চালের বর্তমান সংকট মোকাবেলা করতে হবে

| মঙ্গলবার , ৭ জুন, ২০২২ at ৫:৫৩ পূর্বাহ্ণ

আমাদের দেশে একটার পর একটা ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করছে দেশের সাধারণ মানুষ। পাশাপাশি সরকারও। নিত্য পণ্যের বাজার অস্থির করার প্রবণতা আমরা লক্ষ করছি বেশ কিছুদিন ধরে। বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে অসাধু ব্যবসায়ীরা। সরকার এই অসাধু ব্যবসায়ীদের পাতা ফাঁদ থেকে উদ্ধার পাওয়ার চেষ্টা করেও নিস্তার পায় না। কখনো ভোজ্য তেল, কখনো পেঁয়াজ, কখনো চাল- এভাবে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে বাজারটা অস্থির করে রাখে ওরা। বাংলাদেশ ট্যারিফ কমিশনের একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে পত্রিকান্তরে। সেখানে বলা হয়েছে, গত এক বছরের ব্যবধানে নিত্যপ্রয়োজনীয় কোনো পণ্যের দাম কমেনি। বরং পণ্যভেদে দাম বেড়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পণ্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে বরাবরের মতোই গতানুগতিক পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। বাজারে মনিটরিং জোরদার করা হচ্ছে না। ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেটের কাছে অসহায় হয়ে পড়েছে সব ব্যবস্থা। ব্যবসায়ীরা দাম বাড়িয়ে দিলে আর কমাতে চান না। এ ক্ষেত্রে দুটি কারণ রয়েছে, এক. বাজার মনিটরিং নেই, দুই. বিদ্যমান আইনের সঠিক প্রয়োগ নেই। মাঝেমধ্যে কিছু মোবাইল কোর্ট বের হয়। কিন্তু এটা বাজারে তেমন প্রভাব ফেলতে পারে না। নিত্যপণ্যে দর নিয়ন্ত্রণে তদারকি জোরদার করার বিকল্প নেই। ব্যবসায়ীরা যেন বিভিন্ন পণ্য নিয়ে একচেটিয়া প্রভাব না ফেলতে পারেন, সে ব্যবস্থাও নিতে হবে। নিজেদের সক্ষমতা থাকলে অসাধু চক্র সুযোগ নিতে পারবে না।

আমাদের অত্যন্ত দুঃখের বিষয়, বাংলাদেশে কোনো পণ্যের দাম একবার বেড়ে গেলে সেটি কমার উদাহরণ নেই। অর্থনীতির স্বাভাবিক নিয়ম অনুযায়ী, পণ্যের সরবরাহ কমলে দাম বাড়ে আর সরবরাহ বাড়লে দাম কমে। কিন্তু বাংলাদেশে সব সময় এই নিয়ম খাটে না।

চালের বাজার স্থিতিশীল করতে এবং সারা দেশে ধান ও চালের অবৈধ মজুদ খুঁজে বের করতে ‘গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে’ খাদ্য মন্ত্রণালয়সহ সরকারের বিভিন্ন তদারক সংস্থা মাঠে নেমেছে বলে জানা গেছে।

খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী অবৈধ মজুদ প্রতিরোধে জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও এনএসআই, র‌্যাব ও জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরকে কাজে লাগানো হচ্ছে।

তবু চালের বাজারে প্রত্যাশিত সুখবর পাচ্ছেন না ক্রেতারা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চালের বাজার ঠিক রাখতে খাদ্য মন্ত্রণালয় সঠিক সময়ে পদক্ষেপ নেয়নি। হঠাৎ করে অভিযান চালালেও প্রত্যাশিত সুফল মিলছে না। বিশ্লেষকরা জানান, অভিযানের কারণে বাজারে সাময়িক প্রভাব পড়লেও দীর্ঘমেয়াদে সুফল দেবে না। বর্তমান পরিস্থিতিতে চাল আমদানির প্রক্রিয়া শুরু করলে চালের বাজার প্রত্যাশিত অবস্থানে যাবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞ ও মাঠপর্যায়ের পর্যবেক্ষকরা। তাঁরা বলছেন, করপোরেট ব্যবসায়ী ও মিল মালিকরা পরিকল্পিতভাবে চালের বাজার উত্তপ্ত করেছে। সেটা বুঝতে ব্যর্থ হয়েছে খাদ্য মন্ত্রণালয়। খাদ্য সচিব ড. নাজমানারা খানুমের বক্তব্য প্রকাশিত হয়েছে পত্রিকান্তরে। তিনি সেখানে বলেছেন, ‘চালের বাজার যে পর্যায়ে চলে গেছে সেখান থেকে আমাদের (অর্থাৎ সরকার) প্রত্যাশিত পর্যায়ে আনতে বেসরকারিভাবে চাল আমদানি প্রয়োজন বলে আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি।’

খাদ্য সচিব যুক্তি দিয়ে বলেন, ‘প্রান্তিক পর্যায়ের অনেক কৃষক তাদের ধান বিক্রি করে ফেলেছেন। এখন বড় কৃষকদের মধ্যে যাদের হাতে ধান আছে তারাও বিক্রি করে দিচ্ছেন। সরকার চাল আমদানি করার প্রক্রিয়া শুরু করতে করতে কৃষকের হাতে কোনো ধান থাকবে না। তাই তখন চাল আমদানিতে কোনো সমস্যা আছে বলে আমার মনে হয় না।’

বাংলাদেশে চাল উৎপাদন ও চাহিদার সঠিক কোনো পরিসংখ্যান নেই। খাদ্য মন্ত্রণালয়ও জানে না। তাই কী পরিমাণ চাল মজুত আছে বা থাকে এবং কী পরিমাণ চাল আমদানি করতে হবে, তার সঠিক হিসাব তাদের আয়ত্তে নেই। যদিও বলা হয়েছে, বর্তমান পরিস্থিতিতে দেশে চালের চাহিদার তুলনায় উদ্বৃত্ত আছে। কিন্তু মিল মালিক ও করপোরেট ব্যবসায়ীরা ধান মজুত রাখার কারণে বাজারে চালের দাম বেড়ে গেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগে প্রকাশ, মূলত ধান নিয়ন্ত্রণকারী বড় বড় মিলার সিন্ডিকেটরা তাদের হাতে থাকা আগের চাল বেশি দামে বিক্রি করার জন্য এই কারসাজির আশ্রয় নিয়েছে।
এ অবস্থায় চাল আমদানি করে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার কথা ভাবতে হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে