চার মাস আগে স্বামী হারালেন এবার হারালেন ঘর

সাতকানিয়ায় বন্যায় ভেঙেছে তিন হাজার বসতঘর

সাতকানিয়া প্রতিনিধি | সোমবার , ১৪ আগস্ট, ২০২৩ at ৬:৩২ পূর্বাহ্ণ

সাতকানিয়ার উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া স্মরণকালের সবচেয়ে ভয়াবহ বন্যায় প্রায় তিন হাজার বসতঘরের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। গৃহহীন হয়েছে অনেক পরিবার। বসতঘর হারানো এসব মানুষ পরিবার পরিজন নিয়ে এখন অত্যন্ত মানবেতর দিন যাপন করছে। উপজেলার ধর্মপুর ইউনিয়নের আচার্য পাড়ার প্রীতি শর্মা চার মাস আগে স্বামীকে হারিয়েছেন। এবার বন্যায় হারালেন ঘর। পরিবার নিয়ে তিনি এখন নিঃস্ব অবস্থায় দিনাতিপাত করছেন।

উপজেলা প্রশাসনের দেয়া তথ্যমতে, এবারের বন্যায় সাতকানিয়ার ১৭টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভায় ২ হাজার ৮ শত ৮৯টি বসত ঘর সম্পূর্ণ ভেঙে গেছে। আংশিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৩ হাজার ৮ শত ৫টি বসত ঘর।

সাতকানিয়া উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) মোহাম্মদ কামরুল হোসাইন জানান, বিভিন্ন ইউপি চেয়ারম্যান ও পৌরসভার মেয়রের দেয়া তথ্যমতে, চরতিতে ১৮৫ টি বসত ঘর, খাগরিয়ায় ৯০টি নলুয়ায় ৩৮টি, কাঞ্চনায় ১৫০টি, আমিলাইষে ১৩০টি, এওচিয়ায় ৬৩টি, মাদার্শায় ১০টি, ঢেমশায় ৬৫টি, পশ্চিম ঢেমশায় ৩৫টি, কেঁওচিয়ায় ৬০টি, কালিয়াইশে ২৩৫টি, ধর্মপুরে ৩৬৫টি, বাজালিয়ায় ১৫০টি, পুরানগড়ে ৫০টি, ছদাহায় ১৫টি, সাতকানিয়া সদর ইউনিয়নে ১০০টি, সোনাকানিয়ায় ৮৪টি ও পৌরসভায় ৬৬৪টি বসত ঘর সম্পূর্ণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

এছাড়া চরতিতে ৭৮০টি, খাগরিয়ায় ৩০০টি, নলুয়ায় ২৫টি, কাঞ্চনায় ২০টি, আমিলাইষে ২৬৭টি, এওচিয়ায় ৫৯টি, মাদার্শায় ১২টি, ঢেমশায় ১২টি, পশ্চিম ঢেমশায় ১৫টি, কেঁওচিয়ায় ১০০টি, কালিয়াইশে ৬০টি, ধর্মপুরে ২০০টি, বাজালিয়ায় ২০০টি, পুরানগড়ে ৭০টি, ছদাহায় ৩৫টি, সাতকানিয়া সদরে ৫০টি, সোনাকানিয়ায় ৩০০টি ও সাতকানিয়া পৌরসভায় ১৩০০টি বসত ঘর আংশিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

বন্যার পানিতে বসত ঘর হারানো ধর্মপুর ইউনিয়নের আচার্য পাড়ার প্রীতি শর্মা বলেন, গত চার মাস আগে আমি স্বামী হারিয়েছি। আর এবারের বন্যায় স্বামীর রেখে যাওয়া বসত ঘরটি হারিয়েছি। এখন আমি নিঃস্ব হয়ে গেছি। ছেলে মেয়েদের নিয়ে কোথায় থাকবো, কিভাবে ঘর তৈরি করবো কিছু বুঝে উঠতে পারছি না। এ মুহূর্তে ঘর করার মতো সামর্থ্য আমার নাই।

ধর্মপুর চাঁদের পাড়ার মনোয়ারা বেগম বলেন, এবারের বন্যায় আমাদের পুরো ঘর ভেঙে তছনছ হয়ে গেছে। ঘরের সব জিনিসপত্র মাটির নিচে চাপা পড়েছে। হঠাৎ করে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় ঘর থেকে কোনও ধরনের জিনিসপত্র বের করতে পারিনি। পরিবারের সবাই এক কাপড়ে বের হয়ে গেছি।

সাতকানিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মিল্টন বিশ্বাস জানান, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদেরকে সরকারিভাবে ঢেউটিন ও মজুরি বাবদ নগদ টাকা প্রদান করা হবে। ইতিমধ্যে আমরা ৭৫ বান্ডিল ঢেউটিন বরাদ্দ পেয়েছি। আগামীতে আরো বরাদ্দের বিষয়ে আশ্বাস পেয়েছি। আশা করছি দ্রুত সময়ের মধ্যে এসব বরাদ্দ পেয়ে যাবো।

পূর্ববর্তী নিবন্ধসিডিএর দুই নির্বাহী প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে চিঠি যাবে মন্ত্রণালয়ে
পরবর্তী নিবন্ধজাতীয় শোক দিবসে পটিয়ায় ১৫ হাজার মানুষের গণভোজ