নির্বাচনের পর হঠাৎ করে যেভাবে চালের দাম বেড়েছে, তা স্বাভাবিক বলে মনে করছেন না প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দুরভিসন্ধি নিয়ে কোনো পণ্য মজুদ করলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিয়ে ‘জেলে পাঠিয়ে দেওয়া হবে’ বলেও তিনি হুঁশিয়ার করেছেন। গতকাল সোমবার গণভবনে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের জরুরি সভার আগে প্রধানমন্ত্রী সাংবাদিকদের সামনে বলেন, নির্বাচনে এদেশের মানুষ যখন অংশগ্রহণ করেছে, এখন অযথা একটা ধূম্রজাল সৃষ্টি করার চেষ্টা করা হচ্ছে। সবচেয়ে অবাক লাগে, কথা নাই বার্তা নাই হঠাৎ করে চালের দাম বেড়ে গেল, জিনিসের দাম বেড়ে গেল! খবর বিডিনিউজের।
করোনভাইরাস মহামারীর পর ইউক্রেন–রশিয়া যুদ্ধ এবং পাল্টাপাল্টি নিষেধাজ্ঞার জেরে সারা বিশ্বেই যে মূল্যস্ফীতি বেড়েছে, সেই বাস্তবতা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, শুধু বাংলাদেশ না, উন্নত দেশও ধাক্কা সামাল দিতে পারছে না। যে সকল জিনিস আমাদের বাইরে থেকে ক্রয় করতে হয়ে, যেমন গম, চিনি, ভোজ্য তেল, গ্যাস এগুলো আমাদের ক্রয় করতে হয়। কারণ আমাদের যা আছে তা চাহিদার চেয়ে অনেক কম। আমাদের দেশ, সতের কোটি মানুষের দেশ। যে সকল জিনিস আনতে হয়, এগুলোর উচ্চ মূল্য, পরিবহন ব্যায় বেড়েছে, সেই কারণে মূল্যস্ফীতি বেড়েছে।
সেজন্য শুরু থেকেই উৎপাদন বাড়ানোর ওপর জোর দিয়ে আসার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এবার আমাদের ফসল ভালো হয়েছে, চাল উৎপাদন বেড়েছে। তারপরেও হঠাৎ দাম বাড়াটা এই রকম ভরা মৌসুমে, এটা অস্বাভাবিক পরিস্থিতি।
এর পেছনে কারা আছে, সেটা খুঁজে বের করার তাগিদ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এদের বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিতে হবে এবং এটা আমরা আগামীতে করব। দুরভিসন্ধিমূলক কোনো জিনিস যদি মজুদ করে রাখে – এ রকম যাকেই পাওয়া যাবে, মোবাইল কোর্ট দিয়ে সঙ্গে সঙ্গে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব। দরকার হলে জেলে ঢুকিয়ে দিতে হবে। আগামীতে আমরা সেই ব্যবস্থাটাই নেব। এখন থেকে প্রথমে ওই জায়গাতে আঘাত করতে হবে। ডিম, সেটাও মজুদ করে রাখা হয়। এর আগে পেঁয়াজ একটার পর একটা পচা পেয়াজের বস্তা ফেলে দেওয়া হল। এটা কোন ধরনের কথা? মানুষের খাবার নিয়ে খেলা, এর তো কোন অর্থ হয় না। আর এই ভরা মৌসুমে চালের দাম বাড়ারও কথা না। এ সময় তো আরও কমে জিনিসের দাম।
সরবরাহের কোনো সঙ্কট নেই জানিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, যে কোনো কৃষি পণ্যের দাম বাড়লে যারা ভোক্তা তাদের কষ্ট হয়। কৃষক যদি দামটা পায় তারা খুশি হয়। কৃষক ন্যায্য দামটা পাচ্ছে। কিন্তু যে দামটা পরিবহন সব মিলিয়ে হওয়া উচিৎ, তার থেকে অতিরিক্ত বেশি। সেজন্য দুরভিসন্ধি নিয়ে যদি কেউ মজুদ রাখে, তার বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা আমরা নেব। মোবইল কোর্টের মাধ্যমে শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে।
নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধির পেছনে বিএনপির হাত থাকার সন্দেহ প্রকাশ করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, নির্বাচন শেষ হওয়ার পর আরও কিছু চেষ্টা করা হয়েছে, গার্মেন্টের মজুরি বাড়ানো হল, তারপরেও রাত ১২টা বাজে গার্মেন্টস শ্রমিকদের আন্দোলন। এটা করে ব্যর্থ হয়েছে, ব্যর্থ হয়ে এখন অন্যভাবে নামতে চাচ্ছে। সেভাবে করতে দেব না। বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে দেবে না। মানুষ আনন্দিত, খুশি। এই পর্যন্ত যে উন্নয়নটা করেছি, এর সুফলটা যেন জনগণ পায়, এই চেষ্টাটাই করছি।