জাহাজ জট পুরোপুরি কাটিয়ে চট্টগ্রাম বন্দরে অন অ্যারাইভাল বার্থিং চলছে কয়েকদিন ধরে। বিদেশ থেকে কন্টেনার নিয়ে আসা জাহাজ অপেক্ষা ছাড়াই সরাসরি বন্দর অভ্যন্তরের জেটিতে নোঙর করে কন্টেনার হ্যান্ডলিং করছে। এটি শিপিং বাণিজ্যের জন্য শুভ লক্ষণ এবং যেকোনো বন্দরের ইমেজের ক্ষেত্রে ইতিবাচক ভূমিকা রাখে বলে মন্তব্য করে বন্দরের দায়িত্বশীল সূত্রগুলো বলেছে, গত চার মাসে চট্টগ্রাম বন্দরে কন্টেনার হ্যান্ডলিং সাড়ে ৬ শতাংশ বেড়েছে। জুলাই ও আগস্ট মাসে সরকারের উপর্যুপুরি সাধারণ ছুটি ঘোষণা, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অচলাবস্থাসহ বিভিন্ন কারণে চট্টগ্রাম বন্দর জাহাজ এবং কন্টেনার জটের কবলে পড়েছিল। বন্দরে জাহাজের অবস্থানকাল আশঙ্কাজনকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছিল। সিঙ্গাপুর, কলম্বো, পোর্ট কেলাং থেকে কন্টেনার নিয়ে বহির্নোঙরে পৌঁছার এক সপ্তাহ পরেও বার্থিং না পাওয়ার ঘটনা ঘটছিল। বন্দরের অভ্যন্তরে কন্টেনার জমছিল। স্বাভাবিকভাবে ৩০ থেকে ৩২ হাজার টিইইউএস কন্টেনার থাকা ইয়ার্ডে কন্টেনারের সংখ্যা ৪৫ হাজার টিইইউএস ছাড়িয়ে গিয়েছিল। বন্দর পরিস্থিতির অবনতিতে ব্যবসায়ী–শিল্পপতিসহ আমদানি– রপ্তানিকারকদের মাঝে উদ্বেগের সৃষ্টি করেছিল। জাহাজ এবং কন্টেনার জট কমিয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার জন্য বন্দর কর্তৃপক্ষ নানা কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ এবং বাস্তবায়ন করে। এরই প্রেক্ষিতে কয়েক মাসের মধ্যে পরিস্থিতি পুরোপুরি স্বাভাবিক অবস্থায় নিয়ে আসা সম্ভব হয়েছে বলে মনে করেন বন্দর বিশেষজ্ঞরা। তারা বলেন, বর্তমানে শুধু স্বাভাবিক পরিস্থিতি নয়, সুবাতাস বইছে বলা যায়। ট্রান্সশিপমেন্ট পোর্ট থেকে আসা জাহাজগুলো সরাসরি বন্দরের জেটিতে নোঙর করছে। এটি একটি বড় ব্যাপার।
চট্টগ্রাম বন্দর সচিব মোহাম্মদ ওমর ফারুক জানান, কন্টেনার জাহাজকে বহির্নোঙরে অপেক্ষা করতে হচ্ছে না। বিদেশ থেকে এসেই বন্দরে বার্থিং নিয়ে কন্টেনার খালাস করছে, আবার বোঝাই করছে। বোঝাই শেষে সরাসরি বিদেশের বন্দরের উদ্দেশ্যে যাত্রা করছে। বন্দরের জাহাজের অবস্থানকাল প্রত্যাশার চেয়ে বেশি কমিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে।
তিনি বলেন, বন্দরে জাহাজের অবস্থানকাল কমে গেছে। গত বছরের চার মাসের তুলনায় চলতি বছরের জুলাই থেকে অক্টোবর পর্যন্ত চার মাসে বন্দরে কন্টেনার হ্যান্ডলিংয়ের পরিমাণ সাড়ে ৬ শতাংশ বেড়েছে। এটিও শুভ লক্ষণ। ব্যবসা–বাণিজ্যে গতিশীলতা তৈরি হয়েছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, চলতি বছরের জুলাই থেকে অক্টোবর পর্যন্ত চার মাসে আমদানি ও রপ্তানি মিলিয়ে চট্টগ্রাম বন্দরে ১১ লাখ ১ হাজার ৯১৭ টিইইউএস কন্টেনার হ্যান্ডলিং হয়েছে। গত বছর একই সময়ে এ সংখ্যা ছিল ১০ লাখ ৩০ হাজার ৭৫৭ টিইইউএস। এক বছরের ব্যবধানে চার মাসে ৭১ হাজার ১৬০ টিইইউএস বা ৬ দশমিক ৪৫ শতাংশ কন্টেনার বেশি হ্যান্ডলিং হয়েছে। ২০২২ সালে চার মাসে এই সংখ্যা ছিল ১০ লাখ ২৩ হাজার ৭৩৯ টিইইউএস।
বন্দর সূত্র জানায়, চলতি বছরের জুলাই মাসে ২ লাখ ৭১ হাজার ৩৩৫, আগস্টে ২ লাখ ৭১ হাজার ৮৬৯, সেপ্টেম্বরে ২ লাখ ৮৩ হাজার ৩২৪ এবং অক্টোবরে ২ লাখ ৭৫ হাজার ৩৮৯ টিইইউএস কন্টেনার হ্যান্ডলিং হয়েছে।
চট্টগ্রাম বন্দরে তুলনামূলকভাবে বড় জাহাজ আসছে উল্লেখ করে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, আগে ১২০০ থেকে ১৫০০ টিইইউএস কন্টেনার নিয়ে জাহাজ বন্দরে আসত। এখন সেখানে একটু বড় আকারের জাহাজ ২০০০ পর্যন্ত কন্টেনার নিয়ে আসছে। এতে জাহাজের সংখ্যা কমেছে, কন্টেনার হ্যান্ডলিং বেড়েছে। জাহাজের সংখ্যা কমায় বন্দরের ওপর জাহাজের চাপ কমেছে।
চট্টগ্রাম বন্দরে গত চার মাসে ১২৮১টি জাহাজ হ্যান্ডলিং করা হয়েছে; যা গত বছরের জুলাই থেকে অক্টোবর পর্যন্ত সময়ের তুলনায় ১৬১টি কম। ২০২৩ সালে উক্ত চার মাসে ১৩৯২টি জাহাজ এসেছিল। ২০২২ সালে ওই চার মাসে জাহাজ এসেছিল ১৪৬০টি।
ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিরা বন্দর পরিস্থিতিতে সন্তোষ প্রকাশ করে বলেছেন, একটি জাহাজকে একদিন অলস বসে থাকতে হলেও ফিঙড অপারেটিং কস্ট বা এফওসি বাবদ ১৫ থেকে ২০ হাজার ডলার গচ্ছা দিতে হয়। যার যোগান দিতে হয় সাধারণ ভোক্তাদের। বন্দরে জাহাজের অনঅ্যারাইভাল বার্থিং এক্ষেত্রে ইতিবাচক ভূমিকা রাখছে। তাছাড়া জট নেই এমন বন্দরে কিছুটা কম ভাড়া হলেও জাহাজ আসার ব্যাপারে আগ্রহী থাকে। এটাও ব্যবসা–বাণিজ্যের জন্য শুভ লক্ষণ।