আর কয়দিন পর ২৮ অক্টোবর খুলে যাবে স্বপ্নের নতুন দুয়ার। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন কর্ণফুলীর তলদেশে নির্মিত দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল। টানেল উদ্বোধনকে ঘিরে কর্ণফুলীর দুই তীরে বেড়েছে ব্যস্ততা। টানেল প্রকল্প কর্তৃপক্ষ আগেই জানিয়েছে তারা প্রস্তুত। এই টানেলের সুফল নিশ্চিতে সংযোগ সড়ক প্রকল্পে বহুমুখী নেটওয়ার্ক যুক্ত করতে চলছে নানা চেষ্টা। আগামী একনেকে কর্ণফুলীর শিকলবাহা ওয়াই জংশন থেকে কালাবিবির দীঘি পর্যন্ত ১১ কিলোমিটার দীর্ঘ ছয় লেনের সংযোগ সড়কের সংশোধিত প্রস্তাব (আরডিপিপি) অনুমোদনের জন্য পেশ করা হবে। তা অনুমোদন পেলে নতুন করে আরো ২৭ কোটি টাকা মিলবে এই প্রকল্পে। এতে অধিগ্রহণ দ্রুত সম্পন্নের পাশাপাশি সময়োপযোগী কিছু পরিকল্পনা যুক্ত হবে। টানেল অতিক্রমের পর এই সংযোগ সড়ক হয়ে কক্সবাজার পর্যন্ত চলাচল করবে ভারী যানবাহনগুলো। তাই টানেলের পাশাপাশি এই সড়ক পুরোপুরি প্রস্তুত করার বিষয়টি আলাদা গুরুত্ব পাচ্ছে।
তবে ছয় লেনের সংযোগ সড়ক এখন পর্যন্ত চার লেন বাস্তবায়ন, রাস্তার উপরে গাড়ি স্ট্যান্ড, ভূমি অধিগ্রহণ জটিলতায় কিছু স্থানে অপ্রশস্ত সড়কের কারণে ভারী যানবাহন শুরুর পর পরিস্থিতি কী দাঁড়াবে তা নিয়ে চলছে নানা হিসাব নিকেশ। প্রধানমন্ত্রী এবার টানেল প্রকল্পের উদ্বোধন করলেও সংযোগ সড়কের উদ্বোধন এখনই হচ্ছে না। কাজ পুরোপুরি শেষ করতে আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত লাগতে পারে বলে জানিয়েছে সড়ক ও জনপথ বিভাগ।
ছয় লেনের টানেল সংযোগ সড়ক প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক সওজের নির্বাহী প্রকৌশলী সুমন সিংহ আজাদীকে বলেন, টানেল চার লেনের, সে অনুযায়ী চার লেনের সংযোগ সড়কও প্রস্তুত। তাই টানেলের গাড়ি চলাচলে কোনো সমস্যা হওয়ার কথা নয়। বাকি দুই লেনের কাজ ভূমি অধিগ্রহণসহ কিছু কারণে পুরোপুরি শেষ হয়নি। ডিসেম্বরের মধ্যে ছয় লেন পুরোটাই প্রস্তুত হয়ে যাবে আশা করছি।
সওজ সূত্র জানায়, ক্ষতিপূরণের টাকা বরাদ্দ না হওয়ায় তিন স্পটে এখনও চার লেনের সড়ক প্রশস্তের কাজ শেষ শুরু করা যায়নি। এর মধ্যে মূল সমস্যা ব্যস্ততম চৌমুহনী বাজার। এখানে অধিগ্রহণকৃত মার্কেট ও দোকানপাট সরানো যায়নি। রাস্তার উপরেই বাস ও টেঙি স্ট্যান্ডের কারণে দিনের বেশিরভাগ সময় যানজট লেগেই থাকে। টানেল উদ্বোধনের পর ভারী যানবাহন চলাচল শুরু করলে যানজট ভয়াবহ রূপ নিতে পারে বলে আশংকা রয়েছে। এছাড়া কালাবিবির দীঘি এলাকার একটি জরাজীর্ণ এক তলা মার্কেট, বড়উঠান এলাকায় রাস্তা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে থাকা তিন তলা একটি বাড়ি সরানো যায়নি ক্ষতিপূরণ বরাদ্দ না দেয়ায়। সওজ কর্মকর্তারা বলছেন, আগামী একনেক বৈঠকে এই প্রকল্পের ভূমি অধিগ্রহণ সংক্রান্ত সংশোধিত প্রস্তাব (আরডিপিপি) অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে। সেটি অনুমোদিত হলে অধিগ্রহণের বাকি ২৭ কোটি টাকা জেলা প্রশাসক কার্যালয়কে হস্তান্তর করা যাবে। এর আগে ৮৭ কোটি টাকা হস্তান্তর করা হয়েছে। পুরো টাকা দেয়ার পর অধিগ্রহণে আর কোনো সমস্যা থাকবে না।
এদিকে দ্রুতগতি এই সড়ক নিরাপদ করতে অন্তত পাঁচটি ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানা গেছে। চাতরী চৌমুহনী, দৌলতপুর কেইপিজেড মোড়, ফকিরনীরহাট রাস্তার মাথাসহ সড়কের ব্যস্ততা ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অবস্থান বিবেচনায় এসব স্পট চূড়ান্ত হবে। তখন সড়ক পারাপারে নিরাপদ ও দুর্ঘটনা কমে আসবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লষ্টরা।
এদিকে টানেল উদ্বোধনের পর প্রকল্প এলাকায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সমাবেশের স্থান চূড়ান্ত করতে প্রশাসন ও নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা ব্যস্ত সময় পার করছেন। টানেলের পতেঙ্গা প্রান্তে তৈরি হচ্ছে উদ্বোধনের নামফলক। এরপর টানেলের ভেতর দিয়ে পার হয়ে প্রধানমন্ত্রী টোল প্রদান শেষে আনোয়ারা প্রান্তে সমাবেশে যোগ দেবেন।
এদিকে টানেলকে পুরোপুরি প্রস্তুত করার অংশ হিসেবে গত ২ অক্টোবর ফায়ার সার্ভিসের চূড়ান্ত মহড়া সম্পন্ন হয়। টানেল প্রকল্পের দুই পাড়ে দুটি ফায়ার সার্ভিস স্টেশন হচ্ছে। স্টেশনের ভবন নির্মাণের কাজ এখনো চলমান রয়েছে। প্রথম শ্রেণির ফায়ার স্টেশন হলে কর্মকর্তা–সদস্য মিলে ৩৫ জন থাকবে। পাশাপাশি টানেল সুরক্ষায় পতেঙ্গা ও আনোয়ারা দুই প্রান্তে দুটি থানা করার পরিকল্পনা নিয়ে কাজ চলছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। ইতোমধ্যে পুলিশ সদর দফতরে এ প্রসঙ্গে প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে। পতেঙ্গা প্রান্তে প্রস্তাবিত থানাটির জন্য ৮১ জন জনবল চাওয়া হয়েছে।
প্রসঙ্গত, আগামী ২৮ অক্টোবর ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল’ উদ্বোধন হলে এটি হবে দেশের ইতিহাসে সরকারের দ্বিতীয় বৃহত্তম প্রকল্প। তিন দশমিক ৩২ কিলোমিটারের টানেলটি তিন মিনিট থেকে সাড়ে তিন মিনিটের মধ্যে এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে পার হওয়া যাবে। কর্ণফুলী নদীর তলদেশে ১৮ থেকে ৩১ মিটার নিচে এ টানেল দিয়ে মানুষ চলাচল করবে। এই প্রকল্পটি এক নজর দেখতে দুই প্রান্তে প্রতিদিনই ভিড় করছে হাজার হাজার মানুষ। আনোয়ারা প্রান্তে ইতিমধ্যে নতুন নতুন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠাসহ পাল্টে গেছে পুরো এলাকার চিত্র।