চালবোঝাই ট্রাকের ধাক্কা, উল্টে গেল মালবাহী ট্রেনের ইঞ্জিন ও কন্টেনার

সাগরিকায় নিরাপত্তা প্রহরী নিহত ট্রেন চালক ও সহকারী আহত, তদন্ত কমিটি

আজাদী প্রতিবেদন | বুধবার , ২৯ অক্টোবর, ২০২৫ at ৭:৩৯ পূর্বাহ্ণ

নগরীর সাগরিকা ক্রিকেট স্টেডিয়াম এলাকার রেল গেটে চালবোঝাই একটি ট্রাকের সঙ্গে মালবাহী ট্রেনের সংঘর্ষে শামসুল হাই আলম (৬০) নামে এক নিরাপত্তা প্রহরী নিহত হয়েছেন। এতে ট্রেনের চালক ও সহকারী চালক আহত হয়েছেন। সংঘর্ষের পর ট্রেনের ইঞ্জিনসহ একটি কন্টেনার উল্টে যায় এবং চট্টগ্রাম বন্দরের গুডস ইয়ার্ড থেকে মালবাহী ট্রেন চলাচল বন্ধ রয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার ভোরে এ দুর্ঘটনা ঘটে। দুর্ঘটনার কারণ খতিয়ে দেখতে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ চার সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে।

আহত দুজন হলেন লোকোমাস্টার (ট্রেন চালক) মনিরুল ইসলাম ও সহকারী লোকোমাস্টার মো. আলমগীর। তাদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। দুর্ঘটনার পর ট্রাক চালক পালিয়ে গেছেন।

রেলওয়ে সূত্র জানায়, ভোর ৪টা ১০ মিনিটে চিটাগং গুডস পোর্ট ইয়ার্ড থেকে ৩১টি কন্টেনার নিয়ে মালবাহী ট্রেনটি কমলাপুর ইনল্যান্ড কন্টেনার ডিপোর (আইসিডি) উদ্দেশ্যে যাত্রা করে। আট মিনিট পর ভোর ৪টা ১৮ মিনিটে ট্রেনটি সাগরিকা স্টেডিয়াম সংলগ্ন রেল গেটে পৌঁছালে বিপরীত দিক থেকে আসা দ্রুত গতির চালবোঝাই ট্রাকটি ট্রেনটিকে সজোরে ধাক্কা দেয়। এতে দায়িত্বে থাকা সিকিউরিটি গার্ড শামসু হাই আলম ট্রাকের চালের বস্তার নিচে চাপা পড়ে গুরুতর আহত হন। পরে তাকে উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। নিহত শামসুল হাই আলম পাহাড়তলীর দিদার কলোনির বাসিন্দা ছিলেন। তার বাড়ি কিশোরগঞ্জে।

চট্টগ্রাম রেলওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শহিদুল ইসলাম বলেন, দুর্ঘটনায় এক নিরাপত্তা প্রহরী নিহত হয়েছেন। কন্টেনারবাহী ট্রেনটি সিজিপিওয়াই থেকে ঢাকার উদ্দেশে যাচ্ছিল। ট্রেনটি সাগরিকা ক্রিকেট স্টেডিয়ামের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় একটি ট্রাক লাইনে উঠে পড়ে এবং ট্রেনের ইঞ্জিনকে ধাক্কা দেয়। সংঘর্ষের পর ট্রাকটি উল্টে গিয়ে নিরাপত্তা প্রহরীকে চাপা দিলে তার মৃত্যু হয়। দুর্ঘটনার পর ট্রাক চালক পালিয়ে গেছেন। দুর্ঘটনার কারণে পণ্যবাহী ট্রেন চলাচল সাময়িকভাবে বন্ধ আছে। তবে যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচলে কোনো প্রভাব পড়েনি।

স্থানীয়রা জানান, নিহত শামসু হাই আলম দীর্ঘদিন ধরে ওই এলাকায় সিকিউরিটি গার্ড হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। দুর্ঘটনার পর রেল গেটে গেটম্যানের দায়িত্ব পালনে অবহেলা ছিল কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। ঘটনাস্থলে ব্যারিয়ার ভাঙা অবস্থায় পাওয়া গেলেও গেটম্যান সিফাত দাবি করেছেন, তিনি নিয়ম অনুযায়ী গেট নামিয়েছিলেন। তার বক্তব্য, ট্রাকটি অতিরিক্ত গতিতে আসায় সংঘর্ষ হয়।

রেলওয়ের কর্মকর্তারা মনে করছেন, ট্রাক চালকের অসতর্কতাই দুর্ঘটনার মূল কারণ। তবে কারো অবহেলা ছিল কিনা তা তদন্ত শেষে নিশ্চিত করা হবে।

রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের বিভাগীয় পরিবহন কর্মকর্তা আনিসুর রহমান বলেন, দুর্ঘটনার বিষয়টি তদন্তে চার সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। ট্রেনের কন্টেনারগুলো সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে এবং দুর্ঘটনায় কোনো রেলকর্মীর গাফিলতি ছিল কিনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

লাইনচ্যুত ইঞ্জিন ও বগি উদ্ধারের জন্য পাহাড়তলী ও কুমিল্লার লাকসাম থেকে উদ্ধারকারী ট্রেন এসেছে। ট্রেনের বাকি মালবাহী বগিগুলো সিজিপিওয়াই স্টেশনে নেয়া হয়েছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধহাঁস চুরির অভিযোগে দুই ব্যক্তিকে ডেকে এনে নির্যাতন
পরবর্তী নিবন্ধসাবেক ছাত্রদল নেতাসহ দুই আসামি গ্রেপ্তার