বিদ্যালয় ভবনটি পরিত্যক্ত হওয়ার পর থেকে প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের চার বছর ধরে একটি অস্থায়ী টিনশেড ঘরে পাঠদান করানো হতো। সামান্য বৃষ্টি হলেও ব্যাঘাত ঘটতো পাঠদানে। কিন্তু সম্প্রতি হালকা বাতাসে ভেঙে গেছে জরাজীর্ণ ঘরটিও। স্কুল এখন বন্ধ থাকলেও খুলতে পারে যেকোনো সময়। তখন ক্লাস কোথায় হবে তা নিয়ে বেকায়দায় রয়েছেন স্কুলের শিক্ষকেরা। স্বয়ং স্কুলটির প্রধান শিক্ষকও জানেন না বন্ধের পর বিদ্যালয় খোলার দিন ছোট ছোট কোমলমতি শিক্ষার্থীদের নিয়ে ক্লাস কোথায় করাবেন।
সীতাকুণ্ড উপজেলার বাঁশবাড়িয়া ইউনিয়নের এক নম্বর ওয়ার্ডে অবস্থিত এই বিদ্যালয়ের নাম উত্তর বাঁশবাড়িয়া রহমতের পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। চার বছর আগে এ বিদ্যালয়ের নতুন ভবনের পাইলিং করা হলেও ভবন নির্মাণের কাজ শুরু করতে পারেনি সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান। এতে ভবন সংকটে দিন দিন স্কুলটির শিক্ষার্থী সংখ্যা কমে যাচ্ছে। তিন বছর আগেও বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী সংখ্যা ৩৫৪ জন থাকলেও বর্তমানে আছে মাত্র ১৪২ জন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, উপজেলার উত্তর বাঁশবাড়িয়া রহমতের পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জরাজীর্ণ ভবনে ঝুঁকি নিয়ে চলছিলো বিভিন্ন শ্রেণির পাঠদান কার্যক্রম। শ্রেণিকক্ষ সংকটে পাঠদান ব্যাহত হওয়ায় এলজিআরডির অধীনে বিদ্যালয়ে ছয়তলা ফাউন্ডেশনের পাঁচ কক্ষ বিশিষ্ট একটি তিনতলা ভবন নির্মাণের বরাদ্দ দেয় এমডিএসপি। এক বছরের মধ্যে বিদ্যালয়ে ভবনের নির্মাণ কাজ শেষ করার কথা থাকলেও তা গত চার বছর অতিবাহিত হলেও বিদ্যালয়ের একাডেমিক ভবনের নির্মাণ কাজ শেষ করেনি সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। এ অবস্থায় অস্থায়ী জরাজীর্ণ টিনশেড ঘরে চরম ঝুঁকি নিয়ে লেখাপড়া করছিলো শিশুরা।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক (ভারপ্রাপ্ত) আব্দুল আলীম জানান, ২০২১ সালে বিদ্যালয়টির নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু দৃশ্যমান কিছুই হয়নি এখনও। অস্থায়ী টিনের চালা ঘরে আসার পর শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমতে থাকে। তিন বছর আগে ৩৫৪ জন শিক্ষার্থী ছিল। বিদ্যালয়ের পরিবেশ অত্যন্ত খারাপ হওয়ায় তাদের অভিভাবকরা শিশুদের বিভিন্ন স্কুল–মাদ্রাসা ও কিন্ডারগার্টেনে নিয়ে ভর্তি করান। যা বর্তমানে কমে দাঁড়িয়েছে ১৪২ জনে। সবচেয়ে বেশি সমস্যা হতো বর্ষাকালে। কেননা বর্ষা মৌসুমে উপর থেকে পানি পড়ায় শিক্ষার্থীরা বসতে পারতো না। ক্লাসরুমে পানি জমে যায়। বজ্রপাত হলে শিশুরা কান্নাকাটি করে। তখন শিক্ষকরা সবাই তাদের নিয়ে বসে থাকতে হয়। সেই জরাজীর্ণ টিনশেডটি সম্প্রতি সময়ে হালকা বাতাসে ভেঙে পড়েছে। এখন কোথায় ছেলেরা ক্লাস করবে তা কমিটি সিদ্ধান্ত নেবে।
উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা (সদ্য বিদায়ী) মোহাম্মদ নুরুচ্ছফা জানান, পরিত্যক্ত অপর একটি টিনশেড মেরামত করে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করার জন্য স্কুল কর্তৃপক্ষকে বলা হয়েছে। গত চার বছর ধরে অনেক তাগাদা দেওয়া হয়েছিলো ঠিকাদারদের। কিন্তু তাদের অবহেলার শেষ নাই। অনেক বিদ্যালয়ে ভবন নির্মাণের কাজও শুরু করেনি ঠিকাদাররা।
বিদ্যালয়ের ভবন নির্মাণকারী ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ওয়াহিদ কনস্ট্রাকশনের দায়িত্বরত ইঞ্জিনিয়ার মো. আইয়ুব বলেন, নানা কারণে ভবন নির্মাণ কাজ বন্ধ ছিল। ফলে নির্ধারিত সময়ে কাজ সম্পন্ন করা সম্ভব হয়নি। বর্তমানে সীতাকুণ্ডে চারটি বিদ্যালয়ের ভবনের কাজ শুরু হয়েছে। পাইলিং শেষে প্রথম তলার পিলারের কাজ চলছে। তবে ভবন নির্মাণ কাজ কখন শেষ হবে তাও নিশ্চিত করে বলতে পারেননি তিনি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কে এম রফিকুল ইসলাম বলেন, ইতিমধ্যে বিদ্যালয় পরিদর্শন করেছি। বিদ্যালয়ের বর্তমান অবকাঠামো অবস্থা ও শিক্ষার্থী ঝরে পড়াসহ নানা বিষয় নিয়ে শিক্ষা অধিদপ্তর ও এলজিইডি মন্ত্রণালয়ে লিখিতভাবে চিঠি প্রেরণ করা হয়েছে। যাতে দ্রুত সময়ে কাজ শুরু করা হয়।
চট্টগ্রাম জেলা নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ হাসান আলী বলেন, ঠিকাদারদের ভবন নির্মাণের কাজ শুরু করে দ্রুত সময়ে শেষ করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।












