচ শতাধিক নারী ও পুরুষ শ্রমিক ফুলের বাগানে কাজ করেন। তারা জানান, রকমারি ফুলের চাহিদা থাকলেও গত এক সপ্তাহে গোলাপ ও গ্লাডিওলাস বিক্রি হয়েছে সবচেয়ে বেশি।
চট্টগ্রামের কাজীর দেউরি, চেরাগী পাহাড়, আগ্রাবাদসহ মহানগরের বড় বড় ব্যবসায়ীদের কাছে চকরিয়ার ফুলের চাহিদা রয়েছে। তারা অন্তত একমাস আগেই নানা রঙের গোলাপ, গ্লাডিওলাস, রজনীগন্ধাসহ রকমারি ফুলের চাহিদা জানিয়ে থাকেন। এবারও এর ব্যতিক্রম হয়নি।
বরইতলী গোলাপ বাগান মালিক সমিতির আহ্বায়ক মো. মঈনুল হোসেন বলেন, দেশের বিভিন্ন প্রান্তের অন্তত তিন শতাধিক পাইকারি ব্যবসায়ী কোটি টাকার ফুলের অর্ডার দিয়েছেন।
বরইতলী থেকে পাইকারি দরে ফুল কিনে চট্টগ্রামের চেরাগী পাহাড় মোড়ে বিক্রি করেন কয়েকজন ব্যবসায়ী। তাদের একজন সুভাষ দে। তিনি বলেন, প্রতিদিন গড়ে ৫-১০ হাজার পিস ফুল কেনা হয় বরইতলী থেকে। আর বিশেষ দিবসে তা কয়েকগুণ ছাড়িয়ে যায়। এবার বসন্ত উৎসব ও ভালবাসা দিবস উপলক্ষে প্রায় ৫০ হাজার গোলাপ ও গ্লাডিওলাস ফুল আগাম সংগ্রহ করা হয়েছে।
বরইতলী একতা বাজার এলাকার ফুল চাষি নজির আহমদ। তিনি বলেন, আমি একসময় তামাকের চাষ করতাম। মুনাফাও ভাল পেয়েছিলাম। কিন্তু হাড়ভাঙা খাটুনি ও দিন-রাত পরিশ্রমের কারণে শরীরের অবস্থা তেমন ভাল যাচ্ছিল না। তাই অন্যদের দেখাদেখি তামাক চাষ ছেড়ে গত আট বছর ধরে উদ্যোগি হই ফুল চাষে। কিন্তু গেল প্রায় একবছর ধরে করোনা সংকটের কারণে আমাদের অবস্থা তেমন ভাল যায়নি। এরপরও দুই কানি জমিতে গোলাপ ও গ্লাডিওলাস ফুলের চাষ করেছি। ফলন ভাল হওয়ায় এবং দামও পাওয়ায় বেশ খুশি লাগছে।
নজির আহমদ আরো বলেন, প্রতিদিন সকালে বাগান থেকে ফুল তোলার পর চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের পাইকাররা সরাসরি এসে কিনে নিয়ে যাচ্ছে। অনেক পাইকার আগাম অর্ডারও দিয়ে রেখেছিলেন। এবার প্রায় চার লাখ টাকার ফুল বিক্রি করেছি।
চাষিরা জানান, প্রতিটি গোলাপের দাম মানভেদে পাইকারিভাবে বিক্রি হচ্ছে ৮ থেকে ১০ টাকায়। আর রকমারি রংয়ের গ্লাডিওলাস ফুল বিক্রি হচ্ছে ১০ থেকে ১৫ টাকায়। এতে চাষির পাশাপাশি বাগান পরিচর্যা ও ফুল তোলায় নিয়োজিত শ্রমিকদের মুখেও হাসি ফুটেছে।
বরইতলী পূর্ব পাড়ার বাগান শ্রমিক তসলিমা বেগম, ফিরোজা বেগম বলেন, ফুল বাগানে শ্রম দিয়ে প্রতিদিন রোজগার করছি। এতে পরিবারের অভাব-অনটন বলতে গেলে আর নেই।
সরেজমিনে ফুল চাষি ও শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চকরিয়া উপজেলার বরইতলী ও হারবাং ইউনিয়নে দেড় শতাধিক বাগান রয়েছে। বিশেষ দিনগুলোতে এসব বাগানের ফুলের ব্যাপক কদর রয়েছে। গত দুই দশক ধরে এখানকার চাষীরা রুটি-রুজির একমাত্র অবলম্বন হিসেবে ফুল চাষ করে আসছেন।
চকরিয়া ফুল বাগান সমিতির আহ্বায়ক মো. মঈনুল ইসলাম বলেন, করোনা সংকটের কারণে দীর্ঘ কয়েকমাস বন্ধ রাখতে হয়েছিল ফুলের চাষ। তখন চাষি থেকে শুরু করে বাগান শ্রমিকরা কর্মহীন হয়ে পড়েন। পরিবারের ভরণ-পোষণ করতেও হিমশিম খেতে হয়েছে। তবে বসন্ত উৎসব ও বিশ্ব ভালবাসা দিবসের কারণে গত একমাস ধরে ফুলের কদর যথেষ্ট বেড়েছে। এতে করোনার ক্ষতিও কাটিয়ে উঠা যাচ্ছে। চাহিদা বাড়ায় বরইতলীর দেড় শতাধিক ফুল চাষির প্রত্যেকে সর্বোচ্চ তিন লাখ টাকা পর্যন্ত লাভের মুখ দেখেছে।
চকরিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা এস এম নাসিম হোসেন বলেন, দাপ্তরিক হিসেবে প্রায় ২০০ একর জমিতে গোলাপ এবং প্রায় দেড়শ একর জমিতে গ্লাডিওলাস ফুলের চাষ হয়েছে। ফুল চাষিদের প্রণোদনা বা অন্য কোনোভাবে সরকারি সহায়তা দেওয়ার বিধান না থাকলেও কৃষি দপ্তর থেকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেওয়া হয় বলে জানান তিনি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধহিমশীতল মস্কো সর্বনাশা তুষারের নিচে
পরবর্তী নিবন্ধসিডনিতে মাছ শিকারে গিয়ে ২ বাংলাদেশির মৃত্যু