চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ চমৎকার ও প্রয়োজনীয় একটি উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন। প্রাথমিকভাবে যান চলাচলের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ চারটি সড়ককে চারলেনে উন্নীত করার পদক্ষেপ নিয়েছেন কর্তৃপক্ষ। এটাকে প্রশংসনীয় উদ্যোগ বলে নগর পরিকল্পনাবিদরা মনে করছেন।
অর্থনৈতিক উন্নয়নে যোগাযোগ ব্যবস্থার গুরুত্ব অত্যধিক। মূলত একটি দেশের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড আবর্তিত হয় যোগাযোগ ব্যবস্থার ওপর নির্ভর করে। যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি হলে কৃষিপণ্য, শিল্পের কাঁচামাল এবং শিল্পজাত পণ্য সামগ্রী সহজে ও স্বল্প ব্যয়ে স্থানান্তর করতে সুবিধা হয়। এর ফলে দেশের উৎপাদন বৃদ্ধি পায়, শিল্প ও ব্যবসার প্রসার ঘটে। এজন্য যোগাযোগ ব্যবস্থাকে অর্থনৈতিক উন্নয়নের হাতিয়ার হিসেবে বিবেচনা করা হয়। যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নকে কোনো দেশের সার্বিক উন্নয়নের চাবিকাঠিও বলা হয়। যোগাযোগ প্রতিবন্ধকতা উন্নয়নকে শুধু ব্যাহতই করে না, দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য, যোগাযোগ প্রযুক্তি, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ গুরুত্বপূর্ণ সব খাতে দেখা দেয় মন্থরগতি। বর্তমান সরকার তাই যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নেই সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়েছে।
গত ১২ অক্টোবর দৈনিক আজাদীতে প্রকাশিত ‘নগরীর চার গুরুত্বপূর্ণ সড়ক হবে চার লেন’ শীর্ষক সংবাদে বলা হয়, নগরীতে মানুষের সংখ্যা প্রতিদিনই বাড়ছে। বাড়ছে যানবাহনের সংখ্যাও। নগরীর বিভিন্ন সড়ক গত বছর ধরে সমপ্রসারণ করা হয়েছে। কিন্তু কয়েকটি সড়ক সমপ্রসারিত না হওয়ায় শহরে যান চলাচলের ক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। এই অবস্থা থেকে উত্তরণে এবং যান চলাচলে গতি আনতে নগরীর চারটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সড়ক সম্প্রসারণের একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে সিডিএ।
গুরুত্বপূর্ণ সড়ক সম্প্রসারণের মধ্য দিয়ে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ সরকারের এজেন্ডাকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। বহু মেগা প্রকল্প গ্রহণ করে ইতিমধ্যে সরকারের ঝুলিতে জমা পড়েছে অনেক প্রশংসার ঝাঁপি। অর্থনীতি বিশ্লেষকরা বলেন, সরকার যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে অবকাঠামো নির্মাণে জনগুরুত্বপূর্ণ ও মেগা প্রকল্প হাতে নিয়েছে। প্রকল্পগুলো শেষ হলে অর্থনীতিতে ভালো ফল পাওয়া যাবে। তাঁরা বলেন, মেগা প্রকল্পগুলোর মধ্যমেয়াদে পর্যালোচনা করতে হবে। বর্তমান সরকার বড় বড় প্রকল্প নেওয়ার ফলে বিদ্যুতে ব্যাপক উন্নতি হয়েছে। মেট্রো রেলের কাজ চলছে। এসব প্রকল্প শেষ হলে অর্থনীতিতে বড় প্রভাব পড়বে। সড়ক সম্প্রসারণে নেওয়া হচ্ছে উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ।
চট্টগ্রাম মহানগরীর গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলোর সম্প্রসারণের ফলে যে অগ্রগতি সাধিত হবে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। যানজটে যাত্রীদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকে থাকতে হয় এ সব সড়কে। চলাচলে মানুষের দুর্গতি ও ভোগান্তির শেষ নেই। তদুপরি সড়কগুলো অত্যন্ত গুরুত্ববহ। এতোদিন যে এইসব সড়ক সম্প্রসারণ হয়নি, তা ছিল নিতান্তই অপ্রত্যাশিত ব্যাপার। চট্টেশ্বরী মোড় থেকে গোলপাহাড় পর্যন্ত এক কিলোমিটারের মতো সড়কের অবস্থা অত্যন্ত নাজুক। এই সড়কের ওপর নগরীর দুটি বড় হাসপাতাল বিদ্যমান হওয়ায় সব সময় লেগে থাকে ভয়াবহ যানজট। এক সময় নগরীর অন্য সড়কগুলো সম্প্রসারিত হলেও উদ্যোগ নেওয়া সত্ত্বেও অজানা কারণে তা হয়নি।
চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের প্রধান প্রকৌশলীর বরাত দিয়ে আজাদীতে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, চারটি রাস্তাই খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাই আমরা এগুলো সমপ্রসারণের উদ্যোগ নিয়েছি। এগুলো পুরো শহরের যান চলাচলের উপর প্রভাব ফেলে মন্তব্য করে সিডিএ চিফ ইঞ্জিনিয়ার বলেন, আমরা হিসেব নিকেশ করছি। প্রকল্প ব্যয় সাড়ে ৪০০কোটি টাকা। প্রকল্পের ৭০ শতাংশ টাকা খরচ হবে ভূমি অধিগ্রহণ এবং ক্ষতিপূরণ প্রদানে। বাকি ৩০ শতাংশ অর্থ ব্যয় হবে রাস্তা সমপ্রসারণে।
এ কথা না বললে নয় যে দেশকে উন্নতির দ্বারপ্রান্তে নিতে একের পর এক মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ভৌত অবকাঠামো উন্নয়নে নেওয়া হয়েছে মেগা প্রকল্প। এসব প্রকল্পের কাজ শেষ হলে ত্বরান্বিত হবে দেশের অর্থনীতি। কর্মসংস্থানের পাশাপাশি বাড়বে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিও। অর্থনৈতিক উন্নয়নে যোগাযোগ ও অবকাঠামো উন্নয়নে জোর দিয়েছেন তিনি। করোনাভাইরাস সংক্রমণের কারণে অর্থনীতির স্থবিরতার মধ্যেও থেমে নেই উন্নয়ন কাজ। সিডিএ’র এ প্রকল্প হতে পারে সরকারের আরেক সেরা কাজ। আমরা প্রত্যাশা করবো অতি শীঘ্রই এ প্রকল্পের কাজ শুরু হবে।